জিম্বাবুয়ের 'দুর্লভ' জয়ের সাক্ষী থাকলো সিলেট ও বাংলাদেশ
সিলেট টেস্ট
বাংলাদেশ ১৪৩ এবং ১৬৯ (ইমরুল ৪৩, আরিফুল ৩৮; মাভুতা ৪/২১ রাজা ৩/৪১)
জিম্বাবুয়ে ২৮২ এবং ১৮১
জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী
টেস্টের কথা ভুলে যান, যে কোনও ধরনের ক্রিকেটেই তো ধুঁকছিল জিম্বাবুয়ে। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পেরুনো হয়নি তাদের, টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার নিতে এসে কান্না আটকাতে পারেননি সিকান্দার রাজা। রাজা এরপর বাদ পড়েছিলেন বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে, দক্ষিণ আফ্রিকায় জিম্বাবুয়ে যখন দুমড়ে মুচড়ে গেছে, রাজা ছিলেন না। বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ জিম্বাবুয়ে, রাজা সাক্ষী থাকলেন। সেই রাজা সিলেটে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিলেন রেজিস চাকাভার সঙ্গে, ম্যাচ জয়ের স্মারক স্টাম্প নিয়ে। হাসছেন দুজনই। হাসছে পুরো জিম্বাবুয়ে দল, তাদের ডাগ-আউট, তাদের ড্রেসিংরুম। হাসছে হয়তো হারারে, বুলাওয়েও। ২০১৩ সালের পর এই প্রথমবার টেস্ট জিতলো জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তানের বিপক্ষে সেবার এই দলের ছিলেন তিনজন- ব্রেন্ডন টেইলর, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, রেজিস চাকাভা। ১৭ বছর পর জিম্বাবুয়ে জিতল দেশের বাইরে। সিলেট ঢুকে গেল জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে, আর বাংলাদেশ থাকলো সেটার সাক্ষী হয়ে।
আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, রেকর্ড-টেকর্ডের কথাও ভুলে যান। ভুলে যান প্রত্যাবর্তনের গল্পের প্লট, দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের আশা। চতুর্থ দিন লাঞ্চের আগেই নিশ্চিত হয়েছে মোটামুটি, জিম্বাবুয়ের জয়টা সময়ের অপেক্ষা। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা উপলক্ষ্য খুঁজছিলেন লড়াই থেকে দূরে সরে যাওয়ার, আর জিম্বাবুয়ে অপেক্ষায় ছিল তাদের উদযাপনের উপলক্ষ্য জয়ের অপেক্ষায়। আরিফুল হক যখন বড় শট খেলা শুরু করেছেন, সেটাও জিম্বাবুয়ের জন্য ছিল ক্ষণিকের বিলম্ব। আর সিলেট দর্শকের জন্য সেটা ক্ষণিকের বিনোদন। সবাই ততক্ষণে জানেন, জিম্বাবুয়ের ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন তারা!
দিনের শুরু থেকে হয়তো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরাও ভেবেছিলেন এমনই। অথচ চতুর্থ দিনের উইকেটেও এমন কোনো জুজু ছিল না। কিছু বল হুট করে লাফিয়ে উঠেছে বটে, কিছু বল টার্নও করেছে। কিন্তু কোনোটিই আউট হওয়ার মতো আহামরি ছিল না। সকালে প্রথম ঘণ্টাখানেক বাংলাদেশ কোনো উইকেট ছাড়াই পার করে দিয়েছিল। এর মধ্যে ২১ রানে একবার শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন লিটন, আর ২২ রানে ইমরুল কায়েসের শট দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্লিপে মাসাকাদজা ও টেলরের মাঝ দিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু সুযোগটা তারা পারলেন কই কাজে লাগাতে?
সিকান্দার রাজার বলটা অতটা খাটো লেংথের ছিল না, লেংথ মিস করে পুল করতে গেলেন লিটন, হলেন এলবিডব্লিউ, জিম্বাবুয়ে সে উইকেট পেলো রিভিউয়ে। মুমিনুল হক আগের ইনিংস থেকে বেরুতে পারেননি, কাইল জার্ভিসের বাড়তি বাউন্স নেওয়া বলটা ঠিক লাইনে গিয়ে খেলতে পারলেন না, বল ব্যাটের কানায় লেগে ভেঙে দিল স্টাম্প। প্রথম বলে চার মেরে শুরু করেছিলেন মুমিনুল, সেটা মনে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই এরপর।
ইমরুল কায়েস প্যাডল সুইপ করতে গেলেন, বল তাঁর গ্লাভসে লেগে ভেঙে দিল স্টাম্প। এরপর মাহমুদউল্লাহ। তিনি যেভাবে জায়গা পেয়েছেন, টেস্ট দলে তাঁর জায়গা নিয়েই উঠে যাবে প্রশ্ন। রাজার অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা কাট করতে গিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন একটুর জন্য। পরের বলটাই সুইপ করতে গিয়ে মিসটাইম করে ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট লেগে। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত। দিনের সবচেয়ে বাজে শটে দিয়ে এলেন উইকেট, মাভুতাকে অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে এলেন কাভারে।
ছিলেন শুধু মুশফিক। তিনিই বা ভুলের মিছিল থেকে বাদ যান কেন! ব্র্যান্ডন মাভুতকে সুইপ করতে গিয়ে মিস করেছিলেন, এরপর আবার সেটাই করতে গেলেন জোরের ওপর। সুইপ, মুশফিক, আউট- এই ত্রয়ী এখন বাংলাদেশেরই গলার কাঁটা যেন!
মাভুতা ততক্ষণে যেন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। মিরাজকে আউটসাইড-এজড হতে বাধ্য করলেন দারুণ লেগস্পিনে। এরপর তাইজুল, নাজমুল- তুলে মারতে গিয়ে দিলেন ক্যাচ। আর সবার শেষে আরিফুল।
তাইজুল, নাজমুল, আরিফুলের সেসব শটে আদতে কিছু যায় আসে না। সিলেটে যা হওয়ার, সেটা হয়ে গেছে তারও অনেক আগেই!