• বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
  • " />

     

    'এরকম চললে টেস্ট ক্রিকেট খেলার মানে নেই'

    'এরকম চললে টেস্ট ক্রিকেট খেলার মানে নেই'    


    সাড়ে তিন দিনে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে দল, বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে এমন অন্ধকার দিন কমই এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাই আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হলো। 

     

    জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা কী?

    এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেয়া আসলে খুবই কঠিন। একটা জিনিস বলতে পারি, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যেই ধরনের ডিসিপ্লিন থাকা উচিত, আমার মনে হয় না আমরা সেই ডিসিপ্লিন দেখাতে পেরেছি। কারণ উইকেট বেশ ভাল ছিল, এমনকি আজকেও উইকেট ভাল ছিল। হয়তো আজকেও দুই একটি বল টার্ন করেছে। এছাড়া আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা আরেকটু বাড়াতে হবে। এই ইস্যুগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ বেশ কয়েকটি টেস্ট আমাদের ব্যাটিং খুব বাজে হচ্ছে।

                                                   

    চতুর্থ দিন শুরুর আগে বাংলাদেশের পরিকল্পনা আসলে কী ছিল? বা থাকলেও সেটা কতটা কাজে এসেছে?

    পরিকল্পনা তো সফল হয়নি। কারণ গতকাল আমাদের টার্গেট যখন সেট হয়, তখন আমরা মাঠে আলোচনা করেছিলাম আমরা পজিটিভ থাকব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। কারণ উইকেট ভালোই ছিল। কোন রকম অজুহাত দেয়া উচিত হবে না এবং দেয়া ঠিকও না। আমরাই বাজে ব্যাটিং করেছি। আমরা মোটেও ডিসিপ্লিনড ছিলাম না। সেজন্যই আমাদের এই ব্যাটিং ব্যর্থতা। তবে আমরা বিশ্বাস করি আমরা নিজেরা যদি চিন্তা করি, দল হিসেবে আমরা অবশ্যই ভাল ভাবে ফিরতে পারব। এই বিশ্বাসটা আমাদের সবার মধ্যেই আছে। 

     

    বাংলাদেশ তো ভালো কোনো বলে উইকেট দিয়ে আসেনি, সেটার ব্যাখ্যা কী?

    আমরা অনেকগুলো বাজে শট খেলেছি, খুব বাজেভাবে আউট হয়েছি। আউটগুলো হয়তো দৃষ্টিকটু।  টেস্ট ক্রিকেটে শৃঙ্খলা, মনযোগ ধরে রাখার ইস্যু আছে। আমাদের প্রতিটা মানুষের সাথে কথা বলতে হবে, তাঁরা কী চিন্তা করছিল এসব ভাবতে হবে। যদি ব্যক্তিগতভাবে বলি, আমি আজ বেশ পজেটিভ ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি হয়তো বা ভাল খেলে বড় জুটি গড়লে তাদের টার্গেটের কাছাকাছি যেতে পারব, আমরা ওই বড় পার্টনারশিপই করতে পারি নি। আপনি বড় জুটি না গড়তে পারলে ম্যাচ জিতবেন না। 

     

    বিশ্বকাপ ভাবনায় টেস্ট ক্রিকেট কি মূল্য হারাচ্ছে?

    উই ডু কেয়ার অ্যাবাউট টেস্ট ক্রিকেট। আমরা হয়তো পাঁচ ছয়টা (আট ইনিংস) ইনিংসে হয়তো রান করতে পারি নি। বোলাররা যথেষ্ট ভাল বোলিং করেছে। প্রতিপক্ষকে অল্প রানে আটকে ফেলছে। ব্যাটসম্যানরা ভাল করছে না। ওয়ানডে ফরম্যাটে ভাল ছন্দে আছে। কিন্তু ওই ডিসিপ্লিনটা হয়তো আমরা টেস্ট ক্রিকেটে নিতে পারছি না। অবশ্যই এটা চিন্তার বিষয়। আমাদের এটা খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। কারণ এভাবে ব্যাট করতে থাকলে মনে হয় না আমরা টেস্ট ক্রিকেটে কোনো অবস্থানে থাকব। এটা আমাদের ভাবমূর্তির ইস্যু। আমাদের অবশ্যই শক্তভাবে ফাইট ব্যাক করতে হবে। নইলে টেস্ট ক্রিকেট খেলার কোনো মানে হয় না। 

     

    সর্বশেষ ৮ ইনিংসে মাত্র ২০০ পার করতে পারল না। এর মধ্যে কোন ব্যাপারটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি হতাশার? 

    আমার মনে হয় আমাদের স্ট্রোক খেলার প্রবণতা বেশি হয়ে গেছে। এই জিনিসটা আমরা হয়তো বেশি আবেগ থেকে করে ফেলছি। এই জিনিসটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আরেকটু সতর্ক হতে হবে। আমরা কোন বোলারকে কখন কিভাবে খেলতে পারি এটা দেখতে হবে। সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, আমরা যেই ছোট ছোট জুটিও করতে পারছি না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই ব্যর্থ। এই জিনিসটা আমরা ঠিক করতে পারলে ঢাকা টেস্টে ভিন্ন বাংলাদেশ দেখতে পাবেন। 

     

    শুরুতে উইকেট পড়তে পারেনি, এরপর তো একের পর এক ভুল চলছেই...

    আমি শুধু ব্যাটিংটা নিয়ে বলতে পারি। আপনি উইকেটের দোষ দিতে পারবেন না। বোলারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগও করতে পারবেন না। কারণ তাঁরা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছে। তাইজুলের কথা বলি, সে অনেক ভালো বল করেছে। মিরাজ, রাহী ভাল বল করেছে। দিন শেষে এটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব আমরা কেমন রান করেছি। ব্যাটসম্যানরা যদি ভাল রান না দিতে পারে, তাহলে লাভ নেই কোনো। এই ইস্যু গুলো এক সাথে কথা বলে আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে, বের করতে হবে কী উপায় আছে। কারণ এভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতার দায়ভার আমরাও নিতে চাই না। আমাদের সবার নিজস্ব একটা ভাবমূর্তি আছে। একই সাথে এটা বাংলাদেশ দলের ব্যাপার। আমরা বাংলাদেশ দলের জন্য খেলছি, অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কিছু ফেরত দিতে হবে। 

     

    একাদশ নির্বাচনেই তো দল নেতিবাচকতার পরিচয় দিয়েছে...

    প্রথমত সেরা একাদশ নিয়ে যেটা বলি, ওটা একবারে ঠিক ছিল। কারণ পিচ শুষ্ক ছিল। এর কারণে এখানে তিনটা স্পিনার খেলানো আমার কাছে এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে মনে হয়েছে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত। 

    এর ইমেজের কথা যেটা বললেন এভাবে যদি পারফর্ম করতে থাকি তাহলে তো অবশ্যই এটা একটা বড় ইস্যু হবেই। প্লেয়ারদের পক্ষ থেকে এটুকুই বলতে পারি আমরা কোন কিছু সহজে নিব না, আমরা এখান থেকে শক্তভাবে ফিরে আসতে পারি। আমার মনে হয় একটা ইনিংসই যথেষ্ট। পরের টেস্টে ভিন্ন বাংলাদেশকে দেখবেন ইনশাল্লাহ।

     

     

    শট নির্বাচনে কোন জায়গায় ভুল ছিল?

    শট না খেললে তো রান করতে পারবেন না। রান না করলে কীভাবে ম্যাচ জিতবেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ জেতার। আমাদের দলের মধ্যেও যা কথা হয়েছে আমাদের বিশ্বাস ছিল। আমি বিশ্বাস করি টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে ইতিহাস তৈরি করা যায়। তার মানে এই না যে আমরা দমে যাব। আমরা অবশ্যই ফিরে আসব। আর শট যদি প্রয়োগ করতে না পারেন এটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয় যে কেন আমি পারিনি।

    আমি মনে করি পরের বার আমিও চিন্তা করব কেন এটা হলো। কারণ তখন লাঞ্চের আগে ছিল। আমার মনে হয় আমার বড় একটা ভুল ছিল। তারা একটা প্লান বদলেছে আমি সেই ফাঁদে পড়েছি।

     

    অধিনায়কত্ব কি আপনার ব্যাটিংয়ের ওপর প্রভাব ফেলেছে?

    না ওইরকম কোন ইস্যু না। এটা পুরোপুরি আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতার কারণে হয়েছে।

     

    সাকিব-তামিমের অভাব কতটা টের পেয়েছেন?

    সাকিব, তামিম দলে সেরা দুজন পারফর্মার। কে না চাইবে তাদের খেলা? কিন্তু ইনজুরির ওপর তো কারো হাতে নেই। তারপরও যে দলটা আছে জিম্বাবুয়েকে হারানো সামর্থ্য ছিল। আমাদের জিম্বাবুয়েকেও কৃতিত্ব দিতে হবে, তারা ভাল ক্রিকেট খেলেছে।

     

    ব্যাটিং অর্ডারে বদলটা কেন হলো আজ?

    অবশ্যই ভাল একটা পয়েন্ট বলেছেন। এটা টিম ম্যানেজমেন্ট এবং মুশফিকের সঙ্গেও কথা বলতে হবে যে ও ব্যক্তিগতভাবে কি চাচ্ছে। মুশফিককে ছয়ে খেলানো কারণ ওই ব্যাটিং ডেপথ যেন থাকে। আর মুশফিকের পাঁচ, ছয় নম্বরে বড় ইনিংস আছে।

    আজকের কথা যদি বলেন, আমি চেয়েছি চারে আসতে। এটা আমার হুট করে নেওয়া সিদ্ধন্ত। কারণ ওইসময় যদি দুইটা লেফটি ব্যাটিং করে...কারণ সিকান্দার রাজা বল করছিল।

     

    কিন্তু আজ এরকম পরিস্থিতিতে মুশফিকের কি চারে নিয়ে আসা উচিত ছিল না?

    করতে পারত । করতে পারত না এটা তো এমন না। কারণ সিদ্ধান্তটা এমন ছিল আমার মনে হয় ছয় নম্বরে ও বেশ স্বচ্ছন্দ। পাঁচ ছয়ে ওর বড় ইনিংস আছে। এই কারণে ও ছয়ে... নেক্সট ম্যাচে হয়তবা ব্যাটিং অর্ডার বদল হতেও পারে।

     

    বাংলাদেশ যখন ধুঁকছে, তখন আয়ারল্যান্ড-আফগানিস্তান তো টেস্ট শুরু করেছে। এমন চললে বিদেশের মাটুতে বাংলাদেশের টেস্ট কমে যেতে পারে। সেটা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

    আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমি কেবল পারফরম্যান্স নিয়েই চিন্তা করছি। টেস্ট ম্যাচ কমবে না বাড়বে এসব নিয়ে আমার কোনরকম মাথাব্যাথা নেই। যদি আমি ভাল করি টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা বাড়বে। যদি খারাপ করতে থাকি, এরকম বাজে পারফর্ম করতে থাকি তাহলে টেস্ট ম্যাচ সংখ্যা অবশ্যই কমে যাবে। এটা আইসিসি, ক্রিকেট বোর্ডের বিষয়।