ধাঁধাঁর নাম ব্যাটিং অর্ডার
সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং কেন অমন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল, সেটা এখনো আশ্চর্য একটা ধাঁধা। উইকেটে এমন কোনো জুজু নেই, এমনকি চতুর্থ দিনেও বল খুব একটা টার্ন নেয়নি- এমন উইকেটেও ব্যাটিং করা যেন ভুলেই গেল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের কাছে অমন হারে নিজেদের সামর্থ্যে এমন প্রশ্নবোধক চিহ্নও উঠেছে। আর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরিকল্পনার অভাব কাল থেকে শুরু মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং কৌশল নিয়ে নতুন করে সংশয় জাগাচ্ছে।
সিলেট টেস্টের পরেই বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ভাবনার জায়গাটা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে যখন ৩০০ ছাড়ানো লক্ষ্য, দলের সেরা ব্যাটসম্যানের সেখানে চারে নামাটাই উচিত। কিন্তু মুশফিক শেষ পর্যন্ত নামলেন ছয়ে, সঙ্গী হিসেবে পেলেন আরিফুলকে। নিজে অবশ্য বাজে শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছেন, কিন্তু সেজন্য পরের নামার অজুহাতটা যুক্তিযুক্ত হয়ে যায় না। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য বলেছিলেন, মুশফিককে খানিকটা বিশ্রাম দিতে নিজে এগিয়ে এসেছেন। মুশফিক তাই নেমে গেছেন ছয়ে। সেদিন অবশ্য বলেছিলেন, মুশফিকের সঙ্গে কথা বলে পরের টেস্টে খানিকটা পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। আজও সংবাদ সম্মেলনে সেই আভাসই দিলেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে এই টেস্টেও কিপিং গ্লাভস উঠছে মুশফিকের কাছেই। লিটন দাস এখন পর্যন্ত ওপেনিংয়েই নামার কথা, সেক্ষেত্রে তাঁর কিপিং করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শুরুতে ইমরুলের পর তিনে নামার কথা মুমিনুল হকের। তবে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, নাজমুল হোসেন শান্তর ওপরেই শুধু ব্যাটিং ব্যর্থতার খড়গটা নেমে আসবে। মোহাম্মদ মিঠুনের সেক্ষেত্রে টেস্ট ক্যাপ পাওয়া মোটামুটি নিশ্চিতই।
ওয়ানডেতে সর্বশেষ ম্যাচে পাঁচে ব্যাট করেছেন মিঠুন। এই মৌসুমে জাতীয় লিগের যে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছেন, তাতেও ব্যাট করেছেন পাঁচে। এই বছর প্রথম শ্রেণিতে বিসিএলে আর মাত্র দুইটি ম্যাচ খেলেছেন মিঠুন, তাতেও ব্যাট করেছেন সেই পাঁচেই। তবে কাল অভিষেক হলে তাঁকে নেমে যেতে হতে পারে ছয়ে। বা উঠে আসতে পারেন চারেও। মুশফিককে যে কাল থেকে শুরু মিরপুর টেস্টে পাঁচে নিয়ে আসা হতে পারে, সেই আভাস আজ মাহমুদউল্লাহই দিলেন, ‘দেখুন সে (মুশফিক)যেহেতু উইকেটকিপিং করছে আমার কাছে মনে হয় যে তাঁর জন্য পাঁচেই সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং পজিশন হবে। কারণ আপনি যদি প্রায় ৮০-৯০ ওভার কিপিং করেন এবং আবার ব্যাটিং করেন তাহলে সেটি কঠিন। তাই আমার কাছে মনে হয় তাঁকে একটু সময় দেয়াটা ভাল হবে বলে। আর টিম ম্যানেজমেন্টও এই বিষয়টি সেভাবে চিন্তা করছে যে হয়তোবা ওকে যদি একটু সময় দেয়া হয় তাহলে সে আরেকটু রিফ্রেশ হবে এবং এটি তাঁর ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল হবে। আর ওর ব্যাটিংটা আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ’
সমস্যা হচ্ছে, মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক কারোরই ব্যাটিং পজিশন থিতু নয় এখনো। সর্বশেষ চার টেস্টে মাহমুদউল্লাহ চার থেকে সাত সব পজিশনেই ব্যাট করেছেন। অনেক দিন ধরেই টেস্টে হাসছে না তাঁর ব্যাট, নিজের আদর্শ ব্যাটিং পজিশন খুঁজে না পাওয়া তার একটা বড় কারণ কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। মুশফিক অবশ্য সিলেটের আগের পাঁচ টেস্টে ব্যাট করেছিলেন চারে। তবে তখন কিপিংটা করেননি, আর কিপিং করলে যে তাঁর ব্যাটিং গড় বেড়ে যায় সেটা তো তাঁর পরিসংখ্যানই বলছে। সেক্ষেত্রে আপাতত তাঁকে পাঁচেই নামতে হচ্ছে। আর অভিষিক্ত মিঠুনকে চারে নামিয়ে দেওয়ার ঝুঁকিটা মাহমুদউল্লাহ নেবেন বলে মনে হয় না। তাহলে মাহমুদউল্লাহ চারে আর মিঠুন ছয়ে; সমীকরণ এমনই। মুমিনুল তিনেই নামছেন, কিন্তু তিনে যখন তাঁর ব্যাটিং গড় ৩৪.৮ ; চারে নামলে সেটা হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই। তবে আপাতত মুমিনুলের তিনে নামা ছাড়া বিকল্পও নেই তেমন।
আরও অনেক কিছুর আগে ব্যাটিং অর্ডারটাই বোধ হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় একটা প্রহেলিকা!