• বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
  • " />

     

    দুঃস্বপ্নে শুরুর গল্পটা বদলে দিল মুমিনুল-মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরি

    দুঃস্বপ্নে শুরুর গল্পটা বদলে দিল মুমিনুল-মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরি    

    মিরপুর টেস্ট
    প্রথম দিনশেষে
    বাংলাদেশ ১ম ইনিংস* ৩০৩/৫(মুমিনুল ১৬১, মুশফিক ১১১*, জারভিস ৩/৪৮) 


    দুই ডাক, একজন শুন্যে অপরাজিত। একজন ৯। নাইটওয়াচম্যানও ফিরেছেন ১০ বল খেলেই। তবে সেটা গল্পের একটা অংশ বলবে শুধু। যে অংশে সিলেটের সঙ্গে মিরপুরের পার্থক্য নেই, যেখানে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছে খুব সহজেই। তবে অন্য গল্পটা বদলে দিচ্ছে পুরো চিত্রটাই। যেখানে আছে মুমিনুল হকের ১৬১ রানের ইনিংস, মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ১১১ রানের ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ২৬৬ রানের রেকর্ড জুটি। ২৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও প্রথম দিনে মিরপুরের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশেরই, তার মূল ও একমাত্র অবদান মুমিনুল-মুশফিকের ওই জুটিরই। 

    প্রথম সকালেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। মুমিনুল-মুশফিকের জুটির গ্রাফটাই তুলে ধরতে পারে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্রটা- প্রথম ৫০ রান তুলতে এ জুটি খেলেছে ১২০ বল, তখনও উইকেটের ধস সামাল দিতে ব্যস্ত ছিলেন তারা। চা-বিরতির আগে এ জুটির পরের ১৩১ রান এসেছে মাত্র ১৬২ বলে। দ্বিতীয় সেশনে রান-রেটটাও তায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশের। ততক্ষণে আধিপত্য বিস্তার শুরু করেছেন মুশফিক-মুমিনুল। চা-বিরতির পর বেশ আঁটসাঁট বোলিং করেছে জিম্বাবুয়ে, দ্বিতীয় নতুন বলে তারা পেয়েছেন দুইটি সাফল্যও। তবে তার আগেই চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি হয়ে গেছে মুমিনুল-মুশফিকের, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে কোনও উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ডও হয়েছে নতুন করে। 

     

    শুরুতে হেসেছে শুধু জিম্বাবুয়েই/বিসিবি

     

    মুমিনুলের ইনিংসে ভাগ্যের সহায়তা ছিল না, সেটা নয়। তবে এমন ইনিংস খেলতে তো ভাগ্যের প্রয়োজন! সেটা ভালভাবেই পেয়েছেন তিনি, বেঁচেছেন অন্তত তিনবার। এর মাঝে দুইবার তার ক্যাচ নিতে পারেননি উইকেটকিপার রেজিস চাকাভা, একবার পয়েন্টে কঠিন সুযোগে শেষ পর্যন্ত সফল হননি ব্রায়ান চারি। এর মাঝে মুমিনুল তার কাজটা করেছেন দারুণভাবে। স্ট্রোক-ভরপুর ইনিংস খেলেছেন। শর্ট, ওয়াইড, ফুল- তার দিকে জিম্বাবুইয়ানরা যেটাই ছুঁড়েছেন, সেগুলো তিনি কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। কাভার আর মিড-উইকেটে ছিলেন দুর্দান্ত, ড্রাইভের সঙ্গে ফ্লিকও করেছেন অসাধারণ। চার মেরে ফিফটি করেছেন, ক্যারিয়ারের ৭ম সেঞ্চুরিটাও তাই। চা-বিরতির পরের সময়টাতেও অটল ছিলেন, ড্যাডি সেঞ্চুরির পর ডাবল সেঞ্চুরিটাও নাগালেই ছিল বলে মনে হচ্ছিল। চাতারাকে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্ট ক্যাচ দিয়ে অবশ্য সেটা হয়নি। 

    মুমিনুলের ব্যাটিংয়ের দারুণ পরিপূরক ছিলেন মুশফিক। শুরুর দিকে বল নতুনই ছিল, জারভিসরা সিম মুভমেন্টও পাচ্ছিলেন। মুশফিক বল ছেড়েছেন দেখেশুনে, জোরের ওপর খেলতে যাননি। মুমিনুলের ১৯টি বাউন্ডারির বিপরীতে তিনি মেরেছেন ৯টি, তবে এ জুটিকে আগলে রাখার মূল দায়িত্বটাও পালন করেছেন তিনি। সুযোগও দেননি সেভাবে। সিঙ্গেল নিয়ে ১৮৭ বলে ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন, এরপর উদযাপনেও ছিলেন বুনো। সেটা হতেই পারে, মিরপুরে যে মুশফিকের এটি প্রথম সেঞ্চুরি! 

     

    এ জুটিতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ/বিসিবি

     

    দুজনের উদযাপন, দুজনের ক্রমাগত রান করে যাওয়া বাংলাদেশকে ভুলিয়ে দিয়েছিল দুঃস্বপ্নের সকাল, যেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেখানে নেমেছিলেন আত্মহত্যার মিছিলে। গুরুত্বপূর্ণ টসে জিতেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, তবে ইমরুল-লিটন-মিঠুন কপালে বড় ভাঁজই ফেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহর। 

    শুন্য রানে রিভিউ থেকে বাঁচা লিটন জারভিসকে পায়ের ওপর থেকে ফ্লিক করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন মিড-উইকেটে। ফিল্ডারকে নড়তে হয়নি, লিটনের টেস্ট দলে জায়গাটাই উলটো বোধহয় নড়বড়ে হয়ে গেল আরেকবার। এর আগে ইমরুলের ১৬ বলের কষ্টকর এক যাত্রা শেষ হয়েছে দিনে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার জারভিসের ভেতরের দিকে ঢোকা দারুণ এক বলে। ইমরুল স্বস্তিতে ছিলেন না, উইকেটের পেছনে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে চাকাভা তাকে মুক্তি দিয়েছেন। 

    অবশ্য এই দুজনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। খালেদ আহমেদের সঙ্গে তারও অভিষেক হয়েছে তার, গড়েছেন রেকর্ডও। তবে চাতারার অফস্টাম্পের অনেক বাইরের ফুললেংথের বলে তাড়া করতে গিয়ে যেভাবে এজড হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন, তাতে মিঠুনের শুধু তিক্ত অভিজ্ঞতাই মিলবে। মিরপুরের উইকেটে সকালের ময়েশ্চার আর নতুন বলে পুরো ফায়দা ততক্ষণে তুলেছেন জিম্বাবুইয়ান পেসাররা, আর আরেকবার গহীন অরণ্যের হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম বাংলাদেশ। 

    এরপরই এলেন মুমিনুল। তারপর মুশফিক। গল্পটা বদলে গেল এরপর।