টেইলরের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে তাইজুলের টানা তিন 'পাঁচ'
মিরপুর টেস্ট
তৃতীয় দিন, স্টাম্পস
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫২২/৭ ডিক্লে. (মুশফিক ২১৯*, মুমিনুল ১৬১, মিরাজ ৬৮*, জারভিস ৫/৭১)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ৩০৪ (টেইলর ১১০, মুর ৮৩, তাইজুল ৫/১০৭)
বাংলাদেশ ২০৮ রানে এগিয়ে
পয়েন্টে তাইজুল সুযোগটা নিতে পারলেন না, ব্রায়ান চারি বাঁচলেন আরেকবার, খালেদ আহমেদ প্রথম টেস্ট উইকেট থেকে বঞ্চিত হলেন আরেকবার। সেই তাইজুল মিডউইকেটে হয়ে উঠলেন সুপারম্যান, মিরাজের বলে ব্রেন্ডন টেইলরের স্লগটা ডানদিকে ঝাঁপিয়ে নিলেন দুর্দান্তভাবে। তাইজুলকে ম্যাচের বাইরে রাখাই যাবে না যেন! জিম্বাবুয়ে যা লড়াই করলো, তাতে অনেক বড় অবদান টেইলরের সেঞ্চুরির, পিটার মুরের সঙ্গে তার ১৩৯ রানের জুটির। তবে টেইলরের সেই ক্যাচ নিয়ে তাইজুল আদতে ছাপিয়ে গেলেন তাকে। টানা তৃতীয় ইনিংসে তাইজুলের পাঁচ উইকেটে ১ম ইনিংসে ২১৮ রানের লিড নিয়েছে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের লড়াইটা ছিল ফলো-অন এড়ানোর, টেইলর ও মুর সেই স্বপ্নও দেখাচ্ছিলেন তাদের। চা-বিরতির আগে থেকে দুজনের জুটিটা জমছিল। মুরের কঠিন ক্যাচ এরপর কাভারে ফেললেন বদলি ফিল্ডার নাজমুল, ৯৪ রানে মুশফিকের হাত গলে বেরিয়ে গেলেন টেইলর। ব্রেকথ্রুটা বাংলাদেশকে এনে দিলেন ‘পার্টটাইমার’ আরিফুল হক। ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ মুর, রিভিউ নিয়েও বাঁচলেন না। এরপর ফিরলেন টেইলর, মিরাজের বলে তাইজুলের ওই অসাধারণ ক্যাচে। এক বল বাদে ব্র্যান্ডন মাভুতা স্লিপে আরিফুলের দারুণ ক্যাচের শিকার। টেনডাই চাতারা ব্যাটিং করতে পারবেন না বলে কার্যত চাকাভা-জারভিসের উইকেটই ছিল শেষ জুটি।
জারভিস মিরাজের এক ওভারেই ক্লোজ-ইনে বাঁচলেন দুইবার, চাকাভার বিপক্ষে রিভিউটাও আম্পায়ারস কলে আটকে গেল তাইজুলের বলে। তবে শেষ ওভারে গিয়ে ওই তাইজুলের বলেই শর্ট লেগে ব্যাট-প্যাডে আউট হলেন চাকাভা। এনামুল হক জুনিয়র ও সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টানা তিন ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন তাইজুল।
আগেরদিনের কঠিন লড়াইটা আজ সকালে চালিয়ে গিয়েছিলেন চারি। খালেদের সঙ্গে বাউন্সারে খন্ডযুদ্ধও হয়ে গেছে তারা। হেলমেট বদলাতে হয়েছে, সুযোগ দিয়ে বেঁচে গেছেন। তাইজুলকে ছয়ের পর এক ওভারে তিন চারে ফিফটিতে পৌঁছেছেন, শেষ পর্যন্ত মিরাজের বলে শর্ট লেগে মুমিনুলের হাতে ধরা পড়েছেন ৫৩ রানে। তার আগেই নাইটওয়াচম্যান ডোনাল্ড টিরিপানো বনেছেন তাইজুলের প্রথম শিকার, স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ পেয়েছে এই দুই উইকেটই।
লাঞ্চের পর মিডল অর্ডারে শেন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজাকে ২ রানের ব্যবধানে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে ১৩১ রানে ৫ উইকেটে পরিণত করেছিলেন তাইজুল। দুজনকেই বোল্ড করেছেন তিনি, দুজনের ক্ষেত্রেই বল ধরে রেখেছে লাইন, তাদের ডিফেন্স চিড়েছে। মুরকে সঙ্গে নিয়ে টেইলরের ফিরতি লড়াই এরপরই।
সিলেটের চেয়ে পুরো বিপরীতমুখী ইনিংস খেলছেন মুর, ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। জায়গা দিলে সেটা কাজে লাগিয়েছেন, নিজের জোনে ফুললেংথ পেলে ড্রাইভও করেছেন দারুণভাবে। ফিফটির পরও চালিয়ে গেছেন আক্রমণ, আউট হওয়ার আগে করেছেন ১১৪ বলে ১২ চার ও ১ ছয়ে ৮৩ রান।
আর টেইলর খেলেছেন ১৩ বছরের পুরোনো এক ইনিংস। দেশের বাইরে তার এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ৭৮ রান, ২০০৫ সালে করেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। ফিফটি ছিল ওই একটিই। সেটাকে ছাপিয়ে গেলেন তিনি। ক্রিজ ধরে রেখেছিলেন, লেগ-সাইডে ছিলেন বেশি সচল। ‘ভি’-এর মধ্যে মেরেছেন ছয়টি চার। জিম্বাবুয়ে ও ফলো-অনের মাঝে ব্যবধান হয়ে ছিলেন তিনিই। ১৮৭ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পূরণ করেছেন ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি। মিরাজের খাটো লেংথের প্রিয় সুইপটা স্লগ করেছিলেন ভালভাবেই, সব এলোমেলো হয়ে গেছে তাইজুলের ওই ক্যাচে।
আজ যে টেইলরকে ছাপিয়ে যাওয়ার দিন তাইজুলের!