• বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
  • " />

     

    তাইজুল না হয় আড়ালেই থাকুন...

    তাইজুল না হয় আড়ালেই থাকুন...    


    ‘আনসাং হিরো’ কথাটা ক্রিকেটে খুব চলে।

    কেউ কেউ আছেন, পাদপ্রদীপের আড়ালে থাকাটাই তাদের নিয়তি। ফুটবলে যেমন মেসিদের দ্যুতিতে অনেক সময় আড়ালে চলে যান বুসকেটসরা, ক্রিকেটে পারফর্ম করেও কেউ কেউ আড়ালেই থেকে যান।

    তাইজুল ইসলাম নিজে চান বা না চান, তাঁকে অনেকবারই সেই নিয়তি মেনে নিতে হয়েছে। স্বভাবেও এমনিতে তিনি বেশ অন্তর্মুখী, জাতীয় দলের আরও অনেকের মতো সেই ‘এক্স ফ্যাক্টর’ তাঁর নেই। তাঁকে নিয়ে আলাদা করে আলোচনা-সমালোচনাও নেই খুব একটা। বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর যেমন সামাজিক মাধ্যমে ‘নীরব ঘাতক’ নামের একটা উপাধি জুটে গেছে। তবে তাইজুলের সেই স্বীকৃতিটুকুও জোটে না। নিজের কাজটা অনেক দিন ধরেই ঠিকঠাক করে যাচ্ছেন, অথচ তাঁকে নিয়ে কথাই হয় না। নিজেও প্রচারমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, আজ ৫ উইকেট নেওয়ার পরও ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে উত্তর সারলেন এক বাক্যে বা কয়েক শব্দে। উইকেট নিতে তাঁর যত আগ্রহ, কথা বলতে যেন তাঁর ততই অনীহা!

    তাইজুল যা করছেন, তাতে এখন অন্তত তাঁর আড়ালে চলে যাওয়ার উপায় নেই। সিলেট টেস্টে দুই ইনিংস মিলে নিয়েছেন ১১ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে টেস্টেই ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে এনামুল হক জুনিয়র, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজের। নিজের অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাইজুলের উইকেট ৮৫টি, অথচ এই সময়ে সাকিবের উইকেট ৭৪টি। সাকিবের শুন্যতা তো পূরণ করছেনই, কখনো কখনো সেই অভাবটা একবারের জন্যও মনে পড়তে দিচ্ছেন না। তাইজুল আজ সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য বলেছেন, সাকিব না থাকায় বাড়তি দায়িত্বটা উপভোগই করেন। বাংলাদেশের হয়ে টানা তিন ইনিংসে ৫ নেওয়ার কীর্তিতেও এনামুল আর সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলেছেন আজ। এই সিরিজে উইকেট হয়ে গেছে ১৬টি, বাংলাদেশের হয়ে এক সিরিজে মিরাজের সবচেয়ে বেশি ১৯ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা এখন ভেঙে দিতেই পারেন। আরও যে এক ইনিংস বল করার বাকি!

    সমস্যা হচ্ছে, তাইজুল অনেক দিন ধরে এসব করলেও পরিস্থিতি তাঁর অর্জনটা ঠেলে দিচ্ছে আড়ালে। সিলেট টেস্টে দুই ইনিংসে ১১ উইকেট পেলেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় দল জয় পায়নি। তাঁর দুর্ভাগ্য, সংবাদ সম্মেলনে নিজের অর্জনের চেয়ে বেশি কথা বলতে হয়েছে দলের ব্যর্থতা নিয়ে। এক টেস্টে এত উইকেট নিয়েও হারার বেদনা বাংলাদেশের আর কোনো বোলারকে নিতে হয়নি। 

    কিন্তু সিলেট তো কেবল একটা উদাহরণ, আলো ছড়িয়েও তাইজুলের আড়ালে চলে যাওয়ার উদাহরণ যে অনেক। এই বছরেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দুই ইনিংস মিলে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সেবারও জেতা হয়নি। নিজের অভিষেক টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন, কিন্তু সেবারও হেরে গিয়েছিল দল। শুধু চার বছর আগে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংসে ৮ উইকেট নেওয়ার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হাসিটা ছিল তাঁর মুখে। তবে বল হাতে কাজ শেষ হয়নি তখন, ব্যাট হাতেও রাখতে হয়েছিল অবদান। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছিল তাঁর হাতে। এর বাইরে ইনিংসে অন্তত ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আর একবারই আছে, ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেবার অবশ্য ম্যাচ বাঁচাতে পেরেছিল বাংলাদেশ, তবে তামিম-ইমরুলের মহাকাব্যিক জুটিতে আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তাইজুল।

    আজও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিজের চেয়ে দলের অর্জনই তাঁর কাছে আগে। দলের জন্যই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে করে গেছেন রেকর্ড ৬৭ ওভার, সেবারও নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এই টেস্টে হয়তো জয় পেলে মুশফিক-মুমিনুলের আড়ালে চলে যেতে পারেন, তবে তাইজুলের জন্য এই অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়।

    জুইঁয়ের গন্ধ গোলাপের চেয়ে কম কিছু নয়, কিন্তু কদর তো গোলাপেরই বেশি!