দিনটা অস্ট্রেলিয়ার হতে দিলেন না পূজারা
স্কোর
১ম দিন শেষে
ভারত ১ম ইনিংসে ৮৭.৫ ওভারে ২৫০/৯ (পূজারা ১২৩, রোহিত ৩৭, কামিন্স ২/৪৯, হ্যাজলউড ২/৫২)
সিরিজের শুরুটা বিরাট কোহলিদের জন্য হতে পারত দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম দেড় ঘণ্টার মাঝেই টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে যখন ধুঁকছে ভারত, তখনই দলের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন পূজারা। অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ছিল অস্ট্রেলিয়ান বোলারদেরই রাজত্ব। বোলারদের দাপটের মাঝেও দিনটা পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ার হতে দিলেন না পূজারা।
টসে জেতার পর ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে কোহলি দ্বিতীয়বার ভাবেননি। পিচে বোলারদের জন্য খুব বেশি কিছু না থাকলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ভুল শট নির্বাচনই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে তাদের।দিনের মাত্র দ্বিতীয় ওভার চলছে, ওভারের শেষ বলটা অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরেই ফেললেন জস হ্যাজলউড। সেই বলে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে অ্যারন ফিঞ্চের হাতে ক্যাচ দিলেন ২ রান করা লোকেশ রাহুল। সেই শুরু, চার ওভার পর রাহুলের পথে হাঁটলেন আরেক ওপেনার মুরালি বিজয়ও। মিচেল স্টার্কের বলে খোঁচা মেরে টিম পেইনের হাতে তালুবন্দি হন তিনি।
ভারত সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছে বিজয় ফেরার কিছুক্ষণ পরেই। প্যাট কামিন্সের বলে ড্রাইভ করেছিলেন কোহলি, বলটা তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে অনায়াসেই চলে যেতে পারত থার্ড ম্যান অঞ্চলে। গালিতে দাঁড়ানো উসমান খাওয়াজা অনেকটা ‘সুপারম্যানের’ মতো উড়ে গিয়ে সেই ক্যাচ ধরলেন। সেই ক্যাচে হতভম্ব কোহলি মাঠ ছাড়লেন মাত্র ৩ রান করেই। এ নিয়ে কামিন্সের বলে কোনো রান না নিয়ে দুইবার আউট হলেন কোহলি, সেটাও মাত্র চার বল খেলেই!
রাহুলের মতো অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন অজিংকা রাহানেও। হ্যাজলউডের বলে রাহানে ফিরলে ভারতের স্কোর দাড়ায় ৪ উইকেটে ৪১ রান। ধুঁকতে থাকা ভারতকে সামলেছেন পূজারা ও রোহিত শর্মা। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের জবাব দিতে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন রোহিত। ২ চার ও ৩ ছয়ে করেছেন ৩১ রান। রোহিত অবশ্য নিজের আউটের জন্য নিজেকেই দুষতে পারেন। নাথান লায়নের ওভারের শুরুতেই অল্পের জন্য আউটের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। তৃতীয় বলে আবার ক্রিজ ছেড়ে মারতে যান লায়নকে, এবার আর ভাগ্য সহায় হয়নি, মার্কাস হ্যারিসের হাতে তালুবন্দি হয়ে ফিরতে হয় তাকে। অ্যাডিলেডে কখনোই উইকেটশূন্য থাকেননি লায়ন, এবারও সেটার ব্যাতিক্রম হলো না।
রোহিতের মতো আক্রমণাত্মক মুডে ছিলেন ঋশভ পান্টও। ২৫ রানে লায়ন ফিরিয়েছেন তাকেও। পান্ট ফেরার পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ে আবার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন পূজারা। দুজন প্রায় দুই ঘণ্টার মতো মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন উইকেটে। এই জুটি ভাঙতে বেশ হ্যাপা পোহাতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের, বারবার বোলারের পরিবর্তন করেও সুবিধা করতে পারছিলেন না পেইন। সপ্তম উইকেটে পূজারা- অশ্বিন জুটি ক্রিজে কাটিয়েছেন প্রায় ২৫ ওভার, যোগ করেছে ৬২ রান। কামিন্সের দারুণ এক ডেলিভারিতে ভাঙ্গে এই জুটি। কামিন্সের সেই বল অশ্বিন বুঝে ওঠার আগেই তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাতে।
ইনিংসের শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে সঙ্গী হারিয়েছেন পূজারা। একে একে সবাই ফিরলেও পূজারা ছিলেন অবিচল। স্টার্ক, লায়নদের হতাশায় ডুবিয়ে ক্যারিয়ারের ১৬ তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পূজারা। সপ্তম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এশিয়ার বাইরের সিরিজে টেস্টের প্রথম দিনেই সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। সেঞ্চুরির পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই করছিলেন পূজারা। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আউট করতে পারেনি কোনো অস্ট্রেলিয়ান বোলারই। ১২৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস শেষ হয় রান আউটে। হ্যাজলউডের বলে রান নিতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়ানো কামিন্সের দারুণ এক থ্রোতে থামেন পূজারা। এই নিয়ে টেস্টে অষ্টমবারের মতো রান আউট হলেন পূজারা। ভারতীয়দের মাঝে তাঁর চেয়ে বেশিবার রান আউট হয়েছেন শুধু শচীন টেন্ডুলকার(৯) ও রাহুল দ্রাবিড়(১৩)।
পূজারার আউটের পরপরই দিনের খেলা শেষ হয়। দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের মতো জ্বলে উঠবেন ভারতীয় বোলাররাও, এই প্রার্থনাই হয়ত করছেন কোহলি।