সেই পুরনো কোহলি-ধোনিতেই ভারতের জয়
স্কোর
অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ২৯৮/৮ (মার্শ ১৩১, ম্যাক্সওয়েল ৪৮; ভুবনেশ্বর ৪/৪৫, শামি ৩/৫৮)
ভারত ৪৯.২ ওভারে ২৯৯/৪ (কোহলি ১০৪, ধোনি ৫৫*; ম্যাক্সওয়েল ১/১৬, স্টোয়নিস ১/৪৬)
ভারত ৬ উইকেটে জয়ী
দলে তাঁর জায়গা নিয়ে গত কয়েক মাসে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ২৫ এর নিচে ব্যাটিং গড় কিংবা ১০০ এর নিচে স্ট্রাইক রেট, এক সময়ে ভারতের সেরা ফিনিশার মহেন্দ্র সিং ধোনি যেন হারিয়েই গিয়েছিলেন। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিরলেন সেই চিরচেনা ধোনি। শন মার্শের সেঞ্চুরিকে ম্লান করা বিরাট কোহলির সেঞ্চুরির পর তাঁর অসাধারণ এক ইনিংসেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ছয় উইকেটে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনল ভারত।
২৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি ভারতের। শিখর ধাওয়ান ছিলেন মারমুখী মুডে। ২৮ বলে ৩২ রান করা ধাওয়ানকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত আনেন জেসন বেহরেনডর্ফ। মিড অফে খাওয়াজার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর রোহিতকে সাথে নিয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়েন কোহলি। ধাওয়ানের মতো হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রোহিত শর্মারও। দুই চার ও দুই ছয়ে ৫২ বলে ৪৩ রান করে মার্কাস স্টোয়নিসের বলে মিড উইকেটে পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাতে তালুবন্দি হন রোহিত।
বহুবার বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলকে একাই টেনে নিয়েছেন তিনি। আজও দেখা গেল সেই চিরচেনা কোহলিকেই, চোখ ধাঁধানো সব শটে পূর্ণ করেছেন ৩৯ তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। রান তাড়া করতে নেমে এটি তাঁর ২৪তম সেঞ্চুরি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটি কোহলির পঞ্চম সেঞ্চুরি, কুমার সাঙ্গাকারা ও রোহিতের শুধু এতগুলো সেঞ্চুরি আছে এখানে। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটি কোহলির ষষ্ঠ সেঞ্চুরি।
সঙ্গী হিসেবে আমবাতি রাইডুকে বেশিক্ষণ পাননি কোহলি। তবে মহেন্দ্র সিং ধোনি অবশ্য দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন কোহলিকে। সেঞ্চুরি পূর্ণ করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়বেন, এমনটাই আশা করছিলেন ভারতের সমর্থকরা। তাদের আশায় পানি ঢেলে দিয়েছেন ঝাই রিচার্ডসন। সেঞ্চুরি পাওয়ার পরপরই ডিপ মিড উইকেটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন রিচার্ডসনের বলে।
কোহলি ফিরলেও অবিচল ছিলেন ধোনি। গত ম্যাচের মতো আজও পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি, তবে সেটা এসেছে ৫৩ বলে। তাঁর সাথে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন দিনেশ কার্তিক। দুজনের দৃঢ়তায়ই শেষ ওভারে গিয়ে ম্যাচ জেতে ভারত। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৭ রান। প্রথম বলে ছয় মেরেই জয় নিশ্চিত করেন ধোনি। এটা অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড।
সকালে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একদম ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। গত কয়েক ম্যাচের মতো এবারও ব্যর্থ অ্যারন ফিঞ্চ। ৬ রান করে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে বোল্ড হন তিনি। পরের ওভারেই ফেরেন আরেক ওপেনার অ্যালেক্স ক্যারি। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পথ দেখাচ্ছিলেন শন মার্শ ও উসমান খাওয়াজা। দুজনের ৫৬ রানের জুটি ভাঙ্গে খাওয়াজার রান আউটে। পয়েন্টে দাঁড়ান রবীন্দ্র জাদেজার দারুণ এক থ্রোতে ফিরতে হয় খাওয়াজাকে, ফেরার আগে করেছেন ২১ রান।
পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও মার্কাস স্টোয়নিস কেউই মার্শকে খুব বেশি সঙ্গ দিতে পারেনি। ক্রিজে থিতু হওয়ার আভাস দিলেও অল্প রানে ফিরেছেন দুজনই। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে ৯৪ রানের জুটি গড়েন মার্শ। এই সময় পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের ৮ম সেঞ্চুরি। অন্য প্রান্তে ম্যাক্সওয়েল খেলেছেন স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে। ৫ চার ও এক ছয়ে ৩৭ বলে করেছেন ৪৮ রান। এই জুটি যতক্ষণ ক্রিজে ছিল, মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ার ৩০০ রান অনায়াসেই পেরিয়ে যাবে।
হাফ সেঞ্চুরি থেকে দুই রান দূরে থাকতে ভুবনেশ্বরের স্লোয়ারে লং অফে দিনেশ কার্তিকের হাতে তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ম্যাক্সওয়েল। এক বল পরেই ফেরেন মার্শও, লং অফে জাদেজার হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি। ফেরার আগে ১১ চার ও তিন ছয়ে ১২৩ বলে করেছেন ১৩১ রান। এই দুজন ফিরলে আর ৩০০ করা হয়নি অজিদের। এটাই শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ হয়ে থাকল তাদের।