• অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজ
  • " />

     

    কোহলির উইকেটেই কিছুটা স্বস্তি অস্ট্রেলিয়ার

    কোহলির উইকেটেই কিছুটা স্বস্তি অস্ট্রেলিয়ার    

    স্কোর

    তৃতীয় দিনশেষে

    ভারত ২৫০ ও ৬১ ওভারে ১৫১/৩ ( রাহুল ৪৪, পূজারা ৪০*, কোহলি ৩৪; স্টার্ক ১/১৮, হ্যাজলউড ১/২৫, লায়ন ১/৪৮)

    অস্ট্রেলিয়া ২৩৫

    ভারত ১৬৬ রানে এগিয়ে

     

    দিনের আর চার ওভার বাকি। বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারা ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ব্যাটিং করছেন দুজন। ভারতের লিডটাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২। টিম পেইনের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ তখন স্পষ্ট। ঠিক সেই মুহূর্তেই কোহলিকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের উল্লাসে ভাসালেন নাথান লায়ন, বাঁচিয়ে রাখলেন ম্যাচে ফেরার আশা। অ্যাডিলেডে তৃতীয় দিনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে দিন শেষে ১৬৬ রানে এগিয়ে আছে ভারত।

    সকালে বৃষ্টির কারণে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় খেলা। মিচেল স্টার্ককে সাথে নিয়ে দেখেশুনেই খেলছিলেন ট্রাভিস হেড। স্টার্ককে ফিরিয়ে দিনের প্রথম আঘাত আনেন জাসপ্রীত বুমরাহ। অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বল ড্রাইভ করলে বল ব্যাটের কোনায় লেগে চলে যায় ঋশভ পান্টের হাতে। স্টার্ক ফেরার পর আবার নামে বৃষ্টি, এবার খেলা বন্ধ ছিল প্রায় ৪০ মিনিট।

    নবম উইকেটে হেডকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন নাথান লায়ন। লায়ন ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক, ২ চার ও এক ছয়ে মাত্র ২৮ বলেই করেছিলেন ২৪ রান। এই জুটি তোলে ৩১ রান। ভারতের প্রথম ইনিংসের স্কোরকে ছুঁয়ে ফেলবে অজিরা, যখনই এমন মনে হচ্ছিল, হেড-লায়ন জুটি ভেঙে কোহলিকে স্বস্তি এনে দেন মোহাম্মদ শামি। শামির বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পান্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হেড, ফেরার আগে করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ ৭২ রান। পরের বলেই পান্টের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন জস হ্যাজলউডও। প্রথম ইনিংসে ১৫ রানের লিড নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভারত।

    লোকেশ রাহুল- মুরালি বিজয় জুটি প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ ছিল, দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন দুজনই। আজ দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। স্টার্ক, হ্যাজলউডদের হতাশ করে ভারতের ভালো সূচনা এনে দিয়েছেন রাহুল-বিজয়। বিজয় খানিকটা ধীরগতির ব্যাটিং করলেও বেশ মারমুখী ছিলেন রাহুল। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিরুদ্ধে দাপটের সাথেই ব্যাট করেছেন। ১৯ তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন স্টার্ক, তার বলে স্লিপে পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাতে তালুবন্দি হয়ে ফিরেছেন বিজয়। বিজয় ফেরার পাঁচ ওভার পরেই ফেরেন রাহুল। তিন চার ও এক ছয়ে সাজান ৪৪ রানের ইনিংসের পর হ্যাজলউডের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করা বলে খোঁচা মেরে টিম পেইনের হাতে তালুবন্দি হন রাহুল।

    রাহুল-বিজয় ফেরার পর দলের হাল ধরেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান চেতেশ্বর পূজারা ও বিরাট কোহলি। দুজনেই অপার ধৈর্য নিয়ে ব্যাটিং করেছেন লম্বা সময়। ৩৩ ওভার ব্যাটিং করে এই জুটি করেছে মাত্র ৭১ রান। কোহলি খেলেছেন ১০৪ বল, স্ট্রাইক রেটে আজ তিনি ছিলেন অনেকটাই অচেনা। মাত্র ৩২.৬৯ স্ট্রাইক রেটে পুরো ইনিংসে কোহলি মেরেছেন তিনটি চার। অন্যদিকে পূজারা ব্যাট করেছেন স্বভাবসুলভ ধীর গতিতেই। একবার জীবন পেয়েছেন পূজারা, লায়নের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন, রিভিউ নিয়ে দেখা গেছে বল স্ট্যাম্পের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। দুজনের ব্যাটে ভর করে লিডটা ১৫০ এর ওপরে নিয়ে যায় ভারত, চিন্তার ভাজ বাড়তে থাকে পেইনের কপালে।

    দিনের খেলার চার ওভার বাকি থাকতে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কোহলি। লায়নের বলে ঠেকাতে গিয়েছিলেন। বল খানিকটা লাফিয়ে উঠে তার ব্যাটে লেগে চলে যায় শর্ট লেগে দাঁড়ান অ্যারন ফিঞ্চের হাতে। ৩৪ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় কোহলির চোখেমুখে হতাশার ছাপ ছিল স্পষ্ট। আউট হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এক হাজার রান পূর্ণ করেছেন কোহলি। এতে তার সময় লেগেছে মাত্র ১৮ ইনিংস, যা উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের দ্রুততম। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দ্রুততম সময়ে এক হাজার রান পূর্ণ করা ইংলিশ ব্যাটসম্যান কেন বেরিংটনের রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন তিনি, বেরিংটনও হাজার রান পূর্ণ করেছিলেন ১৮ ইনিংসেই।

    কোহলিকে ফেরানোর পর নিজের শেষ দুই ওভারে অজিঙ্কা রাহানে বেশ কয়েকবার বিপদে ফেলেছিলেন লায়ন। শেষ পর্যন্ত আর কোনো উইকেট না হারিয়েই দিনের খেলা শেষ করে ভারত। লায়নের বল যেভাবে ঘুরছে, তাতে বেশি খুশি হবেন কোহলিই। চতুর্থ দিনে লিডটা যদি ৩০০ রানের কাছে নিতে পারে ভারত, ম্যাচ জয়ের পথটা কঠিন হয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ার। অন্যদিকে পেইন চাইবেন যত দ্রুত সম্ভব ভারতকে অলআউট করতে।