• অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজ
  • " />

     

    রোমাঞ্চকর অ্যাডিলেডে জিতল ভারতই

    রোমাঞ্চকর অ্যাডিলেডে জিতল ভারতই    

     

    স্কোর

    অস্ট্রেলিয়া ২৩৫ ও ১১৯.৫ ওভারে ২৯১ ( মার্শ ৬০, পেইন ৪১, লায়ন ৩৮*; শামি ৩/৬৫, বুমরাহ ৩/৬৮, অশ্বিন ৩/৯২)

    ভারত ২৫০ ও ৩০৭

    ভারত ৩১ রানে জয়ী

    ম্যান অফ দা ম্যাচ- চেতেশ্বর পূজারা

     

    একটা করে বল ঠেকাচ্ছেন নাথান লায়ন ও জস হ্যাজলউডরা, অ্যাডিলেডের দর্শকদের করতালিতে মুখর হয়ে উঠছে পুরো স্টেডিয়াম। প্রতিটা রানের সাথে বিরাট কোহলির কপালের দুশ্চিন্তার ভাজটাও ক্রমশ বাড়ছে, বাড়ছে হতাশাও। নিজের অঙ্গভঙ্গিতে সেটা বেশ কয়েকবার প্রকাশও করেছেন কোহলি। ড্রেসিংরুমে বসা অস্ট্রেলিয়ানরাও হয়ত দেখতে শুরু করেছিলেন অবিশ্বাস্য এক জয়ের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত জয়টা পেল কোহলির ভারতই। লক্ষ্য থেকে ৩১ রান দূরে থেমে গেল হ্যাজলউডদের থেমে যেতে হলো। এই প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতল ভারত।

    পঞ্চম দিনে অস্ট্রেলিয়ার ভরসা হয়ে ছিল যে জুটি, সেই শন মার্শ-ট্রাভিস হেডের কেউই দীর্ঘ সময় টিকতে পারেননি। হেডকে ফিরিয়েছেন ইশান্ত শর্মা। দুর্দান্ত এক বাউন্সার সামলাতে পারেননি হেড, স্লিপে সহজ ক্যাচ ধরেছেন অজিঙ্কা রাহানে। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে হেড করেন ১৪ রান। টিম পেইনকে নিয়ে মার্শ জুটি গড়ার আভাস দিচ্ছিলেন। ৩১ রানের সেই জুটি ভাঙেন জাসপ্রীত বুমরাহ। পুরো ইনিংসজুড়েই ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া মার্শের ধৈর্যচ্যুতি হলো বুমরাহর বলে, অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে পড়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়েই ব্যাটে খোঁচা লাগলো। উইকেটের পেছনে ঋশভ পান্ট সহজ ক্যাচ লুফে নিয়েছেন। ৬০ রান করা মার্শ ফিরলে অজিদের জয়ের স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়।

    পেইনে কিছুটা হলেও আশা বেঁচে ছিল অস্ট্রেলিয়ার। প্যাট কামিন্সের সাথে তার ৩১ রানের জুটি মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল বিরাট কোহলির। পেইন যখন হাফ সেঞ্চুরির অনেকটা কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তখনি তাঁকে ফেরান বুমরাহ। ৪১ রানে পেইন ফিরেছেন পান্টের হাতে ক্যাচ দিয়েই। 

    এরপরেই শুরু অস্ট্রেলিয়ার লেজের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ। কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়ন ও জস হ্যাজলউড; ভারতীয় বোলারদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে দিয়েছিলেন সবাই। পেইন ফেরার পর কামিন্স-স্টার্কের জুটিই আভাস দিচ্ছিল প্রতিরোধের। দুজনেই করেছেন ২৮ রান। কামিন্স-স্টার্ককে যেন কিছুতেই আউট করার উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না কোহলি। অবশেষে ৪১ রানের জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ শামি। পান্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে একরাশ হতাশা নিয়েই ফিরতে হয় স্টার্ককে। এই টেস্টে ১১ টি ডিসমিসাল করেছেন পান্ট, যা এক টেস্টে সর্বোচ্চ, ছুঁয়েছেন জ্যাক রাসেল ও এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। স্টার্ক ফেরার কিছুক্ষণ পর আউট হয়েছেন কামিন্সও, বুমরাহর বলে মারতে গিয়ে স্লিপে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।

     

    স্টার্ক-কামিন্স ফিরলে ভারতের জয়টা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। লায়ন-হ্যাজলউড অবশ্য এতো সহজে হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না। ৪৭ বলে ৩৮ রান করা লায়নকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন হ্যাজলউড। লায়ন অবশ্য আউট হতে পারতেন আগেই, ইশান্ত শর্মার সেই বলটা নো-বল না হলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউয়ের জন্য আঙুল তুলতে পারতেন। বুমরার বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন একবার, পান্ট ধরতে পারেননি এই টেস্টে রেকর্ড ১২তম ক্যাচ।

    বারবার বোলিংয়ে পরিবর্তন এনেও অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেটটা ফেলতে পারছিলেন না কোহলি। ধীরে ধীরে লক্ষ্যের অনেকটাই কাছে চলে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। দুর্দান্ত ডিফেন্সের পাশাপাশি বাজে বলে ভালো শটও মারছিলেন লায়ন-হ্যাজলউডরা। চা বিরতির ঠিক আগের বলেই ভাঙ্গে হ্যাজলউডের প্রতিরোধ। পুরো দিন ৩৩ ওভার বল করে উইকেট শূন্য থাকা অশ্বিন ফ্লাইট দিয়েছিলেন বলে, সেই বল ড্রাইভ করতে গিয়েই স্লিপে বল তুলে দেন ১৩ রান করা হ্যাজলউড। নিচের দিকে ঝুঁকে বল তালুবন্দি করেন লোকেশ রাহুল, উল্লাসে ফেটে পড়ে কোহলিসহ দলের সবাই।

    ম্যাচ শেষে পেইন বললেন, চেতেশ্বর পূজারাই দুই দলের মাঝে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসের ১২৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭১ রান করা পূজারার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।