• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    বার্সাকে আটকে দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পার্স, কপাল পুড়ল ইন্টারের

    বার্সাকে আটকে দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পার্স, কপাল পুড়ল ইন্টারের    

    ঘড়িতে তখন ৮৫ মিনিট। উসমান ডেম্বেলের গোলে ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার বিপক্ষে পিছিয়ে আছে টটেনহাম হটস্পার্স। গ্রুপের অন্য ম্যাচে জিউসেপ্পে মিয়াৎজা স্টেডিয়ামে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও মাউরো ইকার্দির গোলে পিএসভির সাথে সমতায় ফিরেছে ইন্টার মিলান। ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট 'নেরাজ্জুরি'দের, স্পার্সের তখন ৭ পয়েন্ট। শেষ ষোলোতে যেতে হলে তখন অন্তত ড্র দরকার টটেনহামের। ঠিক তখনই স্পার্সের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন লুকাস মৌরা। বাঁ-প্রান্ত থেকে হ্যারি কেইনের ক্রসে জোরাল শটে দলকে সমতায় ফেরালেন। ক্যাম্প ন্যু থেকে ১-১ গোলে ড্র নিয়ে ফিরল টটেনহাম, নিশ্চিত করল শেষ ষোলোর যাত্রাও। বার্সেলোনার সাথে 'বি' গ্রুপ থেকে রানার্স-আপ হিসেবে শেষ ষোলতে গেলেন কেইনরা। আর পিএসভির বিপক্ষে ঘরের মাঠে জিততে না পারায় ইউরোপা লিগই ভরসা হল ইন্টারের। 

    গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ন্যু ক্যাম্পে আজ লিওনেল মেসিসহ মোট ৭ জনকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন এর্নেস্তো ভালভার্দে। বিশ্রামে ছিলেন সার্জিও বুস্কেটস, আর্তুরো ভিদালরাও। কিন্তু নিজেদের মাঠে স্পার্সের বিপক্ষে শুরুটা চ্যম্পিয়নদের মতই হয়েছিল বার্সার। ৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে দলকে লিড এনে দেন ডেম্বেলে। দ্বিতীয় সারির বার্সার বিপক্ষেও তাই শুরুতেই কাজটা কঠিন হয়ে যায় স্পার্সের।

     

    আলেনা, রামোস অলিভেরাদের মত তরুণদের নিয়ে সাজানো বার্সাকেও আটকাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিল স্পার্সের ডিফেন্ডারেরা। তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া স্পার্স ম্যাচে ফিরতে শুরু করে ফর্মেশন বদলে। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে মিডফিল্ডার হ্যারি উইঙ্কসকে নিচে নামিয়ে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে দল সাজান পচেত্তিনো। দুই ফুলব্যাক ড্যানি রোজ, ওয়াকার-পিটার্সরা উঠে যান আক্রমণে। রোজের হাত ধরেই গোলের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল স্পার্স। কিন্তু ৩০ মিনিটে তার চমৎকার নিচু ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি হিউং-মিন সন। এর মিনিট তিনেক পর আরও বড় সুযোগ পেয়েছিলেন সন। কিন্তু ৩৩ মিনিটে গোলরক্ষক জ্যাসপার সিলিসেনকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি কোরিয়ান ফরোয়ার্ড। ৪০ মিনিটে সনের মতই সিলিসেনকে একা পেয়েও গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন কেইন। ন্যু ক্যাম্পে গোলের এমন দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করার পর ডাগআউটে পচেত্তিনোর অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল, হয়ত তিনিও আর ভরসা পাচ্ছিলেন না পরের রাউন্ডে যাওয়ার। কেইন-সনদের মিসের সুযোগে প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে আরেকটু হলেই ব্যবধান দ্বিগুণ করতেন ফিলিপ কুতিনিয়ো। কিন্তু ৪৪ মিনিটে তার বাঁকানো শট হুগো লরিসকে পরাস্ত করলেও প্রতিহত হয় বারপোস্টে। 

     

     

    প্রথমার্ধে স্পার্সের সমতায় ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধেও দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন বার্সার দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক জ্যাস্পার সিলিসেন। ৪৮ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের জোরালো শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৫০ মিনিটে চমৎকার এক প্রতি-আক্রমণে এরিকসেনের পাস থেকে ড্যালে আলির শটও ফিরিয়ে দেন সিলিসেন। এতটাই দুর্দান্ত ছিলেন, এই সেভের পর সিলিসেনের সাথে ম্যাচের মধ্যেই করমর্দন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন আলি নিজেই। স্পার্সের এত সুযোগ পাওয়ার পেছনে অবশ্য বার্সার নড়বড়ে রক্ষণের অবদানও কম নয়। ক্লেমেন্ত লং-থমাস ভার্মাইলেনদের কেউই কেইনদের সামনে তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। ৫৩ মিনিটে আবারও সিলিসেনকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন কেইন। কিন্তু গোলে শট রাখতে পারেননি। প্রথমার্ধের মতই স্পার্সের মিসের মহড়ায় গোলের আরও একটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিল স্পার্স। ৫৭ মিনিটে ডেম্বেলের পাস থেকে স্পার্স ডিবক্সে বল পান কুতিনিয়ো। কিন্তু পেছনে থেকে দুর্দান্ত এক ট্যাকেলে তার পা থেকে বল কেড়ে নেন ওয়াকার-পিটার্স।

    ৫৯ মিনিটে স্পার্সের জালে ঠিকই বল পাঠিয়েছিল বার্সা। কুতিনিয়োর পাস থেকে লরিসকে পরাস্ত করেন মুনির এল হাদ্দাদি, কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোলটি। গোলের আশায় শেষদিকে এরিক লামেলাকেও নামিয়ে দিয়েছিলেন পচেত্তিনো। সমতায় ফেরার সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আবারও দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে দাঁড়ান সিলিসেন। ৭৩ মিনিটে ইন্টারের সমতা ফেরালে ম্যাচে ফেরার জন্য আরও মরিয়া হয়ে উঠে স্পার্স। কিন্তু ৭৫ মিনিটে মুসা সিসোকোর ক্রস থেকে মউরার হেড অবিশ্বাস্যভাবে লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন সিলিসেন। ডাচ গোলরক্ষক না থাকলে আজ অন্তত তিন-চার গোলের ব্যবধানে জিততে পারত স্পার্স। পচেত্তিনোর দলের আক্রমণ সামলে প্রতি-আক্রমণে খেলা বার্সা ম্যাচ নিশ্চিত করতে পারত ৮৫ মিনিটে। কিন্তু এবারও বারপোস্টে প্রতিহত হয় কুতিনিয়োর শট। এর মিনিটখানেক পর মউরার গোলে সমতায় ফেরা স্পার্স শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়েই ফেরে ন্যু ক্যাম্প থেকে। তখনও নিশ্চিত ছিল না স্পার্সের নকআউট পর্বে ওঠা। এরও প্রায় মিনিট খানেক পর ইতালির মাঠে খেলা শেষ হওয়ার পর সুখবরটা পান পচেত্তিনো।