পার্থে জয়ের সুবাস পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া
স্কোর
চতুর্থ দিন শেষে
ভারত ২৮৩ ও ৪১ ওভারে ১১২/৫ ( রাহানে ৩০, বিজয় ২০, বিহারি ২৪*; হ্যাজলউড ২/২৪, লায়ন ২/৩০, স্টার্ক ১/২৮)
অস্ট্রেলিয়া ৩২৬ ও ৯৩.২ ওভারে ২৪৩ ( খাওয়াজা ৭২, পেইন ৩৭; শামি ৬/৫৬, বুমরাহ ৩/৩৯)
জয়ের জন্য ভারতের দরকার আরও ১৭৫ রান
পার্থের পিচে দিনভরই পেসারদের গতি ও বাউন্সে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস উঠেছে। ভারতের মোহাম্মদ শামির পর আগুন ঝরিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও জস হ্যাজলউডরা। তবে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা হয়ত পেয়েছেন একজন স্পিনারই। বিরাট কোহলির দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরলেন সেই নাথান লায়ন। কোহলির মহামূল্যবান উইকেট নিয়ে ম্যাচের পাল্লাটা অনেকটাই অস্ট্রেলিয়ার দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়েছেন লায়ন। দিনের শেষভাগে সেট হয়ে যাওয়া অজিঙ্কা রাহানেও ফিরলে জয়ের সুবাস পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।
দিনের প্রথম সেশনটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। উসমান খাওয়াজা ও টিম পেইন মন্থর গতিতে রান তুললেও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেননি। ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবরা উইকেট নেওয়ার মতো কোনো বলই করতে পারেননি। দারুণ ধৈর্য নিয়ে ব্যাট করা খাওয়াজা এই সেশনে পেয়েছেন নিজের ১৪তম টেস্ট ফিফটি। লাঞ্চের সময় অস্ট্রেলিয়ার লিড দাড়ায় ২৩৩ রান। লাঞ্চের পরেই বদলে যায় দৃশ্যপট। বিরতির পর প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ শামি ফেরান দুই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানকে। পঞ্চম বলটা লাফিয়ে উঠেছিল অনেকখানি, পেইন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর গ্লাভসে লেগে বল চলে যায় স্লিপে দাঁড়ান কোহলির হাতে। পরের বলেই ফেরেন গতদিন ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়া অ্যারন ফিঞ্চ। শামির আরেকটি বাউন্সার তাঁর গ্লাভসে লাগে, সহজ ক্যাচ ধরেন ঋশভ পান্ট।
শামির এই এক ওভারই পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। হঠাৎ করেই শামি ও জাসপ্রীত বুমরাহদের বল দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছিল অজি ব্যাটসম্যানদের কাছে। সেট হয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা খাওয়াজাকেও ফেরান শামি। আবারও শামির খাটো লেন্থের বলই উইকেট এনে দিয়েছে, খাওয়াজার ব্যাট আলতোভাবে ছুঁয়ে বল যায় পান্টের হাতে। একদিকে যখন শামির বাউন্সার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সবাই, অন্য প্রান্তে বুমরার বল হঠাৎই একদমই নিচু হয়ে আসলো। আর সেই বলই ঠেকাতে পারলেন না প্যাট কামিন্স, হলেন বোল্ড। নাথান লায়নকেও আউট করেন শামি, ডিপ পয়েন্টে হানুমা বিহারির হাতে ক্যাচ দিলে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ফিগার পান শামি, নিয়েছেন ৬ উইকেট।
শেষ উইকেটে মিচেল স্টার্ক ও জস হ্যাজলউড শুধু হতাশাই বাড়িয়েছেন কোহলির। দুই বোলার যোগ করেছেন মহামূল্যবান ৩৬ রান। তিন চারে স্টার্ক করেন ১৪ রান, ১৭ রান করেছেন হ্যাজলউড, মেরেছেন দুটি চার। ভারতের গলার কাঁটা হয়ে থাকা এই জুটি ভাঙেন বুমরাহ, নিচু হয়ে আসা বলে স্টার্ক বোল্ড হলে শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হয়েছিল ভারতের। স্টার্কের চতুর্থ বলেই ফেরেন লোকেশ রাহুল। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলবেন কী খেলবেন না, এই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেই হয়েছেন বোল্ড, বল তাঁর ব্যাটে লেগে উইকেটে লেগেছে। চেতেশ্বর পূজারাও ফিরেছেন দ্রুতই। হ্যাজলউডের লাফিয়ে ওঠা বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে গেছে পেইনের হাতে।
আবারও কঠিন এক রান তাড়ার দায়িত্বটা আসে কোহলির কাঁধেই। কোহলি শুরুটাও করেছিলেন ভালোভাবেই, চোখ জুড়ান কিছু শটও খেলেছেন। বিজয়ের সাথে কোহলির ৩৫ রানের জুটি ভাঙেন সেই লায়ন। কোহলিকে সপ্তমবারের মতো আউট করেন লায়ন। সামনে এসে লায়নের বল ঠেকাতে চেয়েছিলেন কোহলি, ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে থাকা খাওয়াজার হাতে। পরের ওভারেই বিজয়কেও ফেরান লায়ন। কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হন বিজয়। লায়নের বোলিং দেখে হয়ত কপাল চাপড়াচ্ছেন কোহলি, এই টেস্টে সবুজ পিচের কারণে যে কোনো স্পিনারই খেলাননি তিনি।
অজিঙ্কা রাহানে ও হানুমা বিহারি ক্রিজে নামার পর থেকেই ছিলেন সতর্ক। লায়নের বল সামলানোর ভালো উপায় খুঁজে পেয়েছেন দুজন। সুইপ করে লায়নের বলে চারও মেরেছেন রাহানে ও বিহারি। ক্রিজে থিতু হয়ে দিনটা আর বিপদ ছাড়াই শেষ করবে এই জুটি, আভাস দিচ্ছিলেন এমনটাই। কিন্তু রাহানের কী মনে হলো কে জানে, দিনের খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হ্যাজলউডের নির্বিষ বলে মারতে গিয়ে পয়েন্টে ট্রাভিস হেডের তালুবন্দি হলেন। ৩০ রান করা রাহানের ফেরার সাথেই হয়ত শেষ হয়ে গেলো ভারতের শেষ আশাটুকুও।
দিনশেষে অপরাজিত আছেন বিহারি ও পান্ট। পঞ্চম দিনে ম্যাচ বাঁচাতে পান্ট-বিহারি জুটিকে অবিশ্বাস্য কিছুই করে দেখাতে হবে।