• আইপিএল ২০১৯
  • " />

     

    স্থপতি থেকে আইপিএল নিলামে কোটিপতি

    স্থপতি থেকে আইপিএল নিলামে কোটিপতি    

     

    পাঁচ বছর দিনরাত এক করে পড়াশুনা করেছেন তিনি, হয়েছেন স্থপতি। ফ্রিল্যান্সে স্থপতির চাকরি করে দিনকাল খুব একটা খারাপ যাচ্ছিল না বরুণ চক্রবর্তীর। মাঝে সাঝে বন্ধুদের সাথে টেনিস বলের ক্রিকেট খেলতে যেতেন, আর তখনই মনের ভেতর জমে থাকা পুরনো এক ব্যথা জেগে উঠত। ক্রিকেটার হওয়ার যে স্বপ্নটা বিসর্জন দিয়েছিলেন বহু বছর আগে, সেই স্বপ্নটাই সত্যি করার নেশা আবার পেয়ে বসল বরুণকে। হঠাৎ কী মনে হলো, স্থপতির চাকরি বাদ দিয়ে যোগ দিলেন ক্রিকেট ক্লাবে। আশেপাশের মানুষের হাজার কথাও দমাতে পারেনি এই ডানহাতি লেগস্পিনারকে। সেই বরুণকেই এবার আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব কিনেছে ৮.৪ কোটি রুপি দিয়ে!

    বয়স তখন ১৩। চেন্নাইয়ে পাড়ার সাথীদের সাথে ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি বরুণ চেষ্টা চালিয়েছেন বয়সভিত্তিক রাজ্য দলেও। কিছুতেই যেন ভাগ্যটা সহায় হচ্ছিল না তাঁর। একটা সময় সিদ্ধান্ত নিলেন, অনেক হয়েছে, আর না! ক্রিকেটের নেশা ছেড়ে মনোযোগ দিলেন পড়াশুনায়। চেন্নাইয়ের এসআরএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যকলায় ডিগ্রি নিয়ে চাকরিও শুরু করলেন।

    কিন্তু যার নেশা ক্রিকেট, সে কী আর বাঁধাধরা চাকরিতে জীবন পার করতে পারেন? ২০১৬ সালে একদিন হুট করেই স্টোররুম থেকে বরুণ বের করলেন নিজের কিটব্যাগ, ভর্তি হলেন ক্রমবেস্ট ক্রিকেট ক্লাবে। এই সিদ্ধান্তে পরিবারের সমর্থন ছিল বলেই জানান বরুণ, ‘আমি সারাজীবন স্থপতি হয়ে থাকতে পারতাম না। দেরিতে হলে ক্রিকেটে ফিরেছি, এটা বড় একটা সিদ্ধান্ত ছিল। পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাঁরা সবসময়ই আমার পাশে থেকেছে।’ তবে একটা সময় উইকেটরক্ষক থাকলেও এবার বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই যাত্রা শুরু হল বরুণের। ভাগ্য তাঁর পরীক্ষা নিয়েছে এবারও, মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই পড়েন ইনজুরিতে। সাইডলাইনে বসে থাকতে হয় অনেকদিন।

    এই ইনজুরি অবশ্য শাপে বর হয়ে এসেছে বরুণের জীবনে। ইনজুরি এড়াতে পেসার থেকে স্পিনার বনে যান তিনি, যোগ দেন চেন্নাই ক্রিকেট লিগের চতুর্থ বিভাগের দল জুবলি ক্রিকেট ক্লাবে। ক্লাবের কোচসহ অনেকেই বলেছিলেন, ২৫ বছর বয়সে এসে বোলিংয়ের ধরন পরিবর্তন করাটা উচিত হবে না তাঁর। কারো কথাই অবশ্য শোনেননি বরুণ, না শুনে হয়ত ভালোই করেছেন! কারণ স্পিনার বনে যাওয়ার পর থেকেই কপাল খুলেছে তাঁর। অফস্পিন, লেগস্পিন, গুগলি, ক্যারাম বল, ফ্লিপার, টপ স্পিনার; কী পারেন না তিনি! ধীরে ধীরে তাঁর নামের পাশে লেগে গেলো ‘রহস্যময়’ স্পিনারের ট্যাগ। ২০১৭-১৮ মৌসুমে জুবলির হয়ে ৮.২৬ গড় ও ৩.০৬ ইকনমি রেটে বরুণ নেন ৩১ উইকেট। ব্যাট হাতেও রান পেয়েছেন তিনি, একবার অপরাজিত ৭৪ রান করে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন তিনি। তামিল নাড়ু প্রিমিয়ার লিগে বরুণের হাত ধরেই শিরোপা যেতে মাধুরী প্যান্থারস।

    তামিল নাড়ু প্রিমিয়ার লিগের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর আইপিএলের চেন্নাই ও কলকাতা বরুণকে ডেকে পাঠায়। বেশ কিছুদিন ট্রায়ালে ছিলেন সেখানে। এরপর চেন্নাইয়ের প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে বিজয় ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়ে শিরোপা জেতাতে সাহায্য করেন দলকে।

     

     

    গত দুই বছরে অনেক সাফল্য এসেছে। কিন্তু কোনটাই হয়ত গতকালের ঘটনাকে ছাপিয়ে যায়নি। মাত্র ২০ লাখ বেস প্রাইসে থাকা বরুণের নাম যখন উঠলো আইপিএলের নিলামে, তাঁকে কেনার জন্য রীতিমত কাড়াকাড়ি পড়ে গেল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মাঝে! শেষ পর্যন্ত ৮.৪ কোটি রুপিতে তাঁকে কেনে পাঞ্জাব। বরুণ তো নিজের চোখে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ব্যাপারটা, ‘আমি তো ভেবেছিলাম ২০ লাখে কেউ আমাকে কিনলেই হলো! কিন্তু যেভাবে নিলামটা এগিয়েছে, সত্যি বলতে খুব অবাকই হয়েছি। পুরো অভিজ্ঞতাটা আমার জন্য নতুন।’

    অনিল কুম্বলে তাঁর আদর্শ, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বোলিংও দারুণ পছন্দের। ওভারের ছয় বলে বরুণ করতে পারেন ছয় রকম বল। যে ক্রিকেট থেকে একটা সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, সেই ক্রিকেটই বরুণকে পৌঁছে দিয়েছে খ্যাতির শিখরে। আইপিএলের পর বরুণের স্বপ্ন বিরাট কোহলিদের সাথে জাতীয় দলে খেলা। বরুণ হয়ত অবসর সময়ে মাঝে মাঝে ভাবেন, সেদিন স্থপতির চাকরিটা ছেড়ে হয়ত জীবনের সেরা সিদ্ধান্তটাই নিয়েছিলেন।