সেভিয়াকে শিক্ষা দিয়ে সেমিতে বার্সা
গতবার কোপা ডেল রের ফাইনালে বড় হারের প্রতিশোধ নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল সেভিয়া। প্রথম লেগ ২-০ গোলে জিতে সেমিফাইনালে এক পা দিয়েও রেখেছিল তারা। কিন্তু ন্যু ক্যাম্পে সেভিয়ার স্বপ্নে আবারও ধুলোয় মিশিয়ে দিল বার্সেলোনা। দলগত দারুণ এক পারফরম্যান্সে সেভিয়াকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে গত চাররের চ্যাম্পিয়নরা। দুই লেগ মিলে ৬-৩ গোলে জিতে তাই সেমিফাইনালে উঠেছে বার্সেলোনাই।
প্রথম লেগে ছিলেন না লিওনেল মেসি। দ্বিতীয় লেগে ফিলিপ কৌতিনহো, লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে জুটি বেঁধে নামলেন। বার্সার প্রথম গোলেও রাখলেন অবদান। মাত্র ১৩ মিনিটেই পেনাল্টি আদায় করে নিলেন সেভিয়ার অর্ধে। ডিবক্সের ভেতর থেকে শট নেওয়ার অ্যাটেম্পট করেছিলেন মেসি, প্রমস গিয়েছিলেন শট ব্লক করতে। তাতেই পেনাল্টি পেয়ে যায় বার্সা। যদিও রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক ছিল যথেষ্টই। পেনাল্টি আদায় করে অবশ্য মেসি পেনাল্টি নিলেন না। সুয়ারেজকেও দিলেন না। কৌতিনহোর সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচেও তাকেই সুযোগ করে দিলেন গোল করতে। ১৩ মিনিটে স্পটকিক থেকে গোল করে কৌতিনহোই ন্যু ক্যাম্পে শুরু করেন বার্সার ফিরে আসার যাত্রা।
সেভিয়া অবশ্য এক গোল হজম করে দমে যায়নি। আন্দ্রে সিলভার ফ্লিক জ্যাস্পার সিলেসেন ঠেকিয়ে দিয়ে বার্সাকে টিকিয়ে রাখেন ম্যাচে। বার্সার দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষকের ম্যাচের সেরা মুহুর্ত অবশ্য তখনও আসেনি। ২৭ মিনিটে রকি মেসাকে ডিবক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন জেরার্ড পিকে। ম্যাচের আধঘন্টা পেরুনোর আগেই দ্বিতীয়বারের মতো পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারিও। কিন্তু এভার বানেগা কৌতিনহো হতে পারেননি। সিলেসের দুর্দান্ত এক সেভের কাছে ঠেকে গিয়েছেন তিনি।
অন্যপ্রান্তের গোলরক্ষক হুয়ান সরিয়ানোও দারুণ খেলছিলেন শুরু থেকে। সেভিয়া পেনাল্টি পাওয়ার আগে মেসির গোলমুখি শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। বানেগার পেনাল্টি মিসের মিনিট খানিক পর আরও একবার মেসিকে গোলবঞ্চিত করেন সেভিয়া গোলরক্ষক। কিন্তু ৩১ মিনিটে আর বার্সাকে সমতায় ফেরানো থেকে আটকাতে পারেননি তিনি। মিডফিল্ড থেকে ডিফেন্সচেরা পাসে আর্তুর খুঁজে নিয়েছিলেন ইভান রাকিটিচকে। ক্রোয়াট মিডফিল্ডার বলে ভালোভাবে টাচ করতে পারেননি, কিন্তু ভাগ্যটা ভালোই ছিল তার। হাফ টাচেও গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন ২-২ করেন রাকিটিচই। প্রথমার্ধ শেষের কিছুক্ষণ আগে পিকের হেড অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে না গেলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারত বার্সা।
অবশ্য অপেক্ষা খুব বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি ন্যু ক্যাম্পে। ডানদিক থেকে সুয়ারেজের ক্রসে হেড করে ৫৩ মিনীটে দ্বিতীয়বারের মতো স্কোরশিটে নাম লেখান কৌতিনহো। সেই গোলের রেশ না কাটতেই সার্জি রবার্তোও গোল করে বসেন। মেসির পাস থেকে গোল করে ম্যাচটা ৫৪ মিনিটেই দলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন রবার্তো। ৬৭ মিনিটে অবশ্য আরানা সেভিয়ার হয়ে এক গোল শোধ দিলে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল বার্সা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা তারা শেষ করেছে হেসে খেলেই।
৮৯ মিনিটে জর্দি আলবার ক্রস থেকে গোল করে সুয়ারেজ জয় নিশ্চিত করেন। মেসি গোলটা আগেই পেতে পারতেন। প্রিয় প্রতিপক্ষ সেভিয়ার বিপক্ষে ফাঁকা বারেও গোল করেছিলেন, কিন্তু অ্যাডিশনাল টাইমে আর ভুল করলেন না। সেভিয়ার একটা ফ্রি কিক থেকেই উলটো আক্রমণে উঠে আরও একবার আলবার অ্যাসিস্টেই গোল পান মেসি। চলতি মৌসুমে এ নিয়ে মোট ১২ বার অ্যাসিস্ট করলেন আলবা, ক্যারিয়ারে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই। আর বার্সা গড়েছে অনন্য এক রেকর্ড, টানা ৯ বার কোপা ডেল রের সেমিতে উঠল তারা। কোপার ইতিহাসে সেটাও একটা রেকর্ড!