• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    নিউজিল্যান্ডেও কাটছে না 'বিপিএল-হ্যাংওভার'

    নিউজিল্যান্ডেও কাটছে না 'বিপিএল-হ্যাংওভার'    

    মাশরাফি বিন মুর্তজা কথাটা মজা করেই বলেছিলেন রংপুর রাইডার্সের শেষ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে। আগের বার নিউজিল্যান্ড সফরে প্রস্তুতি নিয়েও ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ, এবার ভালো করলে পরের বার প্রস্তুতি ছাড়াই যাবেন। রসিকতা করে বললেও আক্ষেপের দীর্ঘশ্বাসটা গোপন থাকেনি। এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ যেভাবে গেছে, তাতে অনুশীলন দূরে থাক, মানসিক প্রস্তুতিটাই তো হয়নি। মাসখানেক ধরে চলা বিপিএলের পর চার দিনের মধ্যেই যে মাশরাফিদের নেমে পড়তে হয়েছে মাঠে! আর প্রথম ওয়ানডের ব্যাটিংয়ে সেই দৈন্যটা বোঝা গেছে ভালোমতোই।

    প্রস্তুতি কম হওয়ার এই আক্ষেপ কমবেশি বেজেছে সিনিয়র সব ক্রিকেটারের কন্ঠেই। মাশরাফি যেমন বলেছেন, এবারের প্রস্তুতিটা আদর্শ হয়নি একদমই। বেশি আশা করতে বারণ করতেও নিষেধ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান আরেকটু বেশি স্পষ্ট করে আজ জাতীয় এক দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশে অন্তত দশ দিনের একটা ক্যাম্প করে ছয়-সাত দিন সময় নিয়ে নিউজিল্যান্ড গেলে আদর্শ প্রস্তুতি হতো। তবে সেরকম কিছু দূরে থাক, তার কাছাকাছিও হয়নি। মাশরাফি, তামিম, সাইফ উদ্দিন, রুবেলরা তাই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলারই সুযোগ পাননি। টেস্ট দলে থাকা মুমিনুলকে আগে নিয়ে না গেলে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও প্রতিপক্ষ থেকে খেলোয়াড় ধার করতে হতো বাংলাদেশকে!

    প্রশ্ন করতেই পারেন, সবাই তো খেলার মধ্যেই ছিলেন। তামিমও বলেছিলেন, খেলার চেয়ে আদর্শ প্রস্তুতি আর কিছু হতে পারে না। সেই সেপ্টেম্বর থেকেই ধরতে গেলে টানা খেলার মধ্যে আছে জাতীয় দল। এশিয়া কাপের পর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ, এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ হতে হতে বছরের প্রায় শেষ। এরপর দিন দশেকের মধ্যে নেমে পড়তে হয়েছে বিপিএলের প্রস্তুতিতে। মাসখানেক ধরে চলেছে বিপিএল, দম ফেলার ফুরসত কই? পেশাদার হিসেবে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে, মুশফিকও বলেছিলেন বিপিএলের মধ্যে।

     

     

    তবে নিউজিল্যান্ডের আগে বিপিএল ডাবল লিগ না করে এক লেগে করে ফেলার চিন্তা ছিল বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের। সাকিব আল হাসানও সেদিন বলছিলেন, বিপিএলের ফরম্যাটটা এবার একটু সংক্ষিপ্ত করলে প্রস্তুতির জন্য ভালো হতো। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। আর দেশীয় উইকেটে টি-টোয়েন্টি মানসিকতার রেশটা রয়ে গেছে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। তামিম ইকবালের আউট না হয় কিছু করার ছিল না, কিন্তু বাকিরা কীভাবে দায় থেকে রেহাই পাবেন?

    লিটন দাস যেমন হেনরির ভেতরের ঢোকা বলে পা-ই নড়ালেন না। মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে উইকেটে পড়ে থাকা যখন পরিস্থিতির দাবি ছিল, কাট করতে গিয়ে বল টেনে আনলেন স্টাম্পে। সৌম্য খেলছিলেন দারুণ, কিন্তু আউটটা হলো নিজের দোষেই। যে বলটা পুল করতে গেলেন, সেটি ওই শট খেলার লেংথেরই ছিল না। মাহমুদউল্লাহ অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল  তাড়া করতে গিয়ে ‘অ্যাওয়ে ফ্রম দ্য বডি’ খেলে আউট। সাব্বিরকে অবশ্য খানিকটা বেনিফিট অব ডাউট দেওয়া যায়। একমাত্র মিঠুনই পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে এক দিক ধরে রেখেছিলেন, বাংলাদেশের ইনিংসটা তাতেই একটু ভদ্রস্থ হয়েছে। মাশরাফির অধিনায়কত্বেও যেন খানিকটা তাড়াহুড়োর ছাপ দেখা গেছে। সাব্বির রহমানকে পঞ্চম বোলার হিসেবে খেলানোর জুয়াটা পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে, শেষ পর্যন্ত ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন সেই মাহমুদউল্লাহই।

    এমনিতেই বিপিএলে নিজের একদম শেষ ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে পড়েছেন তাসকিন-সাকিব। তাসকিনের না হয় বিকল্প আছে, তবে সাকিবের অভাবটা আজ ব্যাট-বলে খুব বেশি করেই টের পেয়েছে বাংলাদেশ। আরও দুইটি ওয়ানডের পর টেস্ট সিরিজ পুরোটাই পড়ে আছে। বাংলাদেশ দলের সফরটা এবার অনেক অনেক দীর্ঘ হতে পারে।