• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    নির্ঘুম ১৭ ঘণ্টা শেষে ঢাকায় মাহমুদউল্লাহরা, ভুলতে পারছেন না ক্রাইস্টচার্চ-দুঃস্বপ্ন

    নির্ঘুম ১৭ ঘণ্টা শেষে ঢাকায় মাহমুদউল্লাহরা, ভুলতে পারছেন না ক্রাইস্টচার্চ-দুঃস্বপ্ন    

    ক্রাইস্টচার্চ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকা, ঘড়ির হিসেবে প্রায় ১৭ ঘণ্টারও বেশি উড়ান। তবে চোখে ঘুম নেই বেশির ভাগেরই, একটু চোখ মুদলেও বার বার ফিরে আসছে সেই দুঃস্মৃতি। ক্রাইস্টচার্চের দুঃস্বপ্ন এত সহজে ভোলার নয়, আরও অনেক দিন হয়তো তাড়া করে বেড়াবে রক্তাক্ত মৃতদেহ আর আহতদের আহাজারির সেই সব বিভীষিকা। আপাতত স্বস্তি একটাই, ঠিকমতোই দেশে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহরা, নিরাপদেই স্বজনদের মাঝে ফিরতে পেরেছে বাংলাদেশ দল।


                  ক্রাইস্টচার্চে দুঃস্বপ্নের একদিন

                মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার গল্পটা শোনালেন খালেদ মাসুদ


    গত কাল ক্রাইস্টচার্চে একরকম অলৌকিকভাবেই বেঁচে গেছেন ক্রিকেটাররা, আর হয়তো মিনিট কয়েক এদিক সেদিক বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্ধকারতম দিনগুলোর একটা হয়ে যেতে পারত। ক্রিকেটাররা রাতে চোখের পাতা এদিক সেদিক করতে পারেননি একদম, গল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছেন বেশির ভাগ সময়। উড়ানেও ঘুম সেভাবে ছিল না কারও চোখে। বিশেষ করে জুনিয়ররা ভেঙে পড়েছেন একদমই। ক্রিকেটারদের সঙ্গে একই সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন কালকের ঘটনা একদম কাছ থেকে দেখা ইএসপিএনক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম। তিনি জানিয়েছেন, পুরো উড়ানেই বার বার ঘুরে ঘুরে এসেছে সেই স্মৃতি। সিনিয়ররা দুষ্টুমি আর মজার ছলে জুনিয়রদের অন্য দিকে মনযোগ সরিয়ে রাখলেও সবসময় তা পারা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে হামলাকারীর সেই ভিডিওটা বিভিন্নভাবে চলে আসছিল অনেকের মুঠোফোনে। সেটা দেখতে দেখতে আরও বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন তারা। বিশেষ করে, ফুটবল খেলতে গিয়ে বা সংবাদ সম্মেলনে মিনিট কয়েকের দেরির জন্য যে কাল তাঁরা প্রাণে বেঁচে গেছেন, সেটা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। মোহাম্মদ ইসামের মতে, খেলোয়াড়দের এই ধাক্কা থেকে সামলে ওঠার জন্য কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

    বিমানবন্দরে আজ খেলোয়াড়দের একেকজনের ক্লিষ্ট মলিন চেহারা বলে দিচ্ছিল, মানসিকভাবে কতটা ঝড় বয়ে গেছে তাদের ওপর। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পাণ্ডুর মুখ সাক্ষ্য দিচ্ছিল সেই ধকলের। সেই অবস্থাতেই সাংবাদিকে ঠাসা জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমরা যখন রুমের মধ্যে ছিলাম তখন একটা কথাই মনে হচ্ছিল যে আমরা কতোটা ভাগ্যবান। তারপর বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে যখন যোগাযোগ হল উনারা তখন আমাদের উদ্ধার করলেন।সবচেয়ে বড় কথা নিউজিল্যান্ডে এটা খুবই অপ্রত্যাশিত। বিসিবিকে ধন্যবাদ, পাপন ভাইকে ধন্যবাদ। ওনাদের সঙ্গে যখন কথা হল তখন ওনারা বললেন আমাদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনবেন। দেশবাসীর প্রতি বলব আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা এই মানসিক অবস্থা থেকে বের হতে পারি। আর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ, একইসাথে বিসিবিকেও ধন্যবাদ।’

    বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও এই সময় অভিভাবকের মতোই আপাতত সব ভুলে পরিবারকে সময় দিতে বললেন ক্রিকেটারদের, ‘তারা কঠিন একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এসেছে। আমি যখন তাদের সাথে কথা বলেছি ঘটনার পরপরই, আমরা সকলেই বুঝতে পারছিলাম ওদের মধ্যে দিয়ে কী যাচ্ছে মানসিকভাবে। তখন থেকেই তারা অপেক্ষায় ছিল কখন দেশে আসতে পারবে, কত তাড়াতড়ি। একটু আগে রিয়াদ বলেছে তারা ঘুমাতে পারেনি সারারাত। এতো লম্বা ভ্রমণে তারা সবাই ক্লান্ত। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে অনেকেই। এখন ওদের সাথে কথা বলারও কিছু নেই। আমরা সবাই ওদেরকে বলেছি, যাও বাসায় যাও। সবকিছু বাদ দিয়ে, ঠান্ডা মাথায়, নিজেদের মতো করে, যা ভালো লাগে সেভাবে কাটাও। সবকিছু ঠান্ডা হলে তারপর আমাদের সাথে যোগাযোগ করো। খেলাধুলা নিয়ে এই মূহুর্তে কোনো চিন্তা ভাবনা করবে না। পরিবারের সাথে সময় কাটাবে। আমাদের যদি কোনো সহযোগীতা লাগে কারো আমরা আছিই।’

     

     

    আপাতত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোই হবে ধাক্কা ভোলার সবচেয়ে বড় নিদান।