• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার গল্পটা শোনালেন খালেদ মাসুদ

    মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার গল্পটা শোনালেন খালেদ মাসুদ    

    আরেকটুর জন্য আজকের দিনটা হতে পারত বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার দিনগুলোর একটি। আরেকটুর জন্য আজ ক্রাইস্টচার্চে হয়ে যেতে পারত বাংলাদেশের ক্রিকেটের কল্পনাতীত, ভীষণ অপূরণীয় ক্ষতি। ক্রাইস্টচার্চে যে আজ মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে এসেছেন তামিম, মুশফিকরা। জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে আরেকটু হলেই শিলার হতে পারতেন একজন শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীর মসজিদে হামলার, যেটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে সাংবাদিকদের কাছে খুব কাছ থেকে সেই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার খালেদ মাসুদ।


    মসজিদে হামলা, বেঁচে গেলেন তামিমরা, বাতিল ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট


    কাল থেকে শুরু টেস্টের আগে আজ অনুশীলন করছিল বাংলাদেশ দল। জুমার নামাজের আগে দুপুর আনুমানিক ১.৩০ মিনিটের পর তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় দল। খেলোয়াড় ও স্টাফদের মধ্যে কেউ হোটেলে যান, কেউ মাঠে ছিলেন, আর বড় একটা দল নামাজ পড়ার জন্য হ্যাগলি ওভাল থেকে বাসে রওনা দেন। সেই বাসে ছিলেন খালেদ মাসুদও। বাকিটা শুনুন তাঁর মুখেই, ‘কেউ আশা করিনি এরকম একটা দুর্ঘটনা হবে।আমরা খুবই লাকি আমরা বাসে অনেক জন ছিলাম। এর মধ্যে সৌম্যও ছিল। অনেকেই নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। আমাদের খুব কাছে মসজিদ, বাস থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম। হয়তো ৫০ গজ দূরে ছিলাম। আমরা খুবই ভাগ্যবান, আর তিন চার মিনিট আগে গেলে মসজিদে থাকতাম। তখন বিশাল বড়, ম্যাসিভ একটা ঘটনা ঘটে যেত। আমরা বাইরে থেকে দেখেছি, ম্যুভিতে যেমন দেখেছি রক্তাক্ত অবস্থায় সবাই বেরিয়ে আসছে। প্রায় আট দশ মিনিট আমরা বাসেই ছিলাম। আমরা মাথা নিচু করে ছিলাম, কোনো কারণে যদি বাইরে বেরিয়ে আসে। আবার চিন্তা করছিলাম, কোনো কারণে বাস থেকে নেমে এলোপাথাড়ি গুলি করা যদি শুরু করে। তখন আমরা বাস থেকে বেরিয়ে আসি। এরপর হাঁটা শুরু করি।’

    বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মসজিদে ঢোকার মুখে স্থানীয় এক নারী তাদের ঢুকতে বারণ করেন। তামিমরা তখনো বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। এর মধ্যে গুলির আওয়াজও শোনা যায়। সবাই যখন বাসে আশ্রয় নেন। এরপর রাস্তা ছেড়েপার্ক দিয়ে হাঁটা শুরু করেন। তবে দলের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। এর মধ্যে তামিম বাংলাদেশের একজন সাংবাদিককে ফোন দেন। তিনি সহ বাকি কয়েকজন সাংবাদিক ওই সময় মুশফিকদের সঙ্গে যোগ দেন। ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতায় কাঁপছিলেন সবাই, মুশফিক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন।  খালেদ মাসুদও সেটাই বললেন, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক, আপনার কাছ যখন অমন কিছু দেখবেন... রক্তাক্ত মানুষ যখন বেরিয়ে আসছে, যে কোনো মানুষই তাতে ধাক্কা খাবে। বাসের মধ্যে অনেকেই কান্নাকাটি করেছে। আমার মনে হয় সবাইকে মানসিকভাবে বড় একটা নাড়া দিয়েছে। আমি ম্যানেজার হিসেবে চেষ্টা করেছি সবাইকে একসঙ্গে ড্রেসিংরুমে নিয়ে আসার।’


    এরপর ড্রেসিংরুমে এসে খেলোয়াড়েরা একটু ধাতস্থ হন, নিজেদের সঙ্গে আলাপ করেন। নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা আধ ঘণ্টা দূরের লিংকন হোটেলে ছিলেন। তারা নিরাপদেই যে যার বাড়িতে বা হোটেলে চলে গেছেন। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দেরও নিরাপদে হোটেলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খেলা যে হচ্ছে না সেটি প্রায় নিশ্চিতই ছিল। খুব শিগগিরই এসেছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।

    কিন্তু নিউজিল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ দল ফিরবে কবে? খালেদ মাসুদ বললেন, ‘এখনো ফাইনাল কিছু ঠিক হয়নি। তবে ফ্লাইট শিডিউল থাকে, টিকেটিংয়ের ব্যাপার থাকে। এক সাথে দু একজন হলে হয়তো ইজি হতো। আমরা এখান থেকে ২৫ জন যাব। এতজনের একসঙ্গে টিকেট পাওয়াও কঠিন। তবে কোচিং স্টাফ যারা নিজের দেশে যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা অন্য কোথাও যাবে তাদের এক দুজন করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এখান থেকে চাইছি যেন ওখানে যারা ১৯ জন আছে তাদের পাঠিয়ে দেওয়ার। ’

     

     

    এই ঘটনার পর পরেই গুলশানে নিজের বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেখানে তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ওই সময় বাংলাদেশের দলের নিরাপত্তার দায়িত্বে কেউ ছিল না কেন? নাজমুল হাসান বললেন, বিদেশে কখনোই সেরকম নিরাপত্তা দেওয়া হয় না কোনো দলকে। সেটা বাংলাদেশ হোক বা যে দেশই হোক। তবে স্বীকার করলেন, এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, ‘ একটা ব্যাপার নিশ্চিত, আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। নিজেদের নূন্যতম নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। সেই গ্যারান্টি দিতে না পারলে আমরা কোনো দেশে যাব না।’