• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    ওপেনিংয়ের 'মধুর সমস্যা' এখন বাংলাদেশের 'গলার কাঁটা'

    ওপেনিংয়ের 'মধুর সমস্যা' এখন বাংলাদেশের 'গলার কাঁটা'    

    বাংলাদেশের একাদশ নিয়ে কোনো পূর্বানুমান করা এখন শ্রাবণ দিনের সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মতোই কঠিন হয়ে গেছে। তিন মাস আগেও যে সমস্যা ছিল ‘মধুর’, নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষে তা হয়ে গেছে গলার কাঁটা। সেই কাঁটা এখন এমনভাবেই বিঁধছে, বাংলাদেশের বিশ্বকাপের দল নিয়েই এখন নানা সমীকরণ মেলাতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

     

     

    সমীকরণের শুরুটাই তো মেলানো বড় এক মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ জিম্বাবুয়ে সিরিজের পরের কথা চিন্তা করুন। ইমরুল কায়েস তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের রেকর্ড তো বটেই, আরেকটু হলেই বিশ্বরেকর্ড গড়ে বসেছিলেন। তামিম ইকবাল চোটের জন্য দলে নেই, অন্য প্রান্তে লিটন দাসও এশিয়া কাপ ফাইনালের সেঞ্চুরি দিয়ে মোটামুটি জায়গা পাকা করে ফেলেছেন। সৌম্য সরকার প্রথম দুই ম্যাচে দৃশ্যপটেই নেই। তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়ে করে ফেললেন সেঞ্চুরি। তামিম এলে তাঁর ওপেনিং সঙ্গী কে হবেন, সেটা নিয়েই তুমুল আলোচনা। কায়েস তুমুল ফর্মে, লিটনের ব্যাটেও রান। আবার সৌম্যও সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন।

    সেই মধুর সমস্যা মিলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগল না। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তামিম ফিরলেন, লিটন ওপেনিংয়ে সঙ্গী হলেন তাঁর। ইমরুল তিনে নেমে গেলেন, কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর আবার বাদ। সৌম্য শেষ ম্যাচে নিচ থেকে উঠে এলেন তিনে, ম্যাচও জেতালেন তামিমের সঙ্গে। তামিম ও লিটনের পর তিনে সৌম্য-বিশ্বকাপে মোটামুটি বাংলাদেশ প্রথম তিন জনকে খুঁজে পেয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছিল।

    কিন্তু নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর এখন ওপেনিংটাই হয়ে গেছে বিষম এক সমস্যা। লিটন আশ্চর্যরকম ধারাবাহিক থেকে টানা তিন ম্যাচে ঠিক ১ রান করে আউট হয়েছেন। এশিয়া কাপের সেই সেঞ্চুরির পর ৯ ইনিংসে তাঁর ফিফটি মাত্র একটি। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডে যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্নটা আরও উচ্চকিত হয়েই উঠছে। ব্যাটিং গড় নেমে গেছে বিশেরও নিচে, এই যুগে কোনো স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানের জন্য যা রীতিমতো হাস্যকর।

    কিন্তু বিকল্পও তো নেই। তামিম নিজেই নিউজিল্যান্ডে রান পাননি। লিটনের সঙ্গে প্রায় পাল্লা দিয়ে তিন ম্যাচে করেছেন ১০ রান। সৌম্য প্রথম দুই ভালো শুরু পেয়েছেন, অন্য দুজনের চেয়ে তাঁর ব্যাটে একটু বেশি আত্মবিশ্বাসের ছাপও পাওয়া গেছে। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসে তিনিও ব্যর্থ।

    ওপেনিং নিয়ে এই সমস্যাটা আরও বেশি সামনে আসছে সাকিব আল হাসান না থাকায়। এই সিরিজে সাকিব থাকলে চার বা পাঁচে খেলতেন, সেক্ষেত্রে মিঠুন বা সাব্বিরের কাউকে বসে থাকতে হতো। কিন্তু মিঠুন প্রথম দুই ম্যাচেই পেয়েছেন ফিফটি, সাব্বির পেয়েছেন অভিষেক সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যা একটু মান রক্ষা, এই দুজনের জন্যই। নিয়তির পরিহাসই বটে, মাসখানেক আগে যে সাব্বির নিষেধাজ্ঞার জন্য জাতীয় দলের ত্রিসীমায়ও ছিলেন না, তিনিই এখন সাত নম্বরে হয়ে যাচ্ছেন অটোমেটিক চয়েস।

    সাব্বির, মিঠুন দুজনেই যদি থাকেন, তাহলে সাকিব এলে খেলবেন কোথায়? গত বছর তিনে নেমে বেশ ভালো করছিলেন, পুরনো পজিশনে ফিরলে সাকিবকে জায়গা করে দিতে সরে যেতে হয় সৌম্যকে। সেক্ষেত্রে কি তামিমের জায়গা তিনি নেবেন? আর লিটন বাদ গেলে কি আবার ইমরুলই ফিরবেন? মাহ আবারও তো সেই এশিয়া কাপের আগের ওপেনিং-সমস্যাটা রয়ে গেল!

    ব্যাটিংয়ের মতো না হলেও বোলিংয়েও তো এমন সংকট আছে। প্রথম দুই ম্যাচে সাইফ উদ্দিন বল হাতে ভালো করতে পারেননি, কিন্তু শেষ ম্যাচে ভালোই করেছেন। আবার স্যাম কারান হয়ে গিয়ে ব্যাট হাতে এমনই উজ্জ্বল, এখন দলে তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। আবার দলে যাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেই রুবেল হোসেন আজ ভালো করতে না পারলেও বড় ম্যাচে তাঁর পারফরম্যান্স পরীক্ষিত। আবার বাড়তি স্পিনার আর ব্যাটিং সামর্থ্য মিলিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজেরও দলে থাকার কথা। এই তিন জন থেকে দুজনকে বেছে নেওয়াও এখন সহজ কাজ নয়।

     মাশরাফি বিন মুর্তজা বার বারই বলেছেন, বিশ্বকাপের দলে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। তবে বাংলাদেশ দলে ফর্মের যেমন জোয়ার-ভাটা, তাতে সামনের দুই মাসে কী হয় সেই অনুমান করা দুঃসাধ্যই।