শর্ট বলের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে শুধু তামিম
হয়তো আরেকটু পর ব্যাপারটা এমন দাঁড়াতো- নেইল ওয়াগনারকে সরিয়ে বোলিং মেশিনে ‘শর্ট’ লেংথ সেট করে দিলেও সেসব খেলতে গিয়ে আউট হবেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। হ্যামিল্টনে এই শর্ট বলেই আউট হলেন আটজন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান। শর্ট বলে হারিয়ে গেল তামিম ইকবালের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি, সেডন পার্কের ফ্ল্যাট উইকেটে ব্যাটিংয়ে বড় স্কোরের দারুণ সম্ভাবনা।
২ উইকেটে ১২২ রানে লাঞ্চে যাওয়া বাংলাদেশ চা-বিরতির পর গুটিয়ে গেছে ২৩৪ রানে, ওয়াগনারের ৪৭ রানে ৫ উইকেটে। এরপর বাংলাদেশের শুরুতে ব্রেকথ্রুর দারুণ সম্ভাবনা ভেস্তে গেছে অভিষিক্ত এবাদত হোসেনের বলে টম ল্যাথামের ক্যাচ দ্বিতীয় স্লিপে সৌম্য সরকার ছেড়ে দেওয়ায়। রাভাল ফিফটি পেয়েছেন, ল্যাথামের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি অবিচ্ছিন্ন ৮৬ রানে। দিনশেষে নিউজিল্যান্ড পিছিয়ে ১৪৮ রানে।
অথচ গল্পটা হতে পারতো তামিম ইকবালের অসাধারণ এক সেঞ্চুরির। যে সেঞ্চুরিতে ছিল আগ্রাসী সৌন্দর্য, যে ইনিংসে একসময় মনে হচ্ছিল কাভার ড্রাইভের চেয়ে সহজ কাজ পৃথিবীতে আর কিছু নেই। যে ইনিংসে তামিম অফসাইডে থার্ডম্যান থেকে এক্সট্রা কাভারের বৃত্তচাপটাকে বানিয়েছিলেন নিজের সম্পত্তি। তামিমে হারিয়ে যাচ্ছিল ‘থান্ডার’বোল্ট, সাউদির কারুকার্য।
হ্যামিল্টনের উইকেট বোলারদের জন্য শুরুতে কিছু রেখেছিল বলেই ধারণা করেছিলেন দুই অধিনায়ই। টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন উইলিয়ামসন, শুরুতে কিছু মুভমেন্ট পেয়েছেন বোল্টরা, তবে তামিম শীঘ্রই চড়াও হয়েছেন তাদের ওপর।
প্রথমে অফস্টাম্প লাইন তাক করছিলেন বোল্ট, খুঁজছিলেন তামিমের আউটসাইড-এজ। সেটা পাননি, তামিম দারুণ সব ড্রাইভে উলটো ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন তাকে। অফস্টাম্পের বাইরের বলে যেচে গিয়ে খেলতে তামিম যেমন ভয় পাননি, বোল্টের অফস্টাম্পের ওপরের বলও খেলেছেন দারুণ আধিপত্যে। ওয়ানডেতে এরকম বলে দুইবার আউট হয়েছিলেন তামিম, সেখানকার পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বোল্টকেই উলটো দিয়েছেন শিক্ষা।
আর সাউদির ওপর দিয়ে তো বয়ে গেছে ঝড়ই। ওভার দ্য উইকেট থেকে দুই বাঁহাতিকে করা বোলিংয়ে যুতসই লাইনটা খুঁজে পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। হুট করে ভেতরের দিকে ঢোকা বলও ছিল না। তামিমের সঙ্গে আক্রমণাত্মক ছিলেন সাদমানও। পরে এসে কলিন ডি গ্রান্ডহোমও প্রথমে ঠিক করে উঠতে পারেননি লাইন।
তামিম বোল্টকে টানা তিন চারে ফিফটি পূরণ করেছেন ৩৭ বলে। একসময় লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগালেও সেটা পূরণ করেছেন বিরতির পর নেইল ওয়াগনারের বলে পুল করে চার মেরে, ১০০ বলে। ৬৫ রানে তার ফিরতি ক্যাচ ফেলেছিলেন ডি গ্র্যান্ডহোম, অবশ্য সেঞ্চুরির পর একটু তাড়াহুড়ো করা তামিম ওই ডি গ্র্যান্ডহোমের ‘লং-হপ’ ধরনের বলে তুলে মারতে গিয়েই গালিতে ধরা পড়েছেন ১২৮ বলে ১২৬ রান করে।
এর আগে তামিমকে ৫৭ ও ৬৪ রানের জুটিতে যথাক্রমে সঙ্গ দিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক। বোল্টের ফুললেংথের মুভ করা বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন সাদমান, আর লাঞ্চের আগের ওভারে ক্রমাগত শর্ট বল করে যাওয়া ওয়াগনারকে উইকেট দিয়েছেন মুমিনুল, রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা শর্ট বলে ঠিক সময়ে ব্যাট সরাতে না পেরে।
যখন বোল্ট তামিমকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না, সাউদি হারিয়ে খুঁজছিলেন নিজেকে, ডি গ্র্যান্ডহোম ছিলেন বড় বেশি নির্বিষ, স্পিনার টড অ্যাস্টল দৃশ্যপটেই নেই- ওয়াগনার তখনই শুরু করলেন শর্ট বল মন্ত্র। যাতে উজ্জীবিত হলেন বাকি বোলাররা, আর একের পর এক ঝড়ে পড়লো উইকেট।
মুমিনুল থেকে আবু জায়েদ, মিঠুন থেকে মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ থেকে সৌম্য বা লিটন- সবাই শিকার শর্ট বলের। কেউ পুল করতে গেছেন, কেউ ব্যাট চালিয়েছেন শুধু, কেউ বলের লাইন থেকে সরে যেতে পারেননি, কেউবা খেলবেন না ছাড়বেন- ঠিক করতে পারেননি সেটাই।
ওয়াগনার পেয়েছেন তার পরিশ্রমী বোলিংয়ের পুরস্কার। তামিমের সঙ্গে দিনের সেরা পারফর্মার তিনিও। তবে, ওয়াগনার যখন উজ্জ্বল, তামিমের ইনিংস হয়ে রইল শর্ট বলের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও স্তম্ভের মতো।