'অন্যরকম' দিনে নিউজিল্যান্ডের রান-মেশিনে পিষ্ট বাংলাদেশ
হ্যামিল্টন টেস্ট
২য় দিন, স্টাম্পস
বাংলাদেশ ২৩৪ ও নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস ৪৫১/৪* (ল্যাথাম ১৬১, রাভাল ১৩২, উইলিয়ামসন ৯৩*, সৌম্য ২/৫৭)
নিউজিল্যান্ড ২১৭ রানে এগিয়ে
জিট রাভাল পেলেন তৃষিত প্রথম সেঞ্চুরি, টম ল্যাথাম খেললেন বড় ইনিংস। কেন উইলিয়ামসন করলেন রান, দ্রুত ফিফটি করে ফিরে গেলেন হেনরি নিকোলস। যে ৪ উইকেট বাংলাদেশ নিতে পারলো- তার তিনটিই দুই ‘পার্টটাইমার’-এর। হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় দিন ছিল 'অন্যরকম' ঘটনাবহুল, তবে সেখানে নিউজিল্যান্ডের রানমেশিনে শুধু পিষ্টই হলো বাংলাদেশ। দিনশেষে ২১৭ রানে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড, অধিনায়ক উইলিয়ামসন অপরাজিত সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে।
অপেক্ষাকৃত ভাল সেশনটা বাংলাদেশ কাটিয়েছে শেষে এসেই। টম ল্যাথাম ফিরেছেন সৌম্যর বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে, ওয়াইল্ড স্লিপে মিঠুনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে। সৌম্যই আগেরদিন শুন্যতে ছেড়েছিলেন ল্যাথামের ক্যাচ। সেটার দায়মোচন হলো বটে, তবে মাশুল গুণতে হলো ১৬১ রানের! সৌম্য এরপর ফেরালেন রস টেইলরকেও, মাত্র ৪ রানেই। আর শেষে এসে, ৩০তম ওভারের শেষ বলে, ১৪৯ রান খরচ করার পর হাসলেন মিরাজ। তার ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা পড়তে ভুল করে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হলেন হেনরি নিকোলস, তার আগেই ৭ চারে ৫৩ রান করেছেন তিনি। নিউজিল্যান্ড এরপর পাঠিয়েছে নাইটওয়াচম্যান নেইল ওয়াগনারকে।
ল্যাথামকে সঙ্গে নিয়ে সেশন শুরু করা উইলিয়ামসন এর আগে খেলেছেন সহজাত এক ইনিংস- তিনি রান করে যাচ্ছেন, সেটা যেন বুঝাই গেল না! ৩০তম ফিফটি পেরিয়েছেন, তাকে হাতছানি দিচ্ছে ২০তম সেঞ্চুরি। উইকেটের চারপাশেই খেলেছেন, তবে অফসাইডে থার্ডম্যান থেকে কাভার আর অনসাইডে ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারের বৃত্তচাপে এসেছে তার বেশিরভাগ রান। আর প্রথম দুই সেশনের বেশিরভাগ সময় শুধু উইকেটের জন্য হাপিত্যেশই করেছে বাংলাদেশ। ফিল্ড সেটিংয়ে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, আবার সৌম্যকে দিয়েই করিয়েছেন ১৯ ওভার!
আগেরদিন যে ইঙ্গিতটা পাওয়া গিয়েছিল, হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় দিন সব মিলিয়ে সত্যি হলো সেটাই- এ উইকেটে রান করা খুব একটা কঠিন কিছু নয়, আর পেসারদের এখানে সফল হতে লাগবে ওয়াগনারের ‘শর্ট-বল’-এর মতো বাড়তি কিছু। স্পিনারদের জন্যও এখানে নেই তেমন কিছু, উইকেট পাওয়ার চেয়ে রান আটকানোর দিকে মনযোগ দিলেই ভাল (মিরাজ যেটা সব মিলিয়ে করতে পারেননি)। এদিন সকালে মেঘ ছিল, তবে সুইংয়ের দেখা পাননি বাংলাদেশ পেসাররা। আবু জায়েদ শর্ট বলে একটু চাপ তৈরি করেছিলেন, তবে রাভালরা সেটা সামলেছেন অনায়াসেই। বরং শর্ট বা ওয়াইড যেসবই নাগালে পেয়েছেন, সেগুলোর ব্যবহার করেছেন পূর্ণাঙ্গভাবেই। বাংলাদেশ পেসারদের শর্ট বলের গতিহীনতা তাদেরকে হয়ে উঠতে দেয়নি তেমন ভয়ঙ্কর।
রাভাল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন এবাদতকে পুল করে চার মেরে। এর আগে সাতটি ফিফটি ছিল তার, ৭৪ থেকে ৮৮-এর মাঝেই আটকে গিয়েছিলেন চারবার। আজ দূর করলেন সেই আক্ষেপ। সেঞ্চুরির পরপরই তার বিরুদ্ধে রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ, তবে মেহেদি মিরাজের বলটার ইমপ্যাক্ট ছিল বাইরে। এরপর মাহমুদউল্লাহর প্রথম ওভারেই তার টসড-আপ ডেলিভারিতে রাভালের সুইপ হয়েছে লিডিং-এজ, তিনি ফিরেছেন ১৩২ রান করে। তার আগেই দুজনের জুটিতে উঠেছে ২৫৪ রান, বাংলাদেশের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।
আর ল্যাথাম ছিলেন হ্যামিল্টনের এ কন্ডিশনের যেন পূর্ণ সুবিধাগ্রহণকারি। ৯৮ বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি, খালেদকে স্ল্যাশ করে চার মেরে। হুট করে যেমন চার মেরেছেন টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ( বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে দুইয়ের বেশি ফিল্ডার ছিল বলে সেটা ছিল নো-বল), তেমনি মিরাজকে মেরেছেন তিন ছয়। ক্যারিয়ারে ৯ম সেঞ্চুরিটাকে নিয়ে গেছেন ১৬১ পর্যন্ত, মেরেছেন ১৭টি চার।