• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    উইলিয়ামসনের ডাবলের দিনে বাংলাদেশের সামনে শুধুই পাহাড়

    উইলিয়ামসনের ডাবলের দিনে বাংলাদেশের সামনে শুধুই পাহাড়    

    হ্যামিল্টন টেস্ট
    ৩য় দিন, স্টাম্পস 
    বাংলাদেশ ২৩৪ ও ২য় ইনিংস ১৭৪/৪* (তামিম ৭৪, সৌম্য ৩৯*, বোল্ট ২/৫৩) এবং  নিউজিল্যান্ড ৭১৫/৬ ডিক্লে. (উইলিয়ামসন ২০০*,ল্যাথাম ১৬১, রাভাল ১৩২; সৌম্য ২/৬৮, মিরাজ ২/২৪৬)


    এইরকম বড় লিড সামনে থাকলে সেটাকেই বলতে হয়, ‘টপকাতে হবে পাহাড়’। ৪৮১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশের সামনে সে পাহাড়টা এখনও দাঁড়িয়ে, উচ্চতা একটু কমে নেমে এসেছে ৩০৭ রানে। দিনের শেষভাগটা কাটিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য, তবে হ্যামিল্টনে ইনিংস ব্যবধানে হার আটকাতে তাদের করতে হবে দারুণ কিছুই! এদিন যেমন দারুণ এক ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন কেন উইলিয়ামসন, শুরুতে নেইল ওয়াগনারের পর শেষে দারুণ এক ঝড় তুললেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম!   

    নিউজিল্যান্ড ইনিংস ঘোষণার পর চা-বিরতির আগে ঘন্টাখানেক ছিল, নিউজিল্যান্ডের লিডের পাহাড় টপকাতে সেটা ছিল প্রথম ধাপ। তামিম ও সাদমান সেটা করেছিলেন প্রথম ইনিংসের মতো করেই, ১১ ওভারেই উঠেছিল ৫৬ রান। চা-বিরতির পর টানা ৭ ওভার বোলিং করেছিলেন নেইল ওয়াগনার, করে গেছেন ক্রমাগত শর্ট বল। তামিমের মতো সাদমানও সেসব ভালই সামলেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শর্ট বলেই শেষটা হয়েছে সাদমানের, পুল করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন, ডিপ-স্কয়ার থেকে ছুটে এসে ভাল ক্যাচ নিয়েছেন বোল্ট। মুমিনুল বোল্টকে ফ্লিক করে দুই চার মারলেও শর্ট অফ লেংথের বলে ব্যাট চালিয়ে ধরা পড়েছেন স্লিপে। মিঠুন বোল্টকে ড্রাইভ করেছিলেন এমন বলে, যেটা ছিল না ড্রাইভিং লেংথে, তিনি ধরা পড়েছেন গালিতে। 

    তামিম শর্ট বলকে নিয়েছিলেন ব্যক্তিগতভাবে, ওয়াগনারের বিপক্ষে লেগস্টাম্পের বাইরে স্ট্যান্স নিয়ে কৌশলও বদলেছিলেন। তার আগে আগের ইনিংসের মতোই আক্রমণাত্মক ছিলেন, ফিফটি ছুঁয়েছেন ৬৪ বলে। তবে তার শেষটা হয়েছে অদ্ভুতভাবে। সাউদির শর্ট বল ডাক করতে তামিম প্রথমে সরে গিয়ে শুয়েই পড়েছিলেন, তবে উঁচুতে থাকা ব্যাটের পিঠে লেগে বল উঠেছিল খাড়া। বাংলাদেশের অবস্থা হতে পারতো আরও বাজে, তবে মাহমুদউল্লাহ বেঁচে গেছেন অদ্ভুতভাবে। স্নিকোতে স্পাইক দেখা দিলেও বল পেরিয়ে গিয়েছিল ব্যাট, নিউজিল্যান্ডের রিভিউটা তাই বিফলে গেছে। 

    এদিন শুরুতে বাংলাদেশের বিফলে গেছে আগেরদিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে পাঠানো ওয়াগনারের বিরুদ্ধে শর্ট বলের পরিকল্পনা। আজ সকালে তিনি যা করলেন- সেটা নাইটওয়াচম্যানের দায়িত্বের চেয়েও বেশি কিছু। ৩৫ বলে ৪৭ রানের ঝড় শুধু তুললেন না, খালেদ-এবাদতের শর্ট বল তত্ত্বকে দেখালেন বুড়ো আঙুল। খালেদকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করলেও দেখার মতো বিষয় ছিল শর্ট বলে তার আধিপত্য (হ্যাঁ, ব্যাটিংয়েও)- খালেদকে পুল করে মেরেছেন তিন ছয়, এবাদতকে এক ওভারেই মেরেছেন তিন চার। তার প্রথম টেস্ট উইকেটে পরিণত হয়েছেন অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে এজড হয়ে। 

    ওয়াগনারের সঙ্গে এদিন ৫৭ রানের জুটিতে উইলিয়ামসনের অবদান ছিল ১১। প্রথম ৫৯ মিনিটে বাউন্ডারি মারেননি একটিও, তবে ওয়াগনারের উইকেটের পর এবাদতকে তিন চারে শুরু করেছেন শট খেলা- যার একটি ছিল ফ্লিক, আরেকটি দারুণ পাঞ্চ। তার আগেই খালেদের বলে সিঙ্গেল নিয়ে পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের ২০তম সেঞ্চুরি, ১৪২ বলে। পরের ফিফটি তিনি ছুঁয়েছেন মাত্র ৫৯ বলে, সে মাইলফলকে যাওয়ার পথেই ছুঁয়েছেন আরেকটি- চতুর্থ নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান হিসেবে পূর্ণ করেছেন ছয় হাজার রান। উইলিয়ামসন পরে সেডন পার্কে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন দ্বিতীয় সেশনের ড্রিংকসের আগে শেষ বলে, আবু জায়েদকে পুল করে চার মেরে। এরপরই ইনিংস ঘোষণা করেছিল নিউজিল্যান্ড। 

    তবে তার আগেই প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ৭০০ পেরিয়ে যাওয়ার মূল কৃতিত্ব কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের সেই ঝড়ো ইনিংসের। লাঞ্চের পর প্রথম বাউন্ডারি মেরেছিলেন উইলিয়ামসনই, এরপর খালেদ ও মিরাজকে দুই ছয় দিয়ে ঝড়টা শুরু করেছিলেন ডি গ্র্যান্ডহোম। ৩৯ রানে তাকে জীবন দিয়েছিলেন লং-অফে দাঁড়ানো মিঠুন, আগেরদিন স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেওয়া তিনি ফেলেছেন সহজ ক্যাচ। ৩৮ বলে ডি গ্র্যান্ডহোম ছুঁয়েছেন ফিফটি, ৫৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে মোট ছয় মেরেছেন ৫টি, যার তিনটিই মিরাজকে। 

    মিরাজ এদিন গড়েছেন বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সবচেয়ে খরুচে রানের রেকর্ড, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত বছর তাইজুল ইসলামের দেওয়া ২১৯ রানকে ছাড়িয়ে তিনি গুণেছেন ২৪৬ রান। অবশ্য মিরাজের যা একটু সান্ত্বনা ২টি উইকেট, যার একটি পেয়েছেন এদিন লাঞ্চের ঠিক আগে- লেগসাইড দিয়ে তার বেরিয়ে যাওয়া বলে ফ্লিক করতে গিয়ে এজড হওয়া ওয়াটলিং পরিণত হয়েছিলেন লিটনের ভাল ক্যাচে।