ভীষণ রাগে যুদ্ধটাই শুধু করলেন মাহমুদউল্লাহ-সৌম্য
হ্যামিল্টন টেস্ট
বাংলাদেশ ২৩৪ ও ২য় ইনিংস ৪২৯ (সৌম্য ১৪৯, মাহমুদউল্লাহ ১৪৬, তামিম ৭৪, বোল্ট ৫/১২৩) এবং নিউজিল্যান্ড ৭১৫/৬ ডিক্লে. (উইলিয়ামসন ২০০*,ল্যাথাম ১৬১, রাভাল ১৩২; সৌম্য ২/৬৮, মিরাজ ২/২৪৬)
নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ৫২ রানে জয়ী
খুলনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ম্যাচের তৃতীয় ও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে যে লিডের বোঝা নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ, হ্যামিল্টনে সে বোঝাটা ছিল তার চেয়েও ১৮৫ রান বেশি। খুলনা ছিল নিজেদের কন্ডিশন, হ্যামিল্টনে ছিল শর্ট বলের গোলা। সেসব গোলা সামলে, লিডের বিশাল বোঝা মাথায় নিয়ে ভীষণ রাগে যুদ্ধটা করলেন মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকার- নিজেদের ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে। হ্যামিল্টন উথাল-পাথাল হলো কিনা, সে প্রশ্নটা থেকে যায়। খুলনার মতো ড্র দূরের কথা, ইনিংস পরাজয়ও আটকালো না এখানে। তবে রেকর্ড বইয়ে খুলনার পরই থাকলো হ্যামিল্টন- বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার দ্বিতীয় ইনিংসে দুজন সেঞ্চুরি করলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর হলো। তবে ট্রেন্ট বোল্টের পাঁচ উইকেট যুদ্ধে জিততে দিল না তাদের, প্রথম টেস্ট ইনিংস ও ৫২ রানে জিতে ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।
দিনের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলেই বারুদগন্ধে মাতাল কুঁড়িটা ফুটিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ- ওয়াগনারের বুকসমান বাউন্সারে পুল করে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে। মাহমুদউল্লাহর সেই শটই যেন নতুন করে উথাল-পাথাল করে তুললো সৌম্যকেও, বোল্টের পরের ওভারে চারের পর হুক করে ছয় মারলেন তিনি, যেটি আনলো তার ফিফটিও। এরপর এক ঘন্টা দুজন মিলে ব্যাটিং করলেন র্যাপিড ফায়ার গতিতে। বোল্ট ও ওয়াগনার দুজনই দিনের প্রথম স্পেলে রান গুণেছেন পাঁচের ওপর করে, প্রথমজন ৬ ওভারে ৩১, দ্বিতীয়জন ৭ ওভারে ৩৭। দারুণ হিটিংয়ে চতুর্থ দিন প্রথম সেশনটা ছিল হ্যামিল্টনে বাংলাদেশের জন্য সেরা। শেষের ভাগে একটু ধীরলয়ে চললেও সব মিলিয়ে ২৯ ওভারে উঠেছে ১৩৬ রান, ৪.৬৯ হারে। মোট ২১টি বাউন্ডারি হয়েছে, যার ৫টি ছয়।
সৌম্য ফিফটি ছুঁয়েছিলেন ৬০ বলে, পরের ফিফটিতে গেলেন মাত্র ৩৪ বলে। ওয়াগনারকে পুল করে ছয় মেরে আশিতে গেছেন, লং-লেগে বোল্ট লাফিয়ে উঠেছিলেন সেটা ধরতে, প্রথম সেশনে সৌম্যকে আউট করার সবচেয়ে কাছে এখানেই যেতে পেরেছিল নিউজিল্যান্ড। টড অ্যাস্টলকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছয় মেরে প্রথমবারের মতো গেছেন নব্বইয়ে, এরপর মিড-অফে দারুণ ড্রাইভে চারের পর সাউদির বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন তিনি, ভাগ বসিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির তামিম ইকবালের লর্ডসে ২০১০ সালে গড়া রেকর্ডে। সৌম্য এরপর গিয়েছিলেন ‘ড্যাডি সেঞ্চুরির’ খুব কাছে, সাউদিকে টানা তিন চারে ১৪৯ রানে পৌঁছালেও বোল্টের ইনসুইংয়ে আলগা শট খেলতে গিয়ে মিস করে হয়েছেন বোল্ড।
কম যাননি মাহমুদউল্লাহও, দুজনের মধ্যে শট-নির্বাচনে বেশি দৃঢ় ছিলেন তিনিই। টড অ্যাস্টলকে ছয় মেরে পূর্ণ করেছেন ফিফটি, ৯৪ বলে। সে ছয় দিয়ে লিডটাও ২০০-এর নিচে নামিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারে ডি গ্র্যান্ডহোমকে দুই চারে মাহমুদউল্লাহ ধরে রেখেছিলেন আগের মুডটাই, এরপর সৌম্য ফিরলেও তিনি টলেননি সহজেই। ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন সাউদিকে টানা দুই চারে, ১৮৩ বলে।
বোল্টের অফস্টাম্পের বাইরের বল এরপর আলগা শটে স্টাম্পে ডেকে এনেছেন লিটন, ওয়াগনারের শর্ট বলে হুক করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ধরা পড়েছেন মিরাজ। দুজনের বাজে শটও অবশ্য চিড় ধরাতে পারেনি তখন মাহমুদউল্লাহর মনযোগে, খেলে গেছেন শট। আবু জায়েদ ৩৩ রানের জুটিতে অবদান রেখেছিলেন ৩ রান করে, তবে বোল্টের বলে বোল্ড হওয়াটা যেন ছিল সময়ের অপেক্ষা। এ উইকেট দিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয়েছে তার।
মাহমুদউল্লাহ এরপর ছাড়িয়ে গেছেন নিজের আগের সর্বোচ্চ স্কোর ১৩৬-কে। টিকলেন চা-বিরতি পর্যন্ত। তবে সৌম্যর মতো তারও ড্যাডি সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না, সাউদিকে স্ল্যাশ করতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে ধরা পড়লেন ১৪৬ রান করে। দুই বল পর এবাদত কট-বিহাইন্ড হলে হ্যামিল্টনে যুদ্ধটা শেষ হলো বাংলাদেশের।
চতুর্থ দিন সকালে ভীষণ রাগে যেটা শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকার।