স্বপ্ন-বাস্তবতা-স্বপ্নের স্যান্ডউইচের দিন
২য় টেস্ট, ওয়েলিংটন
তৃতীয় দিন, স্টাম্পস
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২১১ (তামিম ৭৪, লিটন ৩৩, ওয়াগনার ৪/২৮, বোল্ট ৩/৩৮)
পুরো দিনের আপডেট
স্বপ্ন। বাস্তবতা। স্বপ্ন।
শুরুতে স্বপ্নের পাখায় ভর দিয়ে ওড়া। এরপর বাস্তবতার কষাঘাতে মুখ থুবড়ে পড়া। ওয়েলিংটনে ক্রিকেটীয় প্রথম দিন ও খাতা-কলমের তৃতীয় দিনটা বাংলাদেশের জন্য ছিল স্বপ্ন-বাস্তবতার এক মিশেল।
টসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবুজাভ উইকেট হলে কথা ছিল তবুও, এটা এমনই সবুজ যে পপিং ক্রিজ আর রিটার্ন ক্রিজের সাদা দাগ না থাকলে তাকে মাঠ থেকে আলাদা করাই কঠিন। কেন উইলিয়ামসনও বোধহয় নার্ভাস হয়ে পড়লেন মুদ্রা নিক্ষেপের সময়, টসে হারলে কী হবে ভেবে! মুদ্রাটা গিয়ে পড়লো বেশ দূরে। ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন বাড়তি কিছুদূর গিয়ে ফল জানালেন, ওপাশে শুষ্ক হাসি মাহমুদউল্লাহর। উইলিয়ামসনের সিদ্ধান্তটা অনুমিত নয়, যেন ছিল অবধারিতই। মাহমুদউল্লাহও হাসিমুখে জানালেন, তার সিদ্ধান্তটাও হতো তেমনই।
‘সবুজ দানব’, সামনে ট্রেন্ট বোল্ট। সঙ্গে টিম সাউদি। বেসিন রিজার্ভে বাংলাদেশ যেন হাজির সিলেবাসের ভেতর-বাহিরের অনেক প্রশ্নের কঠিন এক পরীক্ষা দিতে। তবে দ্বিতীয় বলে দারুণ ড্রাইভে চার মেরে তামিম ইঙ্গিত দিলেন ভিন্ন কিছুর। এরপর বেশ খানিকটা সময় সে ইঙ্গিতটা স্পষ্ট হলো ধীরে ধীরে। বোল্ট প্রথম ৫ ওভারে গুণলেন ৩০ রান, সাউদিও ঠিক খুঁজে পেলেন না লাইন-লেংথ। দুজনের প্রথম ১০ ওভারে এলো ৮টি বাউন্ডারি।
তামিম যেদিন ছন্দে থাকেন, শটগুলোকে যেন বাঁধাই করে না রাখলে ঠিক সেসবের মর্যাদা দেওয়া হয় না! তামিম আজ ছন্দে ছিলেন। নিজের সীমায় যেসব বলই পেয়েছেন, সেগুলোকে শাস্তি দিয়েছেন চরম ব্যাটিং সৌন্দর্যে। তামিমকে দেখেই কিনা উজ্জীবিত হলেন সাদমানও, সহজে তিনিও দিতে চাইলেন না উইকেট। দুজনের জুটি ফিফটি পেরুলো, তৃতীয় ওপেনিং জুটি হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে এ কীর্তি ছুঁলেন তারা, ইমরুল-তামিম ও তামিম-সৌম্যর পর। ২০০০ সালের পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওপেনিং জুটি হিসেবেও এ কীর্তি হলো তাদের।
ডি গ্র্যান্ডহোম ব্রেকথ্রু দিলেন, তবে তামিম পেরিয়ে গেলেন ফিফটি। টানা তিন ফিফটি বা এর বেশি রানের ইনিংস হলো তার এ নিয়ে তৃতীয়বার। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়ার আগে তামিম এমন ‘ধারাবাহিক’ ছিলেন ২০১০ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। দেশে ও তাদের মাটিতে যে দুইটি সিরিজ তামিমকে চিনিয়েছিল আলাদা করে। যে ‘যাত্রা’য় তামিম খেলেছিলেন লর্ডস ও ওল্ড-ট্রাফোর্ডের ‘বিখ্যাত’ দুই ইনিংস।
তামিম লর্ডসে প্রায় বলে-কয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন, তবে কন্ডিশন বিবেচনায় তিনি অবশ্য এগিয়ে রাখেন ওল্ড-ট্রাফোর্ডের ইনিংসটিই। যেদিন কন্ডিশন ছিল বিরুদ্ধে, যেদিন তামিম শাসন করেছিলেন জিমি অ্যান্ডারসনদের। ওয়েলিংটনের ইনিংস এগুচ্ছিল তামিমের ব্যক্তিগত খেরোখাতার সে কলামের দিকেই। তামিম ছুটছিলেন স্বপ্নযাত্রায়। যেটা থমকে গেল নেইল ওয়াগনারের শর্ট-বল বাস্তবতায়।
উইলিয়ামসন সবার শেষে এনেছিলেন ওয়াগনারকে, এ সিরিজের তার সবচেয়ে বড় অস্ত্রকে। তার শর্ট বল আর তাতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ধরা দেওয়া- চাঁদ, তারা, সূর্য অথবা ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ফুটবল বা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার হয়ে শিরোপা না জেতার মতোই যেন বাস্তব এখন। মুমিনুল, মিঠুন সেটাতেই ধরা পড়েছেন।
তামিমও পড়লেন। হাঁটু তুলে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়েছিলেন, বাউন্সটা বুঝলেন না ঠিক। তাকে ফিরতে হলো ওয়াগনারের বুনো উল্লাসের মাঝে। বাংলাদেশের স্বপ্নের শুরুটা এরপর মিলিয়ে যেতে লাগলো, ফিরে এলো চরম বাস্তবতা। ১১৯ রানে ১ উইকেট থেকে ২১১ রানে অল-আউট, স্কোরকার্ড স্বপ্নের মৃত্যুর চরম সাক্ষ্য দেবে!
তামিমে ভর করে যে স্বপ্নটা শুরু হয়েছিল, শর্ট বলের বাস্তবতায় যেটা থমকে গিয়েছিল, সেটাই যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরিয়ে আনলেন আবু জায়েদ ও এবাদত হোসেন। সকালে যে লাইন-লেংথ খুঁজে পাননি বোল্ট-সাউদি বা হেনরিরা, বাংলাদেশী দুই পেসার খুঁজে পেলেন সেটাই। ‘অনিশ্চয়তার করিডোর’-এ হাবুডুবু খেলেন জিট রাভাল ও টম ল্যাথাম। রাভাল দারুণ কিছু লিভ করলেন, ল্যাথামও কামড়ে পড়ে থাকলেন। এরপর ধরা পড়লেন দুজনই।
৮.৩ ওভার। নিউজিল্যান্ডের রান ৮। নেই ২ উইকেট। স্বপ্ন! রস টেইলর আর কেন উইলিয়ামসন বাংলাদেশকে আবার বাস্তবতার বুড়ো আঙুল দেখানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তবে স্বপ্নের রেশটা তো রয়ে গেছে!
এরপর বাগড়া বাঁধালো বৃষ্টি। ওয়েলিংটন টেস্ট থাকলো দারুণ এক অবস্থায়! ব্যাটিংয়ে স্বপ্নালু শুরু মিলিয়ে গেছে, পরে বোলাররা নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশকে।
চতুর্থ দিনটা যাবে কেমন? স্বপ্নের পাখায় উড়বে, নাকি বাস্তবতার কষাঘাতে মুখ থুবড়ে পড়বে?