মোহালিকে স্তব্ধ করে দিলেন খাওয়াজা-হ্যান্ডসকম্ব-টার্নার
স্কোর
ভারত ৫০ ওভারে ৩৫৮/৯ (ধাওয়ান ১৪৩, রোহিত ৯৫; কামিন্স ৫/৭০, রিচার্ডসন ৩/৮৫)
অস্ট্রেলিয়া ৪৭.৫ ওভারে ৩৫৯/৬ (হ্যান্ডসকম্ব ১১৭, খাওয়াজা ৯১, টার্নার ৮৪*; বুমরা ৩/৬৩)
ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে জয়ী
২০১৩ সালের সেই জেমস ফকনার যেন ফিরলেন অ্যাশটন টার্নারের হাত ধরে। মোহালির মাঠে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডটি দুর্দান্তই বলতে হবে, ছয়টি ম্যাচের হেরেছিল মাত্র একটিতে। তবে আজকের কাজটি ছিল কঠিনের চেয়েও একটু বেশি। ৩৫৯ রানের লক্ষ্য, ভারতের বিপক্ষেই এত বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কারও। সেই পাহাড়টাই অস্ট্রেলিয়া টপকে গেল ১৩ বল হাতে রেখে! উসমান খাওয়াজা ও পিটার হ্যান্ডসকম্ব যে ভিতটা এনে দিয়েছিলেন, তারই ওপর দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেছেন তরুণ টার্নার। অথচ মার্কাস স্টোইনিস চোট না পেলে এই ম্যাচ হয়তো খেলাই হতো না তাঁর! ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ তো বটেই, ক্রিকেট ইতিহাসেই এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে মাত্র চারটি। এই জয়ে ২-২ ব্যবধানে সিরিজে সমতাও ফেরাল অস্ট্রেলিয়া।
ক্রিকেটেই বোধ হয় এমন চিত্রনাট্য লেখা সম্ভব। ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই অ্যারন ফিঞ্চকে হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। স্কোরকার্ডে তখন উঠেছে ৩ রান, ফিঞ্চ কোনো রানই করতে পারেননি। খানিক পর বুমরাহর ইয়র্কারে ফিরে যান শন মার্শ, স্কোরকার্ডে তখন ১২ রান। ৩০০ রানও তখন অনেক দূরের পথ। খাওয়াজা ও হ্যান্ডসকম্ব শুরুতে ধীরে চলো নীতিতেই এগুলেন। প্রথম ১০ ওভারে উঠল ৪৭ রান, ১০০ রান এলো ১৮.১ ওভারে।
খাওয়াজাই বেশি আগ্রাসী ছিলেন, ফিফটি পেয়েছিলেন ৫২ বল। এরপর হ্যান্ডসকম্বও হাত খুলে খেলতে শুরু করেন, ৫৫ বলে পেয়ে যান ফিফটি। ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি রান আসতে থাকে, রানের পাহাড়ও একটু একটু করে ছোট হতে শুরু করে। এর মধ্যে দুজনে পেতে শুরু করেছেন সেঞ্চুরির সুবাস। কিন্তু খাওয়াজা ৯১ রান করে আউট হয়ে যান বুমরাহর বলে।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রথম বলেই চার মেরে বুঝিয়ে দিলেন, দশের কাছাকাছি চলে যেতে থাকা আক্সিং রেটটা নামিয়ে আনবেন বলেই ঠিক করেছেন। আরও একটি ছয় ও চারও মারলেন, ১৩ বলে করে ফেললেন ২৩ রান। কিন্তু কুলদীপের বলে হলেন এলবিডব্লু। ওদিকে হ্যান্ডসকম্ব পেয়ে গেছেন ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। কিন্তু টিকলেন না বেশিক্ষণ, ১০৫ বলে ১১৭ রান করে আউট হয়ে গেলেন। জয় থেকে তখনো ৮৮ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া, ক্রিজে তরুণ অ্যালেক্স ক্যারি আর টার্নার।
কিন্তু সেখান থেকেই টার্নার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের। উইকেটের চার পাশে খেলতে শুরু করেছেন অবিশ্বাস্য সব শট। এর মধ্যে একটি স্টাম্পিং ও দুইটি ক্যাচ মিস করে ভারতও তাঁর কাজটা সহজ করে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪৩ বলে ৮৪ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে মোহালিকে স্তব্ধ করে দিলেন আরও ১৩ বল আগেই।
তার আগে শেষে আরও রান বেশি হলো না কেন সেটা নিয়ে ভারত আফসোস করতেই পারে। শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা যেভাবে শুরু করেছিলেন, ভারতের স্কোরটা ৪০০ হয়ে যেতে পারে বলেও মনে হচ্ছিল। দুজন ৩১ ওভারেই এনে দিয়েছিলেন ১৯৩ রানের জুটি। রোহিত সেঞ্চুরি পেতে পেতেও পেলেন না, ৯৫ রান করে আউট হয়ে গেলেন রিচার্ডসনের বলে। ধাওয়ান সেঞ্চুরি পেলেন ঠিকই, এই সিরিজে রান না পাওয়ায় তাঁর উদযাপনে আনন্দের চেয়েও বেশি থাকল স্বস্তি।
ধাওয়ান ১৫০ পেয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল, সেঞ্চুরির পর হয়ে উঠেছিলেন আরও খুনে। শেষ পর্যন্ত ১১৫ বলে ১৪৩ রান করে থামলেন। কোহলি আজ কিছু করতে পারেননি, লোকেশ রাহুলও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। ঋশভ পান্ট ২৪ বলে করেছেন ৩৬, আর শেষ দিকে বিজয় শঙ্কর ১৫ বলে করেছেন ২৬। তারপরও নিয়মিত উইকেট না হারালে আরেকটু হয়তো বড় হতে পারত ভারতের স্কোর। কে জানে, সেটাও হয়তো টার্নাররা পেরিয়ে যেতেন অনায়াসেই।