বিষণ্ণ সকাল, অলস দুপুর আর মন খারাপের বিকেল
সকালটা হুট করেই হয়ে পড়ল বিষণ্ণ। ঠিক সময়ে ঘুম ভেঙেও অযাচিত আলস্যে বাস মিস করে যাওয়ার পরের অনুভূতির মতো করে।
ঠিকঠাকই ছিল সব। সবুজ উইকেট। মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশন। আবু জায়েদ রাহী, এবাদত হোসেনরা আগেরদিনই খুঁজে পাচ্ছিলেন ঠিক করিডোর, দারুণ সিম-পজিশনে মিলছিল মুভমেন্ট। রস টেইলর আগেরদিন আক্রমণের আভাস দিয়েছিলেন, তবে তাকে টপকে যাওয়ার আয়োজন অনেকটাই গুছিয়ে এনেছিলেন রাহীরা। ড্রাইভে প্রলুব্ধ হলেন টেইলর। রাহী সেটাই চাচ্ছিলেন। টেইলর গড়বড় করে ফেললেন। রাহী সেটাই চাচ্ছিলেন। এক্সট্রা কাভারে মাহমুদউল্লাহ, খুব বাজে ফিল্ডারের দুর্নাম নেই তার। রাহীর জন্য ঠিক মানুষটা ছিলেন ঠিক জায়গাতেই। মাহমুদউল্লাহ ক্যাচটা হাতেই পুরতে পারলেন না! রাহী সেটা চাননি।
রাহী দমলেন না অবশ্য। পরের বলে বিট হলেন টেইলর। এরপরের বলে এজড। ক্যাচ উঠলো। দ্বিতীয় স্লিপে সাদমান ছাড়লেন। পরের বলে টেইলর ডিফেন্ড করলেন। আর তারপর, টেইলরের বোলারস ব্যাকড্রাইভটা গেল রাহীর নাগালের বাইরে দিয়ে। শেষ বল- ইনসাইড-এজের পর টেইলরের প্যাড আটকে দিল সেটা। রাহী সে ওভারে দুইবার সফল হতে পারতেন। রাহী টেইলরকে কাঁপিয়ে দিলেন, নাড়িয়ে দিলেন। ফেরাতে পারলেন না।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশের সাফল্য একটি- দুই দল মিলিয়ে একমাত্র স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে খেলা তাইজুল ইসলামের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। টেইলর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ৯৭ বলে, এরপর তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নিকোলস।
এবাদত-রাহীর পর মোস্তাফিজ এসেছেন, এসেছেন সৌম্যও। বিষণ্ণ সকাল গড়িয়ে এরপর হাজির অলস দুপুর। যেখানে বাংলাদেশ দর্শক। টেইলর-নিকোলসের ব্যাটিংয়ের দ্রুত রান তোলার পরিকল্পনা স্পষ্ট, সেটা ততক্ষণে বাস্তবায়িতও হচ্ছে। দুজন মিলে রান করছেন যেন ‘যেমন ইচ্ছে লেখার কবিতার খাতা’য় আঁকিবুঁকি করার মতো।
লাঞ্চের পরের সেশনে নিউজিল্যান্ড রান তুললো ৫.৬১ হারে। টেইলর ততক্ষণে ৬ষ্ঠ বারের মতো দেড়শ ছুঁয়েছেন, নিকোলস প্রায় এক সেশনেই পৌঁছে গেছেন সেঞ্চুরির কাছে। মোস্তাফিজের শর্ট বলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, তাইজুলের সাফল্যের স্মৃতি হয়েছে বিস্মৃত। আর রাহীকে তখনও যেন তাড়া করে ফিরছে টেইলরের সেই উইকেট না পাওয়ার স্মৃতি!
টেইলর সেই রাহীর বলেই পুল করে ট্রিপল নিয়ে পূর্ণ করলেন তিন নম্বর ডাবল সেঞ্চুরি। নিয়তির খেল? বলতে পারেন। মোস্তাফিজ ফেরালেন তাকে, তবে তার আগেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। ২০ রানে ফিরতে পারতেন টেইলর, ফিরতে ফিরতে করে ফেললেন ২০০ রান। নিকোলস তার আগেই করেছেন সেঞ্চুরি। আর বাংলাদেশের বিষণ্ণ সকালটা অলস দুপুর পেরিয়ে তখন গিয়ে ঠেকেছে যেন মন খারাপের বিকেল বেলায়।
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের তুলে মারা শটটা মিড-অফে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহর পেছনে গিয়ে পড়লো, উলটো ফিরেও যেন নিজের দৌড়ে প্রাণ জোগাতে পারলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। মন খারাপ? হতেই পারে!
নিউজিল্যান্ড থামলো।
বেসিন রিজার্ভের সবুজ দানব এরপর জেগে উঠলো বোল্ট-সাউদির নতুন বলের ছোঁয়ায়। সিরিজে দুর্দান্ত তামিমের স্টাম্প এলোমেলো, মুমিনুল ‘বিদেশে গিয়েও ঘরের জন্য প্রাণ কাঁদে’ ভাবটা দূর করতে পারলেন না। সাদমানের প্রতিরোধও স্থায়ী হলো না।
যে দিনটা শুরু হতে পারতো একরাশ আশা নিয়ে, সেটাই শেষ হলো তিনদিনেই পরাজয়ের শঙ্কা নিয়ে।
বিষণ্ণ সকাল। অলস দুপুর। মন খারাপের বিকেল।
ওয়েলিংটনে শুধুই আরেকটি ‘পক্ষে না আসা’ দিন ছিল আজ বাংলাদেশের।