• " />

     

    'মাথাব্যথা'র নাম তিন নম্বর

    'মাথাব্যথা'র নাম তিন নম্বর    

    টপ অর্ডারে লম্বা ইনিংসের অভাব জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিত্যসঙ্গী। তবে রানের খাতায় অংকের হিসেব বলে টপ আর মিডল অর্ডার মিলিয়ে প্রথম ছয়টি ব্যাটিং পজিশনের মধ্যে তিন নম্বরটা বরাবরই বাংলাদেশের বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে আছে। মাঝে আফতাব-আশরাফুলদের যুগে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ‘ওয়ান ডাউন’ বলে পরিচিত পজিশনটিতে খাপ খাওয়াতে পারছেন না বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানই।

     

    আজকেরটি সহ ৩১১টি একদিনের আন্তর্জাতিক খেলে বাংলাদেশের মোট রানসংখ্যা ৫৫ হাজারের কিছু বেশী। সেখানে সবচেয়ে বেশী ১৫ সহস্রাধিক রান এসেছে ওপেনারদের ব্যাট থেকে। চার এবং পাঁচ নম্বর ব্যাটিং পজিশন থেকে এসেছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৯৯৯ ও ৬ হাজার ৯৮২ রান। আর তিন নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত সংগ্রহ ৬ হাজার ২৬১ রান।

     

    তবে তিন নম্বরে মোটামুটি স্ফীত অংকটার একটা বড় অংশই এসেছিল চলতি শতকের প্রথম দশকে। এই অবস্থানে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান আফতাব আহমেদ। কোন শতক না থাকলেও ৯টি অর্ধশতকসহ তিন নম্বরে নেমে তাঁর মোট রানসংখ্যা ১ হাজার ৩০৩।

     

     

     

    তিন নম্বরে রান সংগ্রহের তালিকায় পরের তিনটি স্থানেও সাবেকরাই; যথাক্রমে মোহাম্মদ আশরাফুল, জুনায়েদ সিদ্দিক ও হাবিবুল বাশার। পঞ্চম সর্বোচ্চ ৪২১ রানের মালিক মুমিনুল হক বছরখানেক ধরেই জাতীয় দলে ব্রাত্য।

     

    বিগত এক বছরে দলগত সাফল্যের সূচকে ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকলেও টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ পজিশনটি থেকে রান সরবরাহ কেবলই হ্রাস পাচ্ছে। সর্বশেষ ১২ মাসে ২২টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান যোগ হয়েছে ৫ হাজার ৬৮। এর মধ্যে মাত্র ৪৪৮ রান তিন নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানদের অবদান।

     

    এই পজিশন থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া তিনটি শতকের দুটো আশরাফুলের, একটি জুনায়েদ সিদ্দিকের। বিগত পাচ বছরে কোন শতক দূরে থাকুক, সর্বোচ্চই ৬২ রান- গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদুল্লাহর। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আজতক তিন নম্বরে টাইগারদের হয়ে ব্যাট করতে নেমেছেন মোট সাতজনঃ মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ, মোহাম্মদ মিথুন, ইমরুল কায়েস ও সাকিব আল হাসান। এই সময়সীমায় খেলা ৩৫টি ম্যাচে ‘ওয়ান ডাউন’ ব্যাটসম্যানরা অর্ধশতক উপহার দিয়েছেন পাঁচটি, যার মধ্যে ৩টি মুমিনুলের।

     

     

    বিশ্বকাপে প্রাপ্ত বাকি দুটোর একটির মালিক ওই মাহমুদুল্লাহ, অপরটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সৌম্য সরকারের। বাদবাকিটা শুধুই হতাশার গল্প; ১৪টি ম্যাচে তিন নম্বর ব্যাটসম্যানদের রান দুই অংকে পৌঁছতেও ব্যর্থ হয়।

     

    গত দুই বছরে তিন নম্বর পজিশনে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের পরিসংখ্যান

     

    ব্যাটসম্যান ইনিংস রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক রেট
    মুমিনুল হক ১০ ২৯৬ ৬০ ২৯.৬০ ৭৭.৪৮
    সৌম্য সরকার ১৯৩ ৫১ ৩২.১৬ ৯১.১৬
    লিটন দাস ১০৭ ৩৬ ১৭.৮৩ ৭৬.৪২
    মাহমুদুল্লাহ ৯৭ ৬২ ১৯.৪০ ৭০.২৮
    মোহাম্মদ মিথুন ২৬ ২৬ ২৬.০০ ৬৬.৬৬
    ইমরুল কায়েস ১৬ ৪.০০ ৩৪.০৪
    সাকিব আল হাসান ০.০০ ০.০০

     

     

    বিশ্বকাপের পর থেকে আজ পর্যন্ত ১১টি ম্যাচের মধ্যে ৭টিতে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন লিটন দাস, বাকি ৪টিতে মাহমুদুল্লাহ। ওই চারটির তিনটিতেই মাহমুদুল্লাহ দুই অংকের রান করতে ব্যর্থ হন। ভারতের বিপক্ষে দুটো ম্যাচে লিটন ত্রিশের কোঠা পেরোলেও বাকিগুলোয় ব্যর্থ তিনিও।

     

     

    সাম্প্রতিক অতীতের পরিসংখ্যান বলছে বর্তমান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিন নম্বরে তুলনামূলক ভালো সাফল্য মুমিনুলেরই। প্রাপ্ত সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে সচেষ্ট থেকেও কেন তিনি বারবার উপেক্ষিত? কিংবা ৭ ম্যাচ থেকে সাকুল্যে ১০৭ রান লিটন দাসের সামর্থ্য কতোটা জানান দিতে পারছে? ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে এসে বিশ্বকাপে দারুণ সফল মাহমুদুল্লাহই বা কেন ঘরের মাঠে নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফিরছেন? ওপেনিংয়ের পাশাপাশি ওয়ান ডাউনেও যথেষ্ট সপ্রতিভ সৌম্য সরকারকে কোন পজিশনে থিতু দেখতে চায় দলের থিংক ট্যাংক? তিন নম্বর তথা টপ অর্ডারে স্থিতিশীলতা খুঁজে পেতে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব খোঁজাটাও বোধহয় জরুরী।