দুইবার গোল হজম করে, দুইবার ফিরে আসলো আবাহনী
এএফসি কাপে গ্রুপ ‘ই’ এর দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের ক্লাব মিনার্ভার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দুইবার পিছিয়ে পড়েছিল আবাহনী, দুইবারই ফেরত এসেছে তারা। তবে গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে হয়ত জয়টাও ছিনিয়ে আনতে পারত আবাহনী। তবে রক্ষণের ভুলে গোল হজম করে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে মারিও লেমোসের দলকে।
মিনার্ভার বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগেই একটা দুঃসংবাদ পেয়েছিল আবাহনী। আগের ম্যাচে মানাং মার্সিয়াংদির বিপক্ষে দারুণ খেলা সেন্টারব্যাক টুটুল হোসেন বাদশা শেষ মুহুর্তে দল থেকে বাদ পড়েন ইনজুরি নিয়ে। তপু বর্মনও ছিলেন পুরোপুরি ফিট। তাই আগের ম্যাচের গোলদাতা মাসিহ সাইঘানির সঙ্গে রক্ষণে নেমেছিলেন ওয়েলিংটন।
আবাহনীর শুরুটাও তাই ছিল নড়বড়ে। মিনার্ভা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে। অধিনায়ক মাহমুদ আল আমনা ৬ মিনিটেই একবার শট করে কর্নার আদায় করে নিয়েছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর আবার ক্রস করেছিলেন ডানদিক থেকে। সেখান থেকে লালমুনপুইয়া স্যামুয়েলের শট অল্পের জন্য চলে যায় বারপোস্টের বাইরে দিয়ে। কিন্তু এরপর আর বেশিক্ষণ মিনার্ভাকে আটকে রাখতে পারেনি পারেনি আবাহনী। ওই জুটিই ১৬ মিনিটে এগিয়ে দেয় মিনার্ভাকে। স্যামুয়েলের স্কয়ার স্লাইড মেরে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের কাছকাছি জায়গা থেকে আবাহনীর বারপোস্টের ভেতর ঢুকিয়ে দেন আমনা।
তবে গোল হজম করে হুশ ফেরে আবাহনীর। বেলফোর্ট নেতৃত্ব দেন দেন দলের ফিরে আসায়। বাম দিক দিয়ে কাটিয়ে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন তিনি। বাইলাইন ঘেঁষে এরপর স্কয়ার করলেন। চলতি মৌসুমে আবাহনীর সর্বোচ্চ গোলদাতা নাবিব নেওয়াজ জীবন নেয়ার পোস্টে দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ফ্লিকে গোল করে ম্যাচে ফেরত আনেন দলকে।
এরপর ৫ মিনিটের ব্যবধানে এগিয়েও যেতে পারত আবাহনী। ২২ মিনিটে সানডে ওয়ান অন ওয়ানে পেয়েগিয়েছিলেন গোলরক্ষককে। কিন্তু ভাস্কর রায় দারুণ এক সেভ করে ফিরিয়ে দেন তাকে। সুযোগ তখনও ছিল আবাহনীর সামনে। ওই আক্রমণ থেকেই আরও একবার জীবনের শট গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন মিনার্ভার কারিম। মাসিহ সাইঘানিও একবার সেন্টার থেকে হেড করেছিলেন, কিন্তু সেটা চলে যায় বারপোস্টের ওপর দিয়ে।
অবশ্য স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যেতে পারেনি আবাহনী। প্রথমার্ধ শেষের আগে রাইটব্যাক রায়হানের ভুলে গোল খেয়ে বসে তারা। গোলরক্ষক শহিদুল আলম ছোট পাসে খেলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু রায়হান আবার দিলেন ব্যাকপাস। সেটা আসলে ব্যাকপাসও হলো না। ডিবক্সের ঠিক সামনে গিয়ে পড়ল সেই বল। শ্রেয়াস গোপালান উপহার পেয়ে আর দেরি করেননি, মেরেছেন বুলেট গতির এক শট। তাতেই কপাল পোড়ে আবাহনীর।
ওই আক্রমণের মিনিট খানেক আগে অবশ্য একটা পেনাল্টিও পেতে পারত মিনার্ভা। শহিদুল আলম বল ধরতে গিয়ে ফাউল করে বসেছিলেন। যদিও মিনার্ভার সেই আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি।
অবশ্য ওই গোল শোধ করতেও খুব বেশি সময় নেয়নি আবাহনী। ৪৯ মিনিটে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছাকাছি জায়গায় ফ্রি কিক পায় আবাহনী। অভিজ্ঞ ওয়ালি ফয়সাল নেন দুর্দান্ত এক ফ্রিকিক। সেটা গিয়ে বারপোস্টে লেগে ফেরত আসে। এরপর মিনার্ভার আকাশদ্বীপ সিংহের গায়ে লেগে একেবারে গোললাইনের সামনে বল পেয়ে যান সানডে চিজোবা। বাকি কাজটা সারতে সারতে মোটেই অসুবিধা হয়নি তার।
গোল শোধ করার পর খেলার নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয় আবাহনী। বেশ কয়েকটি হাফ চান্সও তৈরি করে তারা। তবে গোলে আর সেভাবে আর নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করা হয়নি সানডেদের। কাছাকাছি গিয়েছিল ওয়ালি ফয়সালই। আরেকটি ফ্রি কিক থেকে অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করেন তিনি। জীবন আরেকবার গোলের কাছাকাছি জায়গায় কঠিন অ্যাঙ্গেল থেকে মারেন সাইড নেটে।
দ্বিতীয়ার্ধের আধঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য মিনার্ভা আবার চোখ রাঙাতে থাকে আবাহনীকে। কাউন্টারে অ্যাটাকে করা ক্রসে ৭৬ মিনিটে সহজ হেড গোলের ওপর দিয়ে মারেন শ্রেয়াস। এরপর মাকান চথী মিস করেন সূবর্ন সুযোগ। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে ঠিকঠাক পা ছোঁয়াতে পারেননি, তার দিকনিশানাহীন শট বাইরে দিয়ে গেলে হাপ ছেড়ে বাঁচে আবাহনী। দলকে আরও বড় বাঁচা বাঁচিয়েছিলেন এরপর গোলরক্ষক শহিদুল। ৮০ মিনিটে দুর্দান্ত ডাবল সেভ করেছেন আবাহনী অধিনায়ক। প্রথমবার ডিবক্সের বাইরে থেকে করা শ্রেয়াসকে ফেরান তিনি, রিবাউন্ডে শট করেছিলেন কালিফ আল হাসান। সেটাও ঠেকিয়ে দেন আবাহনী গোলরক্ষক।
আবাহনী মিনার্ভা
৬ শটস অন টার্গেট ৬
৪৫.৪% বল পজেশন ৫৪ %
মিনার্ভার চাপ সামলে আবাহনী শেষদিকে জয়টা ছিনিয়েও আনতে পারত। ইনজুরি সময়ে লম্বা থ্রো থেকে শুরু আবাহনীর আক্রমণ। ডিবক্স ঘুরে ডান প্রান্ত থেকে করা ক্রস আবার গিয়ে পড়ল ডিবক্সের ভেতর। গোলরক্ষক ভাস্কর এগিয়েও এসেছিলেন। বাকি কাজটা বেলফোর্টকে করতে হত। হেডটা লক্ষ্যে রাখলেই গোলটা পেয়ে যেত আবাহনী। কিন্তু লাফিয়ে উঠে বেলফোর্ট হেড করলেন বারপোস্টের ওপর দিয়ে।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হাজির হওয়া হাজার খানেক সমর্থক অবশ্য ঘরের দলকে আলাদা করে তেমন 'হোম সাপোর্ট' দিতে পারেননি লোকবলের অভাবে! তাই ঘরের মাঠে মিনার্ভাকে হারানোর সুযোগটাও হাতছাড়া হলো আবাহনীর। অবশ্য এখনও গ্রুপের শীর্ষে আছে তারা, ৪ পয়েন্ট নিয়ে। পরের ম্যাচে আবাহনী মুখোমুখি হবে ভারতের আরেক ক্লাব চেন্নাইন এফসির বিপক্ষে।