নিউজিল্যান্ড পরীক্ষা দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়েও কঠিন
আপসেট বা ঐতিহাসিক নয়, তবে দারুণ...
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ জয়টাকে আপসেট, বা ঐতিহাসিক বললে আমি সেটার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করব। এটা মোটেও তেমন কিছু না। কদিন আগেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১০ রান ২৪ ওভারের ভেতর তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। এ জয়টাকে দারুণ জয় বলবো। এ জয়কে বলবো বরং স্বস্তির, টুর্নামেন্টের শুরুতে এমন জয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।
এমন জয়ে যেটা হয়, বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে পথ চলতে সহায়তা করবে। ব্যাটিংয়ে ৩৩০-এর মতো স্কোর গড়ে, সবাই ভাল ব্যাটিংয়ের পর বোলাররাও যদি সমন্বিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারে, তবে সেটা নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাস জোগায়। ইতিবাচক থাকতে সহায়তা করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের সঙ্গে পাওয়া মোমেন্টামটা ধরে রাখতে হবে এখন।
হিসাবের বাইরের জয়?
একটা গল্প বলি। আমি ইএসপিএনক্রিকইনফোতে এবার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছি। প্রতি সপ্তাহের ম্যাচের ফল এখানে প্রেডিক্ট করতে হয়। আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচের প্রেডিকশনটা আগেই দিয়ে দিয়েছিলাম। ভবিষ্যত তো দেখতে পারি না, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়টা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম। এর কারণ আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এ দলটা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সঙ্গে অভিজ্ঞতা বা ‘কোয়ালিটি অফ ক্রিকেট’-এ বাংলাদেশ তাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। তাই তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টা হিসাবের বাইরের? মোটেই না।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত ছিলেন সাকিব
নিউজিল্যান্ড কি দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ?
নিউজিল্যান্ড শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ, তা নয়। নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের পুরো টুর্নামেন্টেই অন্যতম শক্ত প্রতিপক্ষ, বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। ভারতের ক্রিকেটের যেমন একটা ব্র্যান্ড আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আছে পাওয়ার ক্রিকেট । গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ড একটা আলাদা ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে। তবে নিউজিল্যান্ডের কিন্তু তেমন কিছু নেই, তারা ‘বেসিক ও সিম্পল’ ক্রিকেট খেলে। একইভাবে বাংলাদেশের ওয়ানডে খেলার ধরনও তাই। আবার দুই দল বেশ কয়েকটি সিরিজ খেলেছে, একে অন্যের শক্তিমত্তা বা দুর্বলতা খুব ভাল করেই জানে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াই এমন, যে যার দেশে আধিপত্য করে। তবে এটা নিরপেক্ষ ভেন্যু, কন্ডিশন আলাদা।
হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশ শেষ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছে। তবে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে সেটাও।
ওভালে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ?
ওভালে ফ্ল্যাট ধরনের উইকেটে খেলা হওয়ার কথা। যেহেতু আগে একটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ এখানে, কন্ডিশনটা মোটামুটি পরিচিত থাকার কথা। ওভালে খেলার একটা বাড়তি সুবিধা অন্য দিক দিয়ে পাবে বাংলাদেশ- সমর্থন। লন্ডনে খেলা বলে প্রচুর বাংলাদেশী আসার কথা। দর্শকরা মিলে মাঠের আবহটাই পালটে দিতে পারে, বাংলাদেশ যে বিদেশে খেলছে সেটা মনে নাও হতে পারে!
দিবা-রাত্রির ম্যাচে টসে জিতলে কী নেওয়া উচিৎ?
ইংল্যান্ডে দিবা-রাত্রির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই বাংলাদেশের। ২০০৫ সালে একটি, ২০১০ সালে আরেকটি খেলা হয়েছিল। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটা দিবা-রাত্রির ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তো সেটা পরিত্যক্তই হলো। ইংল্যান্ডের মাটিতে ডে-নাইট ম্যাচের কন্ডিশন তাই পরিচিত না। সেক্ষেত্রে আমি টস জিতলে আগে ব্যাটিং নেওয়ার পক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেভাবে একটা স্কোর দাঁড় করাতে পারলে বোলাররা একটা ধারণা পাবে। কিভাবে বোলিং করতে হবে নিউজিল্যান্ডকে আটকানোর জন্য। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সবাই ফিট থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের একাদশটাই খেলানো উচিৎ।
যিনি হতে পারেন হুমকি
হুমকি নিউজিল্যান্ডের শুরুর চারজন ব্যাটসম্যান। প্রথমে মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে কলিন মানরোর জুটি হতে পারে ধ্বংসাত্মক। এরপর আছেন কেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলর। ব্যাটিংয়ে একজন নয়, হুমকি চারজন। আর বোলিংয়ে আলাদা করে বলবো ট্রেন্ট বোল্টের কথা। কন্ডিশন পক্ষে এলে ব্যাটিং লাইন-আপ ধসে দিতে পারেন তিনি।
যে দ্বৈরথে নজর
মোস্তাফিজুর রহমান বনাম কেন উইলিয়ামসন
উইলিয়ামসনের বিপক্ষে রেকর্ডটা এখনও তেমন সুবিধার নয় মোস্তাফিজের, এবার সুযোগ তার খরা কাটানোর।
মুখোমুখি উইলিয়ামসন-মোস্তাফিজ
৫ ম্যাচ
২৫৯ রান
০ ডিসমিসাল
গড়- ৮৬.৩৩
তামিম ইকবাল বনাম ট্রেন্ট বোল্ট
স্ট্রাইক বোলার, স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান। লড়াইটাও জমতে পারে।
শাহরিয়ার নাফীস : বাংলাদেশের হয়ে ২৪টি টেস্ট ও ৭৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক।