অস্ট্রেলিয়া বলেই এভাবে জিতল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলেই এভাবে হারল!
অস্ট্রেলিয়া ৪৯ ওভারে ২৮৮ অলআউট (কোল্টার নাইল ৯২, স্মিথ ৭৩; ব্রাথওয়েট ৩/৬৭ )
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে ২৭৩/৯ (হোপ ৬৮, হোল্ডার ৫১, পুরান ৪০; স্টার্ক ৫/৪৬, কামিন্স ২/৪১)
ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ১৫ রানে জয়ী
দলটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলেই বোধ হয় এভাবে হেরেছে। আর দলটা অস্ট্রেলিয়া বলেই হয়তো শেষ পর্যন্ত জিতেছে। নইলে যে অস্ট্রেলিয়া ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে, তাদের জন্য ২৮৮ রান পর্যন্ত যাওয়াই তো মহা বিস্ময়ের। আর সেই রান তাড়া করে যখন চার উইকেট হাতে রেখে ৫ ওভারে ৩৮ দরকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের, সেখান থেকে ম্যাচটা হেরে বসে ১৫ রানে।
ট্রেন্টব্রিজে সেজন্য সেরা চরিত্রে দুজন সমান মনযোগ দাবি করতে পারেন। দুজনই বোলার, তবে একজন আজ কাজটা করেছেন ব্যাট হাতে। নাথান কোল্টার নাইল ৯২ রান না করলে অস্ট্রেলিয়া ৩০০র কাছাকাছি যায় না। আবার ম্যাচ থেকে যখন ছিটকে যেতে বসেছে অস্ট্রেলিয়া, স্টার্ক এক ওভারে দুই উইকেট না নিলে সেটিও জেতা হয় না। এই দুজন মূল ভূমিকায় থাকলে পার্শ্ব ভূমিকায় স্মিথ, কামিন্সদের সঙ্গে আছেন দুই আম্পায়ার, সেটি অবশ্য খলনায়কেরই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসেই অন্তত চারটি ভুল আউট দিয়েছেন, প্রতিবারই রিভিউ নিয়ে পার পেতে হয়েছে। গেইলের আউটের পর নো বল খেয়াল করেননি আম্পায়ার। ভুলে যাওয়ার মতো দিন কেটেছে ক্রেইগ গ্যাফানি আর রুচিরা পালিয়াগুরুগের, ম্যাচটা শেষ করতে পারলেই বেঁচেছেন দুজন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শুরু থেকেই নাটক। ক্রিস গেইল ছিলেন সতর্ক, তবে ভালো কিছুর আশ্বাস দিচ্ছিলেন কামিন্সের এক ওভারে ১৪ রান দিয়ে। স্টার্কের এক ওভারে দুবার আউট হলেন, দুবারই রিভিউ নিলেন বাঁচলেন। তবে পরের ওভারে আর শেষ রক্ষা হলো না, এবার ‘আম্পায়ারস কলে’ ফিরে যেতে হলো। তার আগেই ফিরে গেছেন লুইস, ৩১ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিকোলাস পুরান ক্রিজে এসেই শুরু করলেন দ্রুত রান তোলা। শেই হোপকে শর্ট বলে পরীক্ষা নিচ্ছেন কামিন্সরা, তবে দুজনের জুটিতে উঠল ৫৯ রান। পুরান ৩৬ বলে ৪০ রান করে জ্যাম্পার বলে আউট হয়ে গেলেন, ৯৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া। হেটমেয়ার বড় কিছু করার আগেই হোপের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে আউট ২১ রানে।
হোপ অবশ্য শুরুর জড়তা কাটিয়ে ততক্ষণে রান শুরু করে দিয়েছেন। স্মিথের মতো একদিক ধরে দলকে লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৬৮ রান করে আউট হয়ে গেলেন। রাসেল এসেই জ্যাম্পাকে চার-ছয় মেরে বার্তা দিলেন, ঝড় আসছে। কিন্তু খেলাটা টি-টোয়েন্টি না, ওয়ানডে। স্টার্ককে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন এক্সট্রা কাভারে, ম্যাক্সওয়েল সেটি ধরলেন দারুণভাবে। বড় ধাক্কা খেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে হোল্ডার ছিলেন, ব্রাথওয়েটের সঙ্গে জুটিতে উঠল ৩৬ রান। হোল্ডার ফিফটি পেলেন, ওয়েস্ট পাচ্ছে জয়ের গন্ধ। ৫ ওভারে ৩৮ রান দরকার, কঠিন কিছু নয়। স্টার্ক বল হাতে পেলেন। মারতে গিয়ে আউট হলেন ব্রাথওয়েট, পুল করতে গিয়ে আউট হোল্ডার। এক ওভারেই দুই উকেট পেলেন স্টার্ক, ম্যাচটা শেষ হয়ে গেল সেখানেই। শেষ ওভারে পর পর তিন চারে নার্স শুধু ব্যবধান্টাই কমিয়েছেন। স্টার্ক পেয়েছেন পাঁচটি, সবচেয়ে কম ম্যাচে ১৫০ ওয়ানডে উইকেটও হয়ে গেছে।
তার আগে ট্রেন্টব্রিজে টসে জিতে কেন ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, সেটা বুঝা গেল দ্রুতই। তৃতীয় ওভারে প্রথম আঘাত করলেন ওশ্যান থমাস। গুড লেংথ থেকে অ্যাঙ্গেল করে লাফিয়ে ওঠা বলে না ব্যাট চালিয়ে থাকতে পারলেন না ফিঞ্চ, হলেন কট-বিহাইন্ড। এক ওভার পর তাকে অনুসরণ করলেন ডেভিড ওয়ার্নার। এবার কটরেলের বলে কাট করতে গিয়ে ধরা পড়লেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। বাউন্সারের প্রত্যাশায় বেশ পেছনে গিয়ে ব্যাট করছিলেন, ফাঁদে পড়লেন সে কারণেই।
অস্ট্রেলিয়ার দুর্দশার শুরু তখন কেবল। উসমান খাওয়াজা রাসেলের বলে অন দি আপ খেলতে গিয়ে এজড, বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিলেন শেই হোপ, যে ক্যাচটা নিতে পারতেন স্লিপে থাকা ক্রিস গেইলও। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দ্বিতীয় বলেই পুল করতে গেলেন শেলডন কটরেলকে, খাড়া আকাশে তুললেন বল। আবার হোপের হাতে গেল ক্যাচ।
স্মিথ একপ্রান্তে ছিলেন, মার্কাস স্টোইনিস তার সঙ্গে বেঁধেই চেষ্টা করছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপর্যয় সামাল দিতে। তবে হোল্ডারের বলে ফ্লিক করতে মিডউইকেটে ধরা পড়ে খুব বেশিক্ষণ সেটা করতে পারলেন না স্টোইনিস। এলেন অ্যালেক্স ক্যারি, স্মিথের সঙ্গে তার ৬৮ রানের জুটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার ‘গ্রেট এসকেপ’-এর ট্রেইলার।
৩১তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৬ উইকেটে ১৪৭ রান। কটরেলের অবিশ্বাস্য ক্যাচে যখন ফিরলেন স্মিথ, তাদের রান তখন ৭ উইকেটে ২৪৯। অফস্টাম্পের বাইরে ফুললেংথের বলটা অনসাইডে খেলেছিলেন স্মিথ। ডিপ মিডউইকেটে লাফিয়ে উঠে এক হাত বাড়িয়ে সেটা ধরলেন কটরেল। মোমেন্টাম ধরে রাখতে বাউন্ডারির বাইরে চলে গিয়েছিলেন, তবে তার আগেই বল ছুঁড়েছিলেন ভেতরে। ফিরে এসে নিলেন সেটা। কটরেলের ক্যাচ যেন প্রকাশ করল এ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং-ই!
তবে থামেননি কোল্টার-নাইল। ৩৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন, পরের ২১ বলে করেছিলেন ৪২ রান। ক্যারিয়ারে এটিই তার প্রথম ফিফটি, প্রথম সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল। এর আগে আটে নেমে ওয়ানডেতে কেউ সেঞ্চুরি পাননি, ৮ রানের জন্য সে রেকর্ডটা গড়া হলো না তার। ওয়াইড লং-অফে হোল্ডারের দানবীয় হাতে ধরার পড়ার আগে করেছেন ৬০ বলে ৯২ রান, ৪ ছয়ের সঙ্গে মেরেছেন ৮টি চার। সে ওভারেই স্টার্ক ফিরলে অস্ট্রেলিয়া থেমে ২৮৮ রানে। শেষ পর্যন্ত সেই রানই হয়ে গেছে ম্যাচ জেতানোর মতো।