• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    এজবাস্টনের থ্রিলারে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভুলের চড়া মাশুল দিল দক্ষিণ আফ্রিকা

    এজবাস্টনের থ্রিলারে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভুলের চড়া মাশুল দিল দক্ষিণ আফ্রিকা    

    দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪১/৬, ৪৯ (৪৯) ওভার 
    নিউজিল্যান্ড ২৪৫/৬, ৪৮.৩ (৪৯) ওভার
    নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী 


    এজবাস্টনে কি ফিরে এলো চার বছর আগের ইডেন পার্ক? দক্ষিণ আফ্রিকা কি বিশ্বকাপ থেকে নিজেদের বিদায়টা নিশ্চিত করলো তাদের সেই চিরচেনা স্টাইলেই? নাহলে কেন উইলিয়ামসনের এজটা কেন বুঝবেন না উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক। উইলিয়ামসনকে রান-আউটের সুযোগটা কেন হাতের মুঠো থেকে ফেলে দেবেন ডেভিড মিলার? কেন ‘হাফ-চান্স’-এর একটিও কাজে লাগবে না তাদের! 

    এজবাস্টনের লো-স্কোরিং থ্রিলারে প্রোটিয়ারা পারেনি এসব প্রশ্নের জবাব দিতে। চার বছর আগে গ্রান্ট এলিয়টের মতো এক ইনিংস খেলে ম্যাচটা বের করে নিতে নিউজিল্যান্ডকে সহায়তা করেছেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, এলিয়টের মতোই যার জন্মটা নিউজিল্যান্ডের বাইরে! তবে শেষে এলিয়টের মতো ছয়টা মেরেছেন সেই শান্ত-স্থির কেন উইলিয়ামসনই, যেটি দিয়ে পূর্ণ হয়েছে তার সেঞ্চুরি। একদিকে আগলে থেকে নিউজিল্যান্ডকে পার করিয়েছেন তো তিনিই! নিউজিল্যান্ড সুযোগ দিয়েছে, সেসব নিতে হেলায় অস্বীকার করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফল- বিশ্বকাপ থেকে তাদের বিদায়ের আয়োজন হয়ে এসেছে প্রায় সম্পন্ন, ৬ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট এখন মাত্র ৩। আর ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে সেমিফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।

    ওভালের উইকেট ছিল ধীরগতির, দক্ষিণ আফ্রিকার ২৪১ রানও তাই এখানে হয়ে গিয়েছিল জয়ের মতো স্কোর। রানতাড়ায় প্রথম ওভারে দুই কাভার ড্রাইভে চার মেরে অবশ্য শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ছিটকে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কলিন মানরো। তবে পরের ওভারে লাফিয়ে উঠে খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজড তিনি, লাফিয়ে ওঠা ক্যাচটা নিজের বলে এসে নিয়েছিলেন কাগিসো রাবাদা। 

    এরপর গাপটিল হিট-উইকেট হয়েছেন অদ্ভুতভাবে। ফেহলুকওয়ায়োর শর্ট বলে হুক করতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন তিনি, তার পা গিয়ে লেগেছে স্টাম্পে। এজবাস্টনে ছিল এরপর ক্রিস মরিস শো। পরপর দুই ওভারে টেইলর-ল্যাথামকে ফিরিয়ে প্রোটিয়াদের ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন তিনি। টেইলর লেগসাইডের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে এজড হয়েছেন, ল্যাথাম ব্যাকফুটে ডিফেন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এজড হয়েই। 



    জিমি নিশামকে সঙ্গে নিয়ে এরপর এগুচ্ছিলেন উইলিয়ামসন। আবার মরিসের ধাক্কা, তার ওভার দ্য উইকেট থেকে অ্যাঙ্গেলের ফাঁদে নিশামও। তার আউটসাইড-এজ গেছে স্লিপে আমলার হাতে, ভেঙেছে ৫৭ রানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার সুযোগ পাওয়া আর ছাড়ার খেলা শুরু হয়েছে এরপরই। 

    ডি গ্র্যান্ডহোম ক্যাচ তুলে বেঁচেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকানদের আলগা বলে শট খেলে বাধ্য করেছেন সেসবের মাশুল গুণতে। শেষ পর্যন্ত উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার জুটি ৯১ রানের, যে জুটি ভাঙার বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইমরান তাহিরের বলে বটম-এজড হয়েছিলেন উইলিয়ামসন, তাহির আগ্রহী থাকলেও ডি কক সেটা বুঝতেই পারেননি! সে ওভারেই মিড-অনে মিলারের কাছে বেঁচেছিলেন গ্র্যান্ডহোম। দুই ওভার পর সবচেয়ে বড় সুযোগটা এসেছিল, রাবাদার শর্ট বলে বেসামাল উইলিয়ামসন শুরুতে রান নিতে আগ্রহী ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত দৌড় শুরু করেছিলেন, রাবাদা গিয়ে বল কুড়িয়ে থ্রো করার সময়ও বেশ দূরে ছিলেন উইলিয়ামসন। তবে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থ্রোটা জমাতে পারলেন না মিলার, আগেই ভেঙে দিলেন বেলস। 

    ডি গ্র্যান্ডহোম শেষ পর্যন্ত ক্যাচ দিয়েছেন ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে, লং-অফে ডু প্লেসির হাতে এনগিডির বলে, ৪৭ বলে ৬০ রান করে। সে ওভারে চাপটা ধরে রেখেছিলেন এনগিডি, তবে উইলিয়ামসনের দৃঢ় স্নায়ুর কাছে উৎরে যেতে পারলেন না, শেষ বলে গ্লাইড করে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে চাপটা কমিয়ে ফেললেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। 

    শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লগ করে ফেহলুকওয়ায়োকে ছয় মেরে সব চাপ উড়িয়ে দিলেন উইলিয়ামসন, পূর্ণ করলেন সেঞ্চুরিও। পরের বলে চার মেরে তিনিই নিশ্চিত করেছেন নিউজিল্যান্ডের জয়, যে জয়টা বেশ কয়েকবার ধরা দিতে চেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে! 



    এর আগে একদিকে লকি ফার্গুসনের পেস, অন্যদিকে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের পেসহীনতার সঙ্গে উইকেটের ধীরগতি মিলে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাঠিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। শুরুতেই ‘থান্ডার’বোল্টের শিকার কুইন্টন ডি কক। দারুণ সিম পজিশনের বলটি ভেতরে ঢুকে উড়িয়ে নিয়ে গেল ডি ককের লেগস্টাম্প, সে গোলা থামানোর মতো সামর্থ্য ছিল না তার। 

    ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে এরপর শুরু হয়েছে হাশিম আমলার সংগ্রাম, যেটি ছিল যেন দ্বিমুখী। নিজের ফর্ম ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ের সঙ্গে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস মেরামতের সঙ্গে একটা লড়াইয়ের মতো স্কোর দাঁড় করানোর ব্যাপারও। ডু প্লেসি খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না, ফার্গুসনের টেক্সটবুক বোলিংয়ে শেষ হয়েছে তার ইনিংস। ১৪তম ওভারে প্রথম শর্ট বলের দেখা মিলেছে, তবে পরের বলেই ফার্গুসনের ১৪৯ কিলোমিটার গতির ইয়র্কার আটকাতে পারেননি ডু প্লেসি।

    এর আগেই বিরাট কোহলির পর দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৮০০০ রান হয়ে গেছে আমলার। ফিফটি ছুঁয়েছেন ৭৫ বলে। এর পরপরই মিচেল স্যান্টনারের পারফেক্ট বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনে স্টাম্প হারিয়েছেন তিনিও। 

    মার্করামকে একটা জীবন দিয়েছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট, ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ ফেলে। তবে দ্বিতীয় জীবনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। গ্র্যান্ডহোমের কমিয়ে ফেলা লেংথে বল আকাশে তুলেছেন তিনি, ধরা পড়েছেন কাভারে। পিচের ধীরগতির আরেকটি শিকার ছিলেন মার্করাম। 

    ৫ম উইকেটে ফন ডার ডুসেন ও মিলার গড়েছেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৭২ রানের জুটি। ফার্গুসনকে পরপর দুই চারের পর তার শর্ট বলে কাবু হয়েছেন মিলার। পরের ওভারে ফার্গুসনের শিকার অ্যান্ডাইল ফেহলুকওয়ায়োও। শেষ ওভারে ১৫ রান তুলে ডুসেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিতে পেরেছেন ২৪১ রান পর্যন্ত।   

    শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হতে পারতো সেটা। তবে ওই যে, এ দিনটাও নয় দক্ষিণ আফ্রিকার। এ দিনটাও কিউই-উৎসবের, চার বছর আগে ইডেন পার্কের ওই দিনের মতোই।