• এএফসি কাপ
  • " />

     

    নেপালের মানাংকে উড়িয়ে দিয়ে এএফসি কাপে গ্রুপের শীর্ষে উঠল আবাহনী

    নেপালের মানাংকে উড়িয়ে দিয়ে এএফসি কাপে গ্রুপের শীর্ষে উঠল আবাহনী    

    নেপালের চ্যাম্পিয়ন মানাং মার্সিয়াংদিকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে এএফসি কাপের গ্রুপ 'ই' এর শীর্ষে উঠেছে আবাহনী লিমিটেড।  বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে একপেশে ম্যাচে মানাংকে কোনো সুযোগই দেয়নি আবাহনী। এএফসি কাপে এটাই আবাহনীর সবচেয়ে বড় জয়। অন্য ম্যাচে মিনার্ভা পাঞ্জাবের সঙ্গে চেন্নাইন এফসি ড্র করায় ১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে উঠে গেছে আবাহনী। শেষ ম্যাচে জুনের ২৬ তারিখ মিনার্ভার মাঠে তাদেরকে হারাতে পারলেই প্রথমবারের মতো পরের রাউন্ডে চলে যাবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা।

    প্রথমার্ধে নাবিব নেওয়াজ জীবন ও ক্রেভেন্স বেলফোর্টের গোলে এগিয়ে ছিল আবাহনী। পরের অর্ধে জুয়েল রানা, সানডে চিজোবা ও মামুনুল ইসলাম যোগ করেন আরও তিন গোল। এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাবে একটি দল। চেন্নাইন আর আবাহনীর ভেতরই লড়াইটা। অ্যাওয়ে গোলে পিছিয়ে থাকায় দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে চেন্নাইনে উঠে যাবে পরের রাউন্ডে। তাই শেষ ম্যাচে জয় পেলে আর কোনো কিছুর ওপর নির্ভর করতে হবে না আবাহনীকে। 

    নেপালে প্রথম লেগে আবাহনীকে জিততে কষ্টই করতে হয়েছিল। অনেকটা স্রোতের বিপরীতে সেই ম্যাচে মাসিহ সাইঘানির গোলে ম্যাচ জিতেছিল আবাহনী। কিন্তু এবার ঘরের মাঠে আবাহনীর সামনে দাঁড়াতেই পারেনি  মানাং মার্সিয়াংদি। নেপালে খেলা হয়েছিল আর্টিফিসিয়াল টার্ফে, এবার ঘাসের মাঠে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে মানাংয়ের রক্ষণ। শুরু থেকেই আবাহনীর আক্রমণের চাপে তারা ছিল কোনঠাসা। ১১ মিনিটে চাপেই খেই হারিয়ে বসে মানাং। সানডে আর জীবন দুইজনই প্রেস করছিলেন শুরু থেকে। ডিফেন্ডার সাহিদ আজিজ ডিবক্সের ঠিক সামনে ব্যাক পাস রিসিভ করেছিলেন সতীর্থের কাছ থেকে। কিন্তু আবাহনী স্ট্রাইকার জীবনের প্রেসিংয়ের কাছে বল হারিয়ে ফেলেন তিনি। জীবনও আর দয়া দেখাননি। ডিবক্সের ভেতর ডানদিক দিয়ে ঢুকে সহজ ফিনিশে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে সুযোগ না দিয়েই আবাহনীকে এগিয়ে দেন জীবন।

    প্রথমার্ধে আবাহনীর ডিফেন্ডাররা অবসর সময়ই পার করছিলেন। কিন্তু এরপরও গোলরক্ষক শহীদুল ইসলাম সোহেলের এক ভুলে কপাল পুড়তে পারত আবাহনীর। ২৫ গজ দূর থেকে সুজল শ্রেষ্ঠার হাফ ভলি সরাসরি হাতেই যাওয়ার কথা ছিল সোহেলের। কিন্তু সহজ সেভটাই কঠিন বানিয়ে ফেললেন আবাহনী অধিনায়ক। তার হাত ফস্কে বল প্রায় গোল লাইনও অতিক্রম করে ফেলেছিল। দ্বিতীয় চেষ্টায় কোনোমতে ভুল শুধরে বল লুফে নেন সোহেল। এরপর ম্যাচে চলে আবার আবাহনীর আধিপত্য।

    প্রথমার্ধের শেষ ৫ মিনিটে আরও আক্রমণে আরও ধার বাড়ায় আবাহনী। কিন্তু স্ট্রাইকার সানডে চিজোবা হতাশ করেন, দুইবার নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। একবার লেফটব্যাক পজিশনে খেলা রায়হান নিজের অর্ধ থেকে প্রায় ৭০ গজ দৌড়ে গিয়ে নিখুঁত এক ক্রস করেছিলেন, ডিবক্সের ভেতর ফাঁকায় ছিলেন সানডে, কিন্তু তার ফ্লিক চলে যায় বাইরে দিয়ে। পরের বার বেলফোর্টে ক্রস থেকেও সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় থাকা সানডে বলে পা লাগাতে পারেননি।

    প্রথমার্ধ শেষের আগেই গোল মিসের হতাশা অবশ্য আবাহনী ভুলে যায় বেলফোর্টের গোলে। দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাকে মিডফিল্ডে নিজেদের অর্ধে বল পেয়েছিলেন বেলফোর্ট। এরপর মানাংয়ের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সের ঠিক ভেতরে ঢুকে এগিয়ে আসা গোলরক্ষক বিরাজ মাহাজনকে বোকা বানিয়ে গোল করেন বেলফোর্ট।

    দ্বিতীয়ার্ধে শুরুটা আরও দুর্দান্ত আবাহনীর। আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর বেলফোর্ট, জীবনদের একের পর এক আক্রমণ স্রোতের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়েছে মানাংয়ের রক্ষণে। বিরতির পর গোলের জন্য যে আবাহনীকে প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো সেটার কারণও সানডে। ১৫ মিনিটে অন্তত চারবার নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল আবাহনী। দুইবারই সুযোগ ছিল সানডের কাছে, একবারও লক্ষ্যেই মারতে পারেননি তিনি।  জীবনের ফ্রি কিক থেকে মাসিহ সাইঘানিও হেডে গোল করতে পারতেন, হাতে অনেক সময় নিয়ে তিনিও মেরেছেন বাইরে দিয়ে।

    অবশেষে ৬৪ মিনিটে দ্বিতীয়ার্ধের ‘গোলখরা’ কাটে আবাহনীর। বামদিক দিয়ে সোহেল রানা আর বেলফোর্টের দারুণ সমন্বয়ের পর সোহেল রানা মাইনাস করেন ডিবক্সের ভেতর। জুয়েল রানা বাম পায়ের ফিনিশে গোল করে তিন গোলে এগিয়ে দেন আবাহনীকে।

    কিন্তু তাতে গোলক্ষুধা কমেনি ঘরের দলের। যার আক্ষেপটা বেশি ছিল সেই সানডের হেড ৭০ মিনিটে লাগলো বারপস্টে। কিন্তু আবাহনীর গোল উৎসবের দিনে সানডেকে আর আক্ষেপে পুড়তে হয়নি। ৭৬ মিনিটে ডিবক্সের ভেতর থেকে জীবনের কাছ থেকে পাস পেয়েছিলেন সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ডান কোণায়। সানডের নেওয়া শট গোলরক্ষক প্রায় আটকে দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। মানাং গোলরক্ষক আর ডিফেন্ডার দুইজনই হার মানেন। সানডেও অবশেষে নাম লেখার স্কোরশিটে। জীবনের মতো তাই সানডেও টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় গোলের দেখা পেলেন মানাংয়ের বিপক্ষে।

    এরপর ইনজুরি সময়ে ডিবক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের জোরলো শটে আবাহনীর জয়ের ব্যবধান আরও বাড়ান আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক মামুনুল ইসলাম। তাতে কেবল গ্লানিই বেড়েছে নেপালের দলটির।