বাংলাদেশের আশা উজ্জ্বল করে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ২৮৫/৭ (ফিঞ্চ ১০০, ওয়ার্নার ৫৩; ওকস ২/৪৬)
ইংল্যান্ড ৪৪.৪ ওভারে ২২১ (স্টোকস ৮৯, বেইরস্টো ২৭; বেরেনডর্ফ ৫/৪৪, স্টার্ক ৪/৪৩)
ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৬৪ রানে জয়ী
গ্যারেথ সাউথগেটকে দেখা গেল এক পলক। এড শিরানকে দেখা গেল গ্যালারিতে, মুঠোফোনে কী যেন দেখছেন। অবশ্য মাঠের খেলার যে অবস্থা ছিল, তাতে মুঠোফোনে মনযোগ বেশি থাকতেই পারে। লর্ডসে ইংল্যান্ডের যে ধুঁকছিল রীতিমতো। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের দিনটা হলো ভুলে যাওয়ার মতো, আর অস্ট্রেলিয়া তাদের হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে দলে গেল শেষ চারে। অ্যারন ফিঞ্চ সেঞ্চুরি দিয়ে শুরুটা করেছিলেন, আর জেসন বেরেনডর্ফ পাঁচ উইকেট নিয়ে করেছেন শেষটা। এই ম্যাচ হেরে ইংল্যান্ডের সমীকরণ কঠিন হয়ে গেল আরেকটু, সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা-পাকিস্তানের আশা উজ্জ্বল হলো একটু।
শুরুটা অবশ্য ইংল্যান্ডের মনমতোই হয়েছিল। অন্তত টসটা তো জিতেছিল অইন মরগান। আকাশ মেঘলা, লর্ডসে ব্যাট করার চেয়ে বল করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে করলেন। কিন্তু ক্রিস ওকস আর জফরা আর্চার ফুল লেংথের চেয়ে গুড লেংথেই বেশি মনযোগী ছিলেন। ওয়ার্নার আর ফিঞ্চ অবশ্য তাতে খুব একটা অখুশি হননি। ভাগ্যও একটু পক্ষে ছিল, ষষ্ঠ ওভারে স্লিপে কঠিন একটা ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেন ফিঞ্চ।
ভাগ্যটা এরপর কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন ফিঞ্চ আর ওয়ার্নার। মার্ক উড শুরু থেকেই লাইন খুঁজতে গিয়ে এলোমেলো, ওয়ার্নার-ফিঞ্চ ওদিকে তরতর করে গিয়ে যাচ্ছেন। ১৭.৫ ওভারে বিশ্বকাপে আরও একবার শত রানের জুটি গড়লেন দুজন, তার ঠিক পর পরেই দুজনেই পেয়ে গেছেন ফিফটি। আজ ওয়ার্নার পেয়েছেন ৫২ বলে, বরং ৬১ বলে ফিঞ্চই তার চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়েছেন।
দুজনকে কীভাবে থামানো যাবে, সেটা নিয়ে ইংল্যান্ড যখন ভেবে জেরবার, ইংল্যান্ডের ত্রাতা হয়ে এলেন মঈন আলী। বলটা একটু বাড়তি লাফিয়ে উঠল, ওয়ার্নার দিলেন সহজ ক্যাচ। খাওয়াজা শুরুতেই আউট হয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি বাটলার। সেটার মূল্য অবশ্য বেশি দিতে হলো না, ২৩ রান করে স্টোকসের বলে বোল্ড খাওয়াজা।
ইংল্যান্ড অবশ্য ততক্ষণে শুরুটা পেয়ে গেছে। ৩০ ওভার শেষে রান ১৬২, হাতে ৮ উইকেট। সেখান থেকে রান অন্তত ৩২০ তো হওয়ারই কথা। ফিঞ্চও সেঞ্চুরি পেলেন, কিন্তু তার পর পরেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। ইংল্যান্ডের ফিরে আসার শুরু সেখানেই। ম্যাক্সওয়েল চার-ছয়ে শুরু করলেন, কিন্তু ১২ রান করে মার্ক উডের বলে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। স্মিথের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে গেলেন স্টোইনিস, অস্ট্রেলিয়ার জন্য কিছুই ঠিকমতো হচ্ছে না তখন। স্মিথের যখন ফিফথ গিয়ারে যাওয়ার কথা, ৩৪ বলে ৩৮ রান করে ক্যাচ দিলেন লং অনে।
তাও ভালো অ্যালেক্স ক্যারি ছিলেন। তার ২৭ বলে ৩৮ রানের জন্য অন্তত ২৮৫ পর্যন্ত যেতে পারল অস্ট্রেলিয়া। শেষ ১০ ওভারে ৭০ রান তুলতে পারল অস্ট্রেলিয়া, যেটা অন্তত আরও ১৫টা রান বেশি হতেই পারত। শেষ দিকে ইংলিশ বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের অবদান তাতে অবশ্য কম নয়। লর্ডসে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার কীর্তি আছে মাত্র একবার, ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে কাইফ-যুবরাজে ভারতের সেই স্মরণীয় জয়। ইতিহাস গড়তে না হলেও কাজটা কম কঠিন নয়।
তবে ইংল্যান্ডের বোলারদের পর স্টার্ক-বেরেনডর্ফ দেখিয়ে দিলেন, কীভাবে এই উইকেটে বল করতে হয়। বেরেনডর্ফ ফুল লেংথ ডেলিভারি দিলেন প্রথম ওভারেই, বুঝতে না পেরে বোল্ড ভিন্স। জো রুটের জন্য বোধ হয় নিজের সেরা ডেলিভারিটা রেখে দিলেন মিচেল স্টার্ক। ইনসুইঙ্গার মিস করে এলবিডব্লু রুট। মরগান পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন ফাইন লেগে, আউট। একজনও ডাবল ফিগার ছুঁতে পারলেন না, ২৬ রানে ৩ উইকেট নেই ইংল্যান্ডের। জনি বেইরটো শুরুটা পেয়েছিলেন, কিন্তু কাজে লাগাতে পারলেন না। সেজন্য নিজের দায়টি বেশি। বেরেনডর্ফের নিরীহ এক বলে রীতিমতো অমার্জনীয় এক শট খেলে উইকেট দিয়ে এলেন ২৭ রানে।
ইংল্যান্ডের জন্য একে একে নিভিছে দেউটি, বাটলার আর স্টোকস আশা দেখাচ্ছিলেন অবশ্য। দুজনের জুটিতে ৭১ রান উঠল। বাটলার খেলছিলেন তার মতোই, স্টোইনিসের বলে শটটা চার বা ছয় হয়ে যাবে বলেও মনে হচ্ছিল। কিন্তু ডিপ স্কয়্যারলেগে চিলের মতো ছোঁ মেরে ক্যাচটা নিয়ে নিলেন খাওয়াজা, বাটলার ফিরলেন ২৫ রানে।
স্টোকস অবশ্য চেষ্টা করছিলেন। একটু টান লেগেছিল হয়তো, কিন্তু সেটা উপেক্ষা করে খেলছিলেন দারুণ সব শট। ম্যাক্সওয়েলের এক ওভারে মারলেন দুই ছয়, কামিন্সকে মারলেন দুই চার। সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন, তাকে ফেরাতে দরকার ছিল স্পেশাল কিছুর। সেটা করলেন স্টার্ক, স্বপ্নের একটা ইনসুইঙ্গার ইয়র্কারে বোল্ড করলেন স্টোকসকে। সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না স্টোকসের, নিভে গেল ইংল্যান্ডের শেষ আশাও। ওকস একটু চেষ্টা করেও পারলেন না, ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত একটা ক্যাচে রান আউট হয়ে গেলেন। এরপর বাকিটা ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। রশিদকে আউট করে যেটি করেছেন স্টার্ক।