• এএফসি কাপ
  • " />

     

    আফগান ডিফেন্ডার যখন আবাহনীর ত্রাতা

    আফগান ডিফেন্ডার যখন আবাহনীর ত্রাতা    

    মাসিহ সাইঘানির সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবলের পরিচয় ২০১৫ সালে। সাফ ফুটবলে আফগানিস্তানের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন সেদিন সাইঘানি। নেপালে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সেদিন বাংলাদেশ হেরেছিল ৪-০ গোলে।কর্নার থেকে হেডে বাংলাদেশের নেটে প্রথম বল জড়িয়েছিলেন সাইঘানি, হেডেই করেছিলেন গোল। যেমনটা করলেন গুয়াহাটিতে। এবার আবাহনীর হয়ে। তাতে ইতিহাস গড়ে আবাহনী চলে গেছে এএফসি কাপের নক আউট পর্বে। 

    আফগানদের হয়ে সাইঘানির অভিষেক হয়েছিল সেবারের সাফের কয়েক মাস আগে। এরপর পেরিয়ে গেছে সাড়ে তিন বছর। জার্মানিতে ক্লাব ফুটবল শুরু করা সাইঘানি এরপর ভারতে এক মৌসুম কাটিয়ে গত বছর যোগ দিয়েছিলেন আবাহনীতে। সাইঘানির সঙ্গে আবাহনীর চুক্তির অবশ্য আলাদা কারণও ছিল। এএফসি কাপে খেলতে স্কোয়াডে অন্তত একজন এশিয়ান খেলোয়াড় থাকতে হয়। সে কারণে আফগান সেন্টারব্যাককে পেতে আলাদা চেষ্টাও চালাতে হয়েছে আবাহনীকে। 
     


    সাইঘানি অবশ্য আবাহনীকে দিলেন তার চেয়েও বেশিকিছু। এএফসি কাপে গ্রুপের প্রথম ম্যাচ। নেপালের চ্যাম্পিয়ন মানাং মার্সিয়াংদি আবাহনীর প্রতিপক্ষ। অ্যাওয়ে ম্যাচ, তাদের সমর্থক সবকিছুই ছিল প্রতিপক্ষ। ছিল আর্টিফিসিয়াল টার্ফে খেলার অনভ্যস্ততা। সে ম্যাচে আবাহনী ধুঁকেছে পুরোটা সময়। বড় দলগুলোর চাপে পড়ে যাওয়া ম্যাচে ফল বের করে আনার অদ্ভুত এক দক্ষতা থাকে। টুর্নামেন্টটা যখন সব চ্যাম্পিয়নদের, তখন আবাহনীও সেই দক্ষতা দেখিয়েছিলেন সেদিন। সাইঘানির হেডে করা গোলেই এক গোলের জয় নিয়ে পুরো তিন পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল আবাহনী। সেই গোলের উৎসও ছিল কর্নার। সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় সাইঘানি। শর্ট কর্নারের পর ক্রস, সাইঘিন হেড। গোল। ক্ল্যাসিস সেন্টারব্যাক গোলও বলতে পারেন সেটাকে।

    সাইঘানির ওই গোলই ছন্দ তুলে দিয়েছিলে আবাহনীর। পরের ম্যাচে মিনার্ভার পাঞ্জাবের সঙ্গে ঘরের মাঠে ২-২ ড্র। তৃতীয় ম্যাচে চেন্নাইনের মাঠে আত্মঘাতী গোলে কপাল পোড়ে আবাহনীর। টুর্নামেন্টে ওই একটাই হার তাদের। এরপর আবারও সাইঘানি শো। চেন্নাইনের সঙ্গে ডিবক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক পেয়েছিল আবাহনী। বেলফোর্ট ছিলেন, জীবন-সানডে দুইজনই ছিলেন, ছিলেন মামুনুলও। কিন্তু ফ্রি কিক নিতে সেদিন এগিয়ে গিয়েছিলেন সাইঘানিই। এরপর বাম পায়ের নিখুঁত এক ফ্রি কিকে গোল করেছিলেন ৩২ বছর বয়সী। ওই ম্যাচ ৩-২ গোলে জিতে সেদিন থেকেই আবাহনীর স্বপ্ন দেখা শুরু। 

    মিনার্ভা পাঞ্জাব আগের ম্যাচেই ড্র করেছিল। আরও একবার সেদিকেই হাঁটছিল তারা। আর আবাহনীর স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়তে নিয়েছিল মিনার্ভার মাঠে। সেখান থেকে আরও একবার সেই সাইঘানিই টেনে তুললেন। ৯৩ মিনিটে আরও একবার ডিবক্সের ভেতর তিনি, তার কাছেই গেল বল। এরপরেরটা আপনি এতক্ষণে জেনে গেছেন নিশ্চয়ই।

    ৫ ম্যাচ শেষে তাই আবাহনীর সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন একজন সেন্টারব্যাকই। গোল করতে গিয়ে যে গোল ঠেকাতে ভুলে গেছেন তাও কিন্তু না। রক্ষণেও যথেষ্ট মনোযোগী তিনি। ৫ ম্যাচে যে আবাহনীর ৩ ক্লিনশিট তাতে বড় অবদান আছে ৬ ফুট ২ ইঞ্চির আফগান ডিফেন্ডারেরও। 

    সাইঘানি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন জার্মানির চতুর্থ ডিভিশনের লিগে। যুবদল থেকে উঠে এসেছিলেন। এরপর প্রায় পনেরো বছর জার্মানির চতুর্থ আর পঞ্চম ডিভিশনে খেলে ভারতের আই লিগের ক্লাব আইজওয়ালে এসেছিলেন তিনি। এক বছর ভারতে কাটিয়ে এরপর গায়ে চড়িয়েছেন আবাহনীর জার্সি। বাংলাদেশের সফলতম ক্লাবের হয়ে সাইঘানি যা করছেন, এরপর হয়ত বাংলাদেশের বিপক্ষে করা ওই গোলের কথা ভুলেই যাবে লোকে। দেশের বাইরে আপাতত আবাহনীই প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাদেশের। সাইঘানি তাই যতখানি নিয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি কিছু দিয়ে যাচ্ছেন।