• বাংলাদেশের শ্রীলংকা সফর
  • " />

     

    মালিঙ্গার ম্যাচে অনেক প্রশ্ন থাকল বাংলাদেশের সামনে

    মালিঙ্গার ম্যাচে অনেক প্রশ্ন থাকল বাংলাদেশের সামনে    

    শ্রীলংকা ৫০ ওভারে ৩১৪/৮ (পেরেরা ১১১, মেন্ডিস ৪৮; শফিউল ৩/৬২, মোস্তাফিজ ২/৭৫, সৌম্য ১/১৭)

    বাংলাদেশ ৪১.৪ ওভারে ২২৩ অলআউট (মুশফিক ৬৭, সাব্বির ৬০; মালিঙ্গা ৩/৩৮, প্রদীপ ৩/৫১)

    ফলঃ শ্রীলংকা ৯১ রানে জয়ী


    ম্যাচটা বাংলাদেশ আর শ্রীলংকার। তবে আজ সেটা ছিল কাগজে কলমে। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের গ্যালারি আজ ঠাসা ছিল একজনের জন্যই। মাঠে ঢুকতে তার ছবি, গ্যালারিতে তার নামে ‘মিস ইউ স্লিঙ্গা’ লেখা ব্যানার। তা আজ যেমন বল করলেন, তাতে প্রশ্নটা উঠতেই পারে, ‘কেন যাচ্ছ?’ বিদায়ী ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গার শুরুর ওই দুর্দান্ত স্পেল যে সেই এলোমেলো করে দিল বাংলাদেশকে, সেটা থেকে আর পরে ঘুরেই দাঁড়াতে পারেনি। ৯১ রানের হারটা বাংলাদেশের জন্য রেখে গেল অনেক প্রশ্নও।

    তামিম ইকবালের জন্য ম্যাচটা ছিল অনেক কঠিন। বিশ্বকাপে রান পাননি, এমনিই চাপে ছিলেন। আজ টসে হেরে শুরুটাও হলো খারাপ। প্রথম দিকে প্রায় তিন বছর পর দলে ফেরা শফিউল ইসলামের বলে আভিস্কা ফার্নান্দোর আউট হওয়াটাই ছিল একমাত্র সুখস্মৃতি। এরপর কুশল পেরেরা একাই এলোমেলো করে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলিংকে। শেষের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েও যে মাশুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

    শুরুর দিকে অধিনায়ক করুনারত্নে আর পেরেরা জুটিটাই আসলে শ্রীলংকার বড় স্কোরের ভিত গড়ে দিয়েছে। দুজন দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেছেন ৯৭ রান, তাও আবার ওভারপ্রতি সাত গড়ে রান তুলেছেন। শুরুর দিকেই মোসাদ্দেক, রুবেল, শফিউল, মিরাজদের এনেও জুটিটা ভাঙতে পারছিলেন না তামিম। শেষ পর্যন্ত করুনারত্নেকে আউট করে মিরাজই ভেঙেছেন জুটিটা। তবে বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল শুরু থেকেই গা ছাড়া। শ্রীলংকার প্রথম বাউন্ডারিই ছিল সাব্বিরের মিসফিল্ডিং থেকে। পুরো ম্যাচে সেটার কোনো উন্নতি ছিল না। শরীরী ভাষায়ও একদমই নেতিবাচক মনে হচ্ছিল তামিমদের।

    সেই সুযোগটাই নিয়েছেন পেরেরা। করুনারত্নে আউট হয়ে গেলেও কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিস মিলে বাংলাদেশকে আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেছেন ১০০ রান। এর মধ্যে অবশ্য মেন্ডিসের সহজ ক্যাচ মিস করেছেন মাহমুদউল্লাহ। শ্রীলংকার জন্য তখন ৩৫০ রান মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব।

    তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। পেরেরা সেঞ্চুরি পেয়েছেন, তবে অপয়া ১১১ রানে শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন সৌম্য সরকারের বলে। তবে মেন্ডিসের আউট পুরোটা তার উদারতায় পাওয়া। রুবেলের বলটা মুশফিকেরর গ্লাভসে জমার পর সেভাবে আবেদনই করেনি বাংলাদেশ। আম্পায়ারও আউট দেননি। কিন্তু মেন্ডিস নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওয়াক করার। ২১২ রানে তখন চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলংকা।

    লাহিরু থিরিমান্নে ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এরপর হাল ধরেছেন, তবে রানের গতিটা কমিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। সেটা বাড়াতে গিয়ে থিরিমান্নে আউট হয়েছেন মোস্তাফিজের বলে। থিসারা পেরেরা খুব বেশি কিছু করতে পারেননি আজ। ম্যাথউস ছিলেন শেষ পর্যন্ত, তবে ৪৮ রানে আউট হয়ে শেষ দিকে আর সেভাবে ঝড় তুলতে পারেননি। বিস্ময়করভাবে আজ বাংলাদেশের সেরা বোলার সৌম্য করেছেন পাঁচ ওভার। শফিউল অবশ্য নতুন বলে ভালোই করেছেন, কিন্তু রুবেল আর মোস্তাফিজের বোলিং ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। তারপরও শেষ ১০ ওভারে যখন ৬৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ, সেটাতে তাদের অসন্তুষ্ট হওয়ার খুব বেশি কারণ ছিল না। ফিল্ডিং ভালো হলে অবশ্য ৩০০র নিচেই আটকাতে পারত বাংলাদেশ।

    কিন্তু জয়ের স্বপ্নটা মিলিয়ে যাওয়া শুরু করেছে প্রথম ওভার থেকেই। মালিঙ্গার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড অধিনায়ক তামিম, সেটাও পঞ্চম বলে। মিঠুন তিনে নেমে ভুগেছেন শুরু থেকেই, আউটও হয়েছেন ক্রস ব্যাটে জঘন্য এক শট খেলতে গিয়ে। সাকিবের অভাব পূরণ কতটা কঠিন, বুঝিয়ে দিয়েছেন তাও। সৌম্য ভালোই খেলছিলেন, কিন্তু মালিঙ্গার আরেকটি দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড তিনিও। মাহমুদউল্লাহ কুমারের বল্টা সোজা তুলে দিয়েছেন থার্ডম্যানে। ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ম্যাচ আসলে ওখানেই শেষ।

    তবে সাব্বির রহমান ও মুশফিকুর রহিম এরপর একটু পালটা আক্রমণের চেষ্টা করেছিলেন। ১১১ রান যোগ করেছিলেন পঞ্চম উইকেটে, এর মধ্যে সাব্বির লেয়ে গেছেন ফিফটু। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতেই সাব্বির ডি সিলভার বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। মোসাদ্দেক আর মুশফিক ভালো একটা জুটি গড়তে পারলে আশা ছিল। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝিতে মোসাদ্দেক হয়ে গেছেন রান আউট। মুশফিক এর মধ্যে ফিফটি পেয়ে গেছেন। কিন্তু মিরাজের কাছ থেকে সঙ্গ পাননি। শেষ দিকে চাপটাও হয়ে যাচ্ছিল বেশি। সেটা থেকে মুক্তি পেতে স্কুপ করতে গিয়ে মুশফিকও আউট হয়ে গেছেন। এরপর মোস্তাফিজ ক্যারিয়ারসেরা ১৮ রান করলেও সেটা পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমিয়েছে।

    তবে তামিমের অধিনায়কত্ব, বাজে ফিল্ডিং, টপ অর্ডারের ব্যর্থতা, নেতিবাচক শরীরী ভাষাসহ বাংলাদেশ ম্যাচটা শেষ  করেছে অনেক অনেক প্রশ্ন রেখে।