শেষ ম্যাচেও উড়ে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ
৩য় ওয়ানডে, কলম্বো
শ্রীলঙ্কা ২৯৪/৮, ৫০ ওভার
বাংলাদেশ ১৭২ অল-আউট, ৩৬ ওভার
শ্রীলঙ্কা ১২২ রানে জয়ী
সিরিজটা হতে পারতো বিশ্বকাপের পর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার। এ ম্যাচটা হতে পারতো সেই সিরিজ আগেই হেরে গিয়ে একটা সান্ত্বনা পুরষ্কার পাওয়ার। বাংলাদেশ পেলো না কিছুই। কলম্বোতে শেষ ওয়ানডেটাও একপেশে লড়াইয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে হুট করে খেই হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কার ঝড়ে পিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের কিছুই করতে পারেনি। ২৯৫ রানতাড়ায় সৌম্য সরকার ও তাইজুল ইসলাম ছাড়া বাকিদের স্কোর এমন : ১৪, ২, ১০, ৪, ৯, ৭, ৮, ১, ২। ৮৪ বল বাকি থাকতেই তাই ১২২ রানের বড় পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
আর প্রেমাদাসার এ উইকেট ব্যাটিং-সহায়ক হলেও রানতাড়া খুব একটা সহজ হতো না, বল ব্যাটে আসতে দেরি করেছে প্রায়। সেসব আরও কঠিন হয়ে গেল নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয়। দুই ওপেনার ফিরেছেন কাসুন রাজিথার বলে, অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে এজড হয়েছেন তামিম। আর এনামুল দিয়েছেন অতি-আক্রমণাত্মক হওয়ার খেসারত, টানা দুই চারের পর আবার তুলে মারতে তিনিও দিয়েছেন ক্যাচ।
দাশুন শনাকার বলে বাঁধ ভেঙেছে আগের দুই ম্যাচে বেশ ধৈর্য্যের পরিচয় দেওয়া মুশফিকুর রহিমও, বাইরের বলে তাড়া করতে তিনিও স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ। সে বোলারের বলেই টপ-এজড হয়ে ফাইন লেগে লাহিরু কুমারার তিনবারের চেষ্টায় ধরা পড়েছেন মিঠুন। কুসাল পেরেরার দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে মাহমুদউল্লাহর ফেরা বাংলাদেশের দুর্দশার অফিশিয়াল রূপ দিয়েছে এরপর, ৮৩ রানেই তারা হারিয়েছে ৫ উইকেট।
শ্রীলঙ্কার ফিল্ডিং ছিল বাংলাদেশের ঠিক বিপরীত, এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভা নিয়েছেন আরেকটি দারুণ ক্যাচ। কুমারার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন সাব্বির, একই বোলারের বলে ফিরেছেন মিরাজও, সৌম্যকে একা রেখে। সৌম্য ছিলেন, ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৬১ বলে। ৩ চারের সঙ্গে ১টি ছয় মেরেছিলেন, দনঞ্জয়ার বলের লাইন না বুঝে ব্যাট চালিয়ে হয়েছেন বোল্ড।
বাংলাদেশের পরাজয় ছিল এরপর সময়ের অপেক্ষা, তাইজুলের ইনিংস সেটা বিলম্বিত করেছে এরপর একটু। ২৮ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি, তবে শফিউল বা রুবেল সঙ্গ দিতে পারেননি তাকে বেশিক্ষণ। সিরিজের বাংলাদেশের শেষটাও হয়েছে তাই দুর্দশাতেই।
এর আগে দিমুথ করুনারত্নে ও কুসাল পেরেরার গড়ে দেওয়া ভিতে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও কুসাল মেন্ডিসের জুটির পর দাশুন শনাকার ১৪ বলে ৩০ রানের ক্যামিওতে তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাটিং করে ২৯৪ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা।
চোটের কারণে এদিন খেলেননি মোস্তাফিজুর রহমান, ডেথ ওভারে তার অনুপস্থিতিটা টের পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলেছে ১০৬ রান। এদিনও দ্রুত ব্যবধানে ২ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশ, ২য় উইকেটে ৮৩ রানের জুটির পর করুনারত্নে ও পেরেরা ফিরেছিলেন পরপর দুই ওভারে, ২ রানের ব্যবধানে। তবে সে চাপ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ, পেরেরা-ম্যাথিউসের ১০১ রানের জুটি সেটা আলগা করেছে শ্রীলঙ্কার পক্ষে দারুণভাবেই। সে জুটিটা অবশ্য একটু আগেভাগেই ভাঙতে পারত বাংলাদেশ, শফিউলের লেগসাইডের বলে ম্যাথিউসের এজ মুশফিক ধরতে না পারায় হয়নি সেটি।
৫৪ রান করে মেন্ডিস অবশেষে ফিরেছেন সৌম্যর স্লোয়ারে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে অনেক্ষণ অপেক্ষা করে থাকা সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়ে। শনাকা নেমেছেন, ম্যাথিউসের সঙ্গে তুলেছেন ঝড়। ৪৫তম ওভারে শফিউল গুণেছেন ২০ রান, শনাকা তাকে মেরেছেন দুইটি ছয়ের সঙ্গে একটি চার। শফিউলের বলেই সেই শনাকার ক্যাচ ছুটে এসে দারুণভাবে ধরে দায়মোচনের চেষ্টা করেছিলেন সাব্বির, যিনি আগের ওভারেই ফেলেছিলেন ম্যাথিউসের ক্যাচ। তৃতীয় জীবনে ম্যাথিউস যোগ করেছেন আরও ২৪ রান। শেষ ওভারে ম্যাথিউস ও আকিলা দনঞ্জয়াকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন সৌম্য, তবে ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে বেশ, শেষ ৬ ওভারে ৭৩ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা।
ইনিংসের শুরুটা অবশ্য ভাল ছিল বাংলাদেশেরই। পঞ্চম ওভারে শফিউলের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে হোয়্যাকের চেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে আভিশকা ফার্নান্ডোর, তিনি হয়েছেন প্লামব। করুনারত্নে ও পেরেরা এরপর খোলস ছেড়ে ধীরে ধীরে বেরিয়েছেন, সতর্ক থেকে করেছেন রান। দুজনের জুটি ভেঙেছেন তাইজুল ইসলাম। তাকে স্কুপের মতো করতে গিয়ে সোজা বল তুলে মুশফিকের হাতে ধরা পড়েছিলেন ৪৬ রান করা করুনাত্নে। পরের ওভারে রুবেলের অফস্টাম্পের বাইরের বলে স্ম্যাশ করতে গিয়ে আউটসাইড-এজড পেরেরা, তিনি করেছিলেন ৪২।
এক তাইজুল ইসলাম ছাড়া বাকি সব বোলারই এদিন ছিলেন খরুচে। মোসাদ্দেককে বাদ দিয়ে এনামুলকে খেলানোয় পঞ্চম বোলারের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহকে, পরেরজন ৩ ওভারে গুণেছেন ২২ রান। রুবেল-শফিউল উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন যথাক্রমে ওভারপ্রতি ৬.১১ ও ৬.৮০ হারে। ৯ ওভারে ৫৯ রান দিয়েছেন মিরাজ।