• বাংলাদেশের শ্রীলংকা সফর
  • " />

     

    শারীরিক-মানসিকভাবে ফিট না থাকলে কারও খেলা উচিত নয়: সাকিব

    শারীরিক-মানসিকভাবে ফিট না থাকলে কারও খেলা উচিত নয়: সাকিব    

    ব্যাপারটা তার জন্য মিশ্র অনুভূতিরই হওয়ার কথা। শ্রীলংকা সিরিজে বাংলাদেশ দল যখন ধুঁকছিল, দূর থেকে তাকে দেখতে হয়েছে দলের হতশ্রী দশা। সাকিব আল হাসান অবশ্য চাইলে উদ্ধারও করতে পারতেন। চোট বা অন্য কিছু নয়, নিজেই বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সাকিব সেই সিদ্ধান্তের পক্ষেই কথা বললেন। জোর দিয়েই বললেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত না হলে কারও খেলা উচিত নয়।

    আজ সকালে বনানী বিদ্যানিকেতনে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতামূলক একটা অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন সাকিব। দেশে  ফেরার পর এই কদিনে বেশ ব্যস্ত সময় সময় কাটছে সাকিবের, কোথাও না কোথাও কোনো কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। শ্রীলংকায় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল আগেও, তবে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। আজই যেরকম এ নিয়ে খোলামেলা আলাপ করলেন। বিশ্বকাপে শ্রীলংকার ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় অনেকেই হতাশ ছিলেন, সেটাও মনে করিয়ে দিলেন, ‘হতাশাজনক অবশ্য্ই। এখানে আসলে লুকোচুরি করার কিছু নাই। বিশ্বকাপের সময় শ্রীলংকার সাথে আমাদের খেলাটা হয়নি। অনেকেই নিশ্চিত ছিল আমরা দুই পয়েন্ট পাব।  এই সিরিজে কিন্তু প্রমান হয়েছে সেই জয়টা নিশ্চিত ছিল না। আমরা জিততেও পারতাম হারতেও পারতাম। এই সিরিজটার কথা যদি বলি হতাশাজনক। সিরিজ হারলেও একটা ম্যাচ যদি জিতে আসতে পারতাম আমাদের আত্মবিশ্বাসের জন্য কাজে আসত সেটা হয়নি। হয়ত এখন সময় এসেছে ভালভাবে চিন্তা করে পরিকল্পনা করে পরের তিন-চার বছরের জন্য পরিকল্পনার সময় এসেছে।’

    সাকিব থাকলে এই সিরিজে বাংলাদেশের এমন দশা হয় কি না, সেই প্রশ্ন উঠল অবধারিতভাবেই। সাকিবও অনুমিত উত্তরটাই দিলেন, ‘দেখুন বলা যায় না। ক্রিকেট এক বলের খেলা। সো তিন বলে তিনদিন আউ্ট হয়ে গেলে হয়ত কিছু নাও করতে পারতাম, কোন অবদান নাও রাখতে পারতাম।’

    অবশ্য এই সিরিজে চাইলে থাকতেও পারতেন। তখন হয়তো বাংলাদেশ জিততও। তবে সাকিবকে ছাড়া কত কতটা অসহায়, সেটা প্রমাণ হয়ে গেল আরও একবার। এর আগে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের সময় বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেটা নিয়ে তখন সমালোচনা হয়েছিল। তখন যেটা বলেছিলেন, আজ সাকিবের কন্ঠে প্রায় একই সুর ‘এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ঠিক হতে পারে ভুলও হতে পারে-যখন একজন প্লেয়ার রেডি থাকে তখনই তার  খেলাটা উচিত। যখন সে রেডি না খেলাটা উচিত না। কিংবা পুরো ফিট না থেকে খেলাটা কঠিন হয়ে যায়।পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে এটা অনেক বড় ভুমিকা পালন করে যে আপনি কতটা ফিট কতটা আনফিট। সেটা মেন্টালি হতে পারে ফিজিক্যালি হতে পারে। এই জিনিসগুলো আমাদের বুঝতে হবে। কারণ এখন আধুনিক ক্রিকেট যে অবস্থায় এসেছে এত পরিমানে ম্যাচ থাকে এই জিনিসগুলো ম্যানেজ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ্। আপনি যদি অন্যান্য দলের দিকে তাকিয়ে দেখেন এই জিনিসিগুলো কিন্ত কোচিং স্টাফ বলেন, ফিজিও বলেন, ট্রেনাররা বলেন; ওদের মাধ্যমে প্লেয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করে ওরা কিন্তু ম্যানেজমেন্ট জিনিসগুলো চালু করেছে। কারণ একটা প্লেয়ারে পক্ষে টানা খেলা কখনো্ই সম্ভব না। সো এই ব্রেকগুলো ইম্পরটান্ট।  এই ব্রেকগুলো যখন থাকবে অনেক প্লেয়ারের সুযোগ আসবে। পাইপ লাইনের প্লেয়ারও তৈরী হবে বলে আমি মনে করি।’

    শ্রীলংকা সিরিজেই যেমন বাংলাদেশ দলের অনেককে দেখে মনে হয়েছে, তাদের মন বা শরীর কোনোটাই চলছিল না। কিন্তু একজন ক্রিকেটার খেলতে না চাইলে সেটা বোর্ডকেই বা বলবেন কীভাবে? ব্যাপারটা দেখার দায়িত্ব কার? সাকিব বললেন, দেখেন এটা দুজনেরই দায়িত্ব। বোঝারও দায়িত্ব। যখন একজন প্লেয়ার বলছে যে না, আমার মনে হয় আমার ব্রেক নেওয়া উচিত। কিংবা কোচিং স্টাফ থেকে বলছে তোমার এই ব্রেকটা নেওয়া উচিত। সো প্লেয়ারের ক্ষেত্রেও এটা বোঝা উচিত, কোচিং স্টাফদেরও বোঝা উচিত।’

    ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলার ব্যাপারে যেমন ভারতের উদাহরণ দিলেন সাকিব, ‘আমি ভারতের একটা ভাল উদাহরণ দিতে পারি।  লাস্ট বছরে ওদের ইতিহাসে কম ইনজুরি হয়েছে প্লেয়ারদের। এর একটা বড় কারণ ওরা বাই রোটেশন পলিসিতে খেলেছে। এটাতে যেটা হয়েছে, ওদের অনেক প্লেয়ার তৈরী হয়েছে। অনেকে প্লেয়ার এক্সপোজার পেয়েছে। এট দ্য সেইম টাইম ওদের প্লেয়াররা যখন যে এসেছে তখন  ফ্রেশ অবস্থায় খেলতে পেরেছে ও পারফর্ম করতে পেরেছে। আপনি যদি দুএকজন দেখেন, বিরাট কোহলিসহ সবাইকে কিন্তু রেস্ট দিয়েছে। কোন না কোন ফরম্যাটে, কোন না কোন সিরিজে সবাই রেস্ট পেয়েছে। তিনটা ফর্মেট খুব প্লেয়ারই এক সিরিজে খেলেছে। এই জিনিসগুলো আমাদের বুঝে কাজ করতে হবে। কোচিং স্টাফ, বোর্ড ও প্লেয়ারের মধ্যে খুব ভাল একটা সমন্বয় থাকতে হবে। তা না হলে এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা তৈরী কিংবা নেগেটিভ কথা তৈরী হতে পারে যদি তথ্যগুলো ঠিকভাবে না যায়।’

    বাংলাদেশে সাকিব ছাড়া আর কেউ চোট ছাড়া সেভাবে এখন পর্যন্ত বিশ্রামই নেননি।  কিন্তু সাকিবের কথা না হয় বোর্ড মানল, অন্যদের কথা কি তারা শুনবেন?