• বাংলাদেশের শ্রীলংকা সফর
  • " />

     

    শ্রীলংকায় সেই শ্রীহীন বাংলাদেশেরই দেজাভুঁ

    শ্রীলংকায় সেই শ্রীহীন বাংলাদেশেরই দেজাভুঁ    

    বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৩৮/৮ (মুশফিক ৯৮*, মিরাজ ৪৩; দনঞ্জয়া ২/৩৯, প্রদীপ ২/৫৩)

    শ্রীলংকা ৪৪.৪ ওভারে ২৪২/৩ (ফার্নান্দো ৮২, ম্যাথিউস ৫২*, মেন্ডিস ৪১ *; মোস্তাফিজ ২/৫০, মিরাজ ১/৫১)

    ফল: শ্রীলংকা ৭ উইকেটে জয়ী


    লাসিথ মালিঙ্গা নেই। আর টসে জিতে আগে ব্যাট করল বাংলাদেশ। মোটা দাগে কলম্বোতে প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডের মধ্যে পার্থক্য এটুকুই। সেই হতশ্রী পারফরম্যান্স, নেতিবাচক শরীরী ভাষা, মুশফিক ছাড়া টপ ও মিডল অর্ডারের উইকেট দিয়ে আসা, নখদন্তহীন বোলিং-শ্রীলংকা সিরিজে ক্লান্ত-শ্রান্ত বাংলাদেশ অসহায় আত্মসমর্পণ করল দ্বিতীয় ম্যাচেও। ৭ উইকেটের জয়ে ৪৪ মাস পর দেশের মাটিয়ে সিরিজ জিতল শ্রীলংকা, আর পর পর দুইটি ম্যাচ হেরে শ্রীলংকার মাঠে কোনো সিরিজ জয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই রইল বাংলাদেশের। তৃতীয় ম্যাচেও হারলে ধবলধোলাইয়ের দুঃস্মৃতি নিয়েই ফিরতে হবে দেশে।  

    অথচ টস ভাগ্যটা আজ প্রসন্ন হয়েছিল তামিমের। শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিতে দুবার ভাবতে হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়ককে। কিন্তু আগের দিনের মতো আজও ব্যাটিংয়ের শুরুটা হয়েছে ভুলে যাওয়ার মতো। তাও আগের দিন প্রায় আনপ্লেয়বল দুইটি ডেলিভারি হয়েছিল, আজ তো বেশির ভাগ দায় নিজেদেরই। নুয়ান প্রদীপের যে বলে সৌম্য সরকার এলবিডব্লু হলেন, সেই ফুলটসে আউট হওয়াটাই অপরাধ। তামিম ইকবালও আরও একবার ধুঁকেছেন, ৩০ বলে আজ ফিরে গেছেন ১৯ রানে। এবং আরও একবার আউট হয়েছেন অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে এনে এনে। এমনিতে আউটটা হয়তো দুর্ভাগ্য বলা যায় কিছুটা, কিন্তু পর পর ছয় ম্যাচে তামিমের বোল্ড হওয়া বলছে, তার নিজেকে হারিয়ে খোঁজার কারণ মনস্তাত্বিক থেকেও হয়তো বেশি কিছু। দুই ওপেনারকেই ৩১ রানের মধ্যে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

    তিন নম্বরে মোহাম্মদ মিঠুন ব্যর্থ আরও একবার। আগের ম্যাচের মতো এবারও দায় নিতে হবে তাকেই। দনঞ্জয়ার বলটা যে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচই প্র্যাকটিসই করিয়েছেন। অবশ্য ১১ রানের দৃষ্টিকটু ইনিংসটা তাকে এরকম মুক্তিই দিয়েছে। সেটা দিয়েছে ম্লান মাহমুদউল্লাহকেও, ১৮ বলে ৬ রান করে আউট হয়েছেন একটু টার্ন করা বলে। সেখানেও বোলারের চেয়ে নিজের মনযোগ নড়ে যাওয়ার ভূমিকাই বেশি। ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আগের ম্যাচেরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে যেন।

    সাব্বির একটি চার মেরে অবশ্য আগের ম্যাচের মতো ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু এখানেও দেজাভু। আগের বার যেমন মোসাদ্দেকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল মুশফিকের, আজ হলো সাব্বিরের সঙ্গে, ইয়েস-নো করতে করতে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে তাই রান আউট হয়ে গেছেন ১১ রান করে। মোসাদ্দেকের সুযোগ ছিল বড় কিছু করার। কিন্তু তিনিও ধুঁকতে ধুঁকতে উদানার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন ১৩ রান করে। ১১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সামনে ২০০র নিচে অলআউট হয়ে যাওয়ার চোখরাঙানি।

    তবে মুশফিক ছিলেন। শুরুতে পরিস্থিতির কারণে দেখেশুনে খেলছিলেন। ভাগ্যও সহায় ছিল তার, অন্তত দুবার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন। তবে মিরাজ আসার পরেই হঠাৎ বদলে যায় দৃশ্যপট। দুজন বুঝিয়ে দেন উইকেটে এমন কোনো জুজু নেই। দুজন সপ্তম উইকেটে ৮৪ রান যোগ করেন মাত্র ৮২ বলে। মিরাজ যখন ফিফটি পাবেন বলে মনে হচ্ছিল, কুমারার বলে আউট হয়ে গেছেন ৪৯ বলে ৪৩ রান করে।

    তবে মুশফিক ঠাণ্ডা মাথায় শেষ পর্যন্ত হাল ধরছিলেন। ৪৯তম ওভারে পর পর চার-চার-ছয় মেরে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন। শেষ ওভারে আরেকটু স্বার্থপর হলে সেটা হয়তো পেতেও পারতেন। তবে ৯৮ রান নিয়েই শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ অবশ্য তখন ২৩৮ রান করে ফেলেছে, একটা সময় যা মনে হচ্ছিল অসাধ্য।

    এই স্কোর নিয়ে এই উইকেটে অন্তত লড়াই করা যেত। কিন্তু এলোমেলো বোলিংয়ে শুরু থেকেই ব্যাটনটা শ্রীলংকার হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ।  আভিস্কা ফার্নান্দো দেখিয়ে দিয়েছেন, কেন তাকে শ্রীলংকা ক্রিকেটের বড় সম্পদ মনে করা হচ্ছে। দিমিথ করুনারত্নের সঙ্গে ৭১ রানের জুটিটা এনে দিয়েছে জয়ের ভিত। এরপর মিরাজ আক্রমণে এসে করুনারত্নেকে ফিরিয়েছেন। কিন্তু কুশল পেরেরার সঙ্গে ফার্নান্দো এরপর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ছিটকে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। এক তাইজুল ছাড়া বাকি সব বোলারই ছিলেন নির্বিষ। এরপরের উইকেটগুলো অবশ্য শ্রীলংকাই দিয়ে এসেছে বাংলাদেশকে। ৭৫ বলে ৮২ রান করে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়েছেন ফার্নান্দো, পেরেরাও ফিজের বলে ফিরে গেছেন ৩০ রান করে। অবশ্য মোস্তাফিজের বোলিং ছিল একদমই ধারহীন, পার্টটাইমার সৌম্য-মোসাদ্দেকও করতে পারেননি কিছু। আর ফিল্ডিং তো আগের ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেই। পেরেরার ক্যাচ ছেড়েছেন মোসাদ্দেক, আর গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। শেষে কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস অবশ্য বাংলাদেশকে কোনো সুযোগ দেননি, ৫.২ ওভার বাকি থাকতেই শেষ করে দিয়েছেন ম্যাচ।