• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    টাইব্রেকারে লিভারপুলকে হারিয়ে কমিউনিটি শিল্ড জিতল সিটি

    টাইব্রেকারে লিভারপুলকে হারিয়ে কমিউনিটি শিল্ড জিতল সিটি    

    ২০১৭-এর পর থেকে ইনজুরির কারণে মাঠেই দেখা যায়নি তাকে। ম্যানচেস্টার সিটি গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, এই মৌসুম দিয়েই নতুন করে শুরু করতে চান ক্যারিয়ার। ২০১৯-২০ মৌসুমের শুরুতেই স্বরূপে ফেরারই ইঙ্গিত দিলেন ব্রাভো। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে লিভারপুলকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়ে কমিউনিটি শিল্ড জিতেই মৌসুম শুরু করল সিটি। ২০০২ সালে আর্সেনালের পর প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ এবং কমিউনিটি শিল্ড জেতা ক্লাব বনে গেল 'সিটিজেন'রা।

    টাইব্রেকারে জয়সূচক পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। কিন্তু জয় নিশ্চিত হওয়ার পর হেসুস নয়, সিটির আনন্দ-উল্লাসের মধ্যমণি বনে গেলেন ব্রাভো। পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত কিপিং করেছেন তিনি, এতদিন মাঠের বাইরে থাকলেও সামর্থ্যে মরিচা পড়েনি এতটুকু। নির্ধারিত সময়ের শেষদিকে ব্রাভো না থাকলে শেষ হাসি হাসত লিভারপুলই। শেষ ১০ মিনিটে অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল ফিরিয়েছেন তিনি। ৮৮ মিনিটে রদ্রির ভুলে ব্রাভোকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন সালাহ, কিন্তু তাকে দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন চিলিয়ান গোলরক্ষক। নাটক শেষ হয়নি তখনও। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আবারও সালাহকে ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। ফিরতি বলে সালাহর বুদ্ধিদীপ্ত চিপ অবিশ্বাস্যভাবে লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন ওয়াকার।

    যোগ করা সময়ে আবারও সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল। বদলি ফুটবলার জেরদান শাকিরিকেও খালি হাতেই ফিরিয়েছেন ব্রাভো। টাইব্রেকারে সিটির হয়ে গোল করেছেন ইলকে গুন্ডোয়ান, বের্নার্দো সিলভা, ওলেকজান্ডার জিনচেঙ্কো, ফিল ফোডেন। লিভারপুলের হয়ে মোহামেদ সালাহ, অ্যালেক্স-ওক্সলেড চেম্বারলেইন, জেরদান শাকিরি গোল করলেও মিস করেছেন জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডাম। মৌসুমের প্রথম ম্যাচে সার্জিও আগুয়েরো, সাদিও মানে না খেললেও লিভারপুল, সিটি- কোনও দলেরই আক্রমণের ধার কম মনে হয়নি। প্রথম ২০ মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল দু’দলই। ৪ মিনিটেই লিড নিতে পারত সিটি। কিন্তু স্টার্লিংয়ের পাস থেকে লিরয় সানের শট চলে যায় গোলের বাইরে। তবে প্রথমার্ধের সেরা সুযোগ দুটি পেয়েছিলেন সালাহ।

     

     

    ১০ মিনিটে জন স্টোনসের ভুলে বল পেয়ে মিশরীয় ফরোয়ার্ডকে পাস বাড়ান রবার্তো ফিরমিনো। বল নিয়ন্ত্রণে আনার সুযোগ থাকলেও ফার্স্ট টাচেই শট নেন সালাহ, বল চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। কিন্তু ১৭ মিনিটে সিটি লেফটব্যাক ওলেকজান্ডার জিনচেঙ্কোকে কাটিয়ে নেওয়া শটটি এবারও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি সালাহ। লিড নিতে না পারার চড়া মাশুলই দিতে হয়েছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলকে। ১২ মিনিটে ডেভিড সিলভার ফ্লিক থেকে ডিবক্সে বল পেয়ে যান স্টার্লিং, প্রথম টাচে তার নেওয়া শট অ্যালিসনকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় লিভারপুলের জালে। সিলভার পাসটি দারুণ হলেও ডিবক্সে স্টার্লিংকে মার্ক করেননি ভার্জিল ভ্যান ডাইক, জো গোমেজের কেউই। সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড। ওয়েম্বলিতে নিজের খেলা শেষ ৪ ম্যাচে ৬ গোল করলেন স্টার্লিং।

    সিটি লিড নিলেও ছেড়ে কথা বলেনি লিভারপুল, প্রথমার্ধে লড়াইটা হয়েছে সমানে সমান। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এগিয়ে থেকেও সিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা ছিলেন উত্তপ্ত। ৩৭ মিনিটে গোমেজ, সিলভাকে ফাউল করে বসলেও রেফারি হলুদ কার্ড না দেখানোয় ডাগআউটে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পেপ। এই মৌসুম থেকে ফুটবলারদের মত ম্যানেজারদেরও হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করার নিয়ম করেছে ফিফা। নতুন নিয়মেই ইংলিশ ফুটবলে প্রথম ম্যানেজার হিসেবে হলুদ কার্ড দেখতে হল গার্দিওলাকে। প্রথমার্ধে সালাহর মিসের কারণে সমতায় ফেরা হয়নি লিভারপুলের।

    আর দ্বিতীয়ার্ধে গোল এবং ‘অল রেড’দের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাগ্য। ৪৮ মিনিটে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের কর্নার থেকে ভ্যান ডাইকের হাফভলি সিটি গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভোকে পরাস্ত করে লাগে ক্রসবারে। কিন্তু বল পুরোপুরি লাইন অতিক্রম না করায় আবারও খালি হাতেই ফিরতে হয় লিভারপুলকে। মিনিট দুয়েক পর হতাশা আরও বেড়ে যায় তাদের। কর্নার থেকে বল নিয়ন্ত্রণে এনে সিটির দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন সালাহ, কিন্তু বল প্রতিহত হয় বারপোস্টে। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও আরেকটু হলেই মিসের চড়া মাশুল দিতে হত লিভারপুলকে।

     

     

    ৬২ মিনিটে ডিবক্স থেকে লিভারপুলের দুজনকে কাটিয়ে স্টার্লিংয়ের দিকে থ্রু পাস বাড়ান রাইটব্যাক কাইল ওয়াকার। অ্যালিসনকে একা পেয়ে যান স্টার্লিং, পাশে ফাঁকায় দাঁড়িয়েছিলেন ওয়াকার। কিন্তু সতীর্থকে পাস না বাড়িয়ে শট নিতে গিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেন স্টার্লিং। ডাগআউটে গার্দিওলার মাথায় হাত, হতাশায় শূন্যদৃষ্টিতে স্টার্লিংয়ের দিকে তাকিয়ে সিটির ফুটবলাররা। এবার অবশ্য মিসের মাশুল দিতে হয়েছে সিটিকেই।

    ৭৭ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে সিটি ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে বল পান ভ্যান ডাইক। ডাচ ডিফেন্ডারের চিপ করা ক্রসে হেড করে অবশেষে লিভারপুলকে সমতায় ফেরান আরেক সেন্টারব্যাক জোয়েল মাতিপ। সমতায় ফেরার কিছুক্ষণ বাদেই লিডও নিয় নিতে পারত লিভারপুল। কিন্তু ৮৩ মিনিটে সালাহর মাইনাস থেকে বদলি ফুটবলার নাবি কেইটার শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। শেষ পর্যন্ত চিলিয়ান গোলরক্ষকের বীরত্বেই শেষ হাসি হাসে সিটি।