চ্যাম্পিয়নের মতোই শুরু করল সিটি
প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুল শুরুটা করেছিল দারুণ। চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পরীক্ষা ছিল আরেকটু কঠিন। একে তো খেলা নিজেদের মাঠে নয়, তার ওপর প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট হাম। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই চ্যাম্পিয়নরা রাজার মতো শুরু করল। ধারাভাষ্যকারের ভাষায়, নতুন মৌসুমে পুরনো সিটিকেই যেন দেখা গেল। ওয়েস্ট হামকে পাঁচ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে, হ্যাটট্রিক পেয়েছেন রাহিম স্টার্লিং।
প্রথমার্ধে ম্যানচেস্টার সিটি বার বার একই কৌশলে পরীক্ষা করে গেছে ওয়েস্ট হামের রক্ষণ। কাইল ওয়াকার বার বার ওভারল্যাপ করার চেষ্টা করেছেন, রিয়াদ মাহরেজও ডান দিক থেকে কাট করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। ৯ মিনিটে প্রথম চেষ্টা করেছেন মাহরেজ। ওয়াকারের কাছ থেকে বল পেয়েই বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে শট করেছিলেন। সেটা ঠেকিয়ে দিতে খুব সমস্যা হয়নি ওয়েস্ট হাম গোলরক্ষক ফাবিয়ান্সকির।
ডেভিড সিলভাও ১৫ মিনিটে বাঁ পায়ে আরেকটি শট করেছিলেন পোস্টের বাইরে থেকে। কিন্তু সেটা বেরিয়ে গেছে পোস্ট ঘেঁষে। ২১ মিনিটে আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মাহরেজ। ডি ব্রুইনের পাসটা বক্সের ভেতর নিয়ে দারুণভাবে কাট ব্যাক করে ছিটকে ফেলেছিলেন ক্রেসওয়েলকে। কিন্তু কয়েক গজ দূর থেকেও বাঁ পায়ের শট পোস্টে রাখতে পারেননি। সেই হতাশা মুছে প্রথম গোলের জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সিটিকে। ২৪ মিনিটে চ্যাম্পিয়নদের হয়ে এই মৌসুমের প্রথম গোলটা পেয়ে যান গ্যাব্রিয়ে্ল জেসুস। ডান দিক থেকে ওভাল্যাপ করে উঠে এসেছিলেন কাইল ওয়াকার, মাহরেজের বলটা ধরে মাইনাস করলেন বক্সে। চিলের মতো উড়ে এসে জেসুস আলতো এক ছোঁয়ায় বল জড়িয়ে দিলেন জালে। সেটি এতোই আলতো ছিল, প্রথম দেখায় আত্মঘাতী গোল বলেই ভুল হয়েছিল! লন্ডনে সর্বশেষ যে পাঁচ ম্যাচে একাদশে ছিলেন, প্রতিবারই গোল পেয়েছেন জেসুস।
এরপর অবশ্য ওয়েস্ট হাম খানিকটা গা ঝাড়া ওঠার চেষ্টা করে। রেকর্ড সাইনিং সেবাস্টিয়ান হ্যালার একটা কঠিন সুযোগ পেয়েছিলেন, কাজে লাগাতে পারেননি। ডি ব্রুইন, জেসুসরা চেষ্টা করেও আর পারেননি ব্যবধান বাড়াতে।
৫১ মিনিটে মধ্যমাঠে বল হারানোর মাশুল আরও একবার দিয়েছে ওয়েস্ট হাম। মাহরেজ বলটা পেয়েই দিয়েছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনকে। দুজনকে কাটানোর পর ডি ব্রুইনের পাস খুঁজে নেয় স্টার্লিংকে, ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দেন।
এরপর মিনিট দুয়েক পরেই প্রিমিয়ার লিগ প্রথমবারের মতো ভিএআর দেখে। এবারও সিলভা-স্টার্লিং-রদ্রির দারুণ বিল্ড আপের পর ফাঁকায় দাঁড়ানো হেসুস শুধু ট্যাপ ইন করেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, মিলিমিটারেরও কম ব্যবধানে অফসাইড ছিলেন স্টার্লিং, শুধু তার বগলই সম্ভবত অফসাইড লাইনের চেয়ে একটু এগিয়ে ছিল। বেশ খানিক অপেক্ষার পর রেফারি জানিয়ে দেন, গোল বাতিল হয়েছে। এর মিনিট খানেক পরেই দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের সেরা সুযোগ পেয়ে যায় ওয়েস্ট হাম। কিন্তু স্লডগ্রাসের ফ্রিকিক থেকে ডিওপের হেড একটুর জন্য চলে যায় বারের ওপর দিয়ে।
৭৩ মিনিটে একটা গোল শোধ করেই ফেলেছিল ওয়েস্ট হাম। কিন্তু এবার অতিমানব হয়ে দাঁড়ালেন এডারসন। দুর্দান্ত ডাবল সেভে লাইন থেকে দুবার বল ফেরালেন সিটি গোলরক্ষক। ৭৫ মিনিটেও আরেকবার রঙ্গমঞ্চে ভিএআর, এবার মাহরেজের পাস থেকে স্টার্লিং চিপ করে বল জড়িয়ে দিলেন জালে। এবারও মিলিমিটারের ব্যবধানে হলো সিদ্ধান্ত, তবে সেটি গেল সিটির পক্ষে।
ভিআরকে আরও একবার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে ম্যাচে। ৮৪ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল সিটি, সেটি নিতে এসেছিলেন আগুয়েরো। ফাবিয়ান্সকি ঠেকিয়ে দিলেন, কিন্তু আগুয়েরো কিক করার আগেই লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বলে আবার নিতে হলো পেনাল্টি। এবার আর ঠেকাতে পারলেন না, বদলি হিসেবে নেমে প্রথম গোল পেলেন আগুয়েরো। সিটি এগিয়ে গেল ৪-০ গোলে। আর শেষ মুহূর্তে আরেকটি গোল দিয়ে হ্যাটট্রিক পেয়েছেন স্টার্লিং, ওয়েস্ট হামকে তাদের মাঠে উপহার দিয়েছেন বড় হার।