• অ্যাশেজ ২০১৯
  • " />

     

    নাটক আর রোমাঞ্চের পর ড্র লর্ডস টেস্ট

    নাটক আর রোমাঞ্চের পর ড্র লর্ডস টেস্ট    

    আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, দ্য অ্যাশেজ
    ২য় টেস্ট, লর্ডস
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২৫৮ ও ২য় ইনিংস ২৫৮/৫
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ২৫০ ও ২য় ইনিংস ১৫৪/৬
    ম্যাচ ড্র


    লর্ডস ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল আগেই, বৃষ্টির কবলে পাঁচ সেশন যাওয়ার পরও এ টেস্ট সাজিয়ে বসেছিল রোমাঞ্চের পসরা নিয়ে। শেষ দিনেও ব্যতিক্রম হলো না। বেন স্টোকসের সেঞ্চুরির পর জফরা আর্চারের আগুনে স্পেল, জ্যাক লিচের উইকেট পাওয়া, জো রুটের ক্যাচ বা না হওয়া ক্যাচ, জো ডেনলির দুর্দান্ত ক্যাচ আশা জোগাচ্ছিল ইংল্যান্ডকে। স্টিভ স্মিথের বদলি হিসেবে নামা মারনাস ল্যাবুশেন ও ট্রাভিস হেডের দৃঢ়চেতা দুই ইনিংস ঝুলিয়ে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়াকে। শেষ পর্যন্ত ড্র-ই হয়েছে লর্ডস টেস্ট, হেডিংলিতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে তাই ১-০ এর লিড নিয়েই। 

    শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪ উইকেট, তবে আলোকস্বল্পতায় পেসারদের বোলিং থেকে বিরত রেখেছিলেন আম্পায়াররা। জ্যাক লিচ ও জো ডেনলি এলেন, একসময় প্রায় সব ইংলিশ ফিল্ডার মিলেই ছেঁকে ধরলেন হেড ও কামিন্সকে। তবে শেষ নাটকটা হলো না আর, ৪৮তম ওভারের ৩ বল পরই ড্র মেনে নিল দুই দল। ২৬৭ রানতাড়ায় অস্ট্রেলিয়া একসময় ভড়কে গিয়ে আর্চার-লিচের তোপে, তাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছিলেন ল্যাবুশেন ও হেডই।
     

     


    চতুর্থ ওভারেই আর্চার দিয়েছিলেন ব্রেকথ্রু, তার বলে আগবাড়িয়ে খোঁচা মেরে স্লিপে ররি বার্নসের দারুণ লো-ক্যাচে পরিণত হয়ে এ অ্যাশেজে চার ইনিংসে টানা চারবার এক অঙ্কে ফিরতে হয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারকে। নিজের পরের ওভারে খাওয়াজাকেও ফিরিয়েছেন আর্চার, তিনিও হয়েছেন এজড। ইংল্যান্ড দিয়েছে বাঁধ ভেঙে ফেলার ইঙ্গিত। ল্যাবুশেনকে তিনি স্বাগত জানিয়েছিলেন বাউন্সারে হেলমেটের গ্রিলে আঘাত করে। 

    অবশ্য ল্যাবুশেন ও ক্যামেরন ব্যানক্রফট সে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছিলেন, লিচের হুট করে নিচু হওয়া বলে ব্যানক্রফট প্লামবড হলে সেটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে আবার। এরপর ২২ ওভার ইংল্যান্ড থেকেছে উইকেটশূন্য। তবে এরই মাঝে ঘটে গেছে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ম্যাচের প্রেক্ষাপটে, স্টোকসের বলে হেডের সহজ ক্যাচ স্লিপে ফেলে দিয়েছিলেন জেসন রয়। শেষদিকে দ্রুত উইকেট তাই ইংল্যান্ডের জন্য রয়ের সেই মিসে আক্ষেপ বেড়েছে আরও। 

    শেষ পর্যন্ত এই দুজনের ২২ ওভার স্থায়ী জুটি ভেঙেছে বিতর্কের মধ্য দিয়ে। লিচকে সুইপ করেছিলেন ল্যাবুশেন, যেটা শর্ট লেগের পায়ে লেগে গেছে মিডউইকেটের দিকে। ডাইভ দিয়ে দারুণভাবে সেটি ধরেছিলেন রুট। সফট সিগন্যাল ছিল আউট, তবে রিপ্লেতে দুই অ্যাঙ্গেলে মনে হচ্ছিল দুই রকমের চিত্র। শেষ পর্যন্ত টিভি আম্পায়ার জোয়েল উইলসন দিয়েছেন আউট, যেটা মোটেও খুশি করতে পারেনি ৫৯ রান করা ল্যাবুশেনকে। এক ওভার বাদেই ওভার দ্য উইকেট থেকে পিচের রাফ তাক করে বোলিং করা লিচের শিকার হয়েছেন ম্যাথু ওয়েড, শর্ট লেগে ধরা পড়েছেন তিনি। 

    দারুণ অসম্ভবে বুক বাঁধা ইংল্যান্ডের আশা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ডেনলি, শর্ট মিডউইকেটে অতিমানবীয় এক ক্যাচ নিয়ে। আর্চারকে পুল করেছিলেন পেইন, বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে সেটিই ধরেছিলেন ডেনলি। এরপর ইংল্যান্ডের জন্য উহ-আহ হয়েছে শুধু, উইকেটের দেখা আর পায়নি তারা। 
     


    দিনের শেষবেলা অস্ট্রেলিয়াকে ইংল্যান্ড চেপে ধরতে পেরেছিল মূলত স্টোকসের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরির সুবাদে। আগের চারদিনের মতো এদিনও বৃষ্টি ছিল আলোচনায়, সকালে খেলা শুরু হতে দেরি হয়েছিল তাই। স্টোকস ও জস বাটলারের জুটি ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিচ্ছিল, এরই মাঝে আবার আলোচনায় এসেছিলেন স্টিভ স্মিথ। বিলম্বিত কনকাশনের কারণে এ টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন তিনি, তার বদলি হয়ে ইতিহাস গড়েছেন ল্যাবুশেন, শেষ পর্যন্ত যিনি এ টেস্টে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

    আগেরদিন ইংল্যান্ডের অবস্থা সুবিধার ছিল না খুব একটা, স্টোকস-বাটলারের জুটি তাদেরকে নিয়ে গেছে সুবিধাজনক অবস্থায়। প্রথম সেশন তারা কাটিয়েছে উইকেট না হারিয়েই। দুজনের জুটি শেষ পর্যন্ত গেছে ৯০ রানে, ৩১ রানে প্যাট কামিন্সের বলে লং-লেগে ধরা পড়ার আগে বাটলার দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন স্টোকসকে। 

    স্টোকস ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ১০৬ বলে, পরের পঞ্চাশ তিনি করেছেন মাত্র ৫৪ বলে। পেয়েছেন জনি বেইরস্টোর সঙ্গ, দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে উঠেছে ৯৭ রান, মাত্র ৮৪ বলে। অস্ট্রেলিয়াকে ২৬৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন রুট। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড আটকে গেছে ৪ উইকেটের ব্যবধানে। তবে তার আগে লর্ডস দেখেছে অ্যাশেজের অন্যতম সেরা এক টেস্ট।