• " />

     

    মাশরাফির পর মাহমুদউল্লাহ?

    মাশরাফির পর মাহমুদউল্লাহ?    

     

    নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা বছরই শেষ হতে চলেছে বাংলাদেশের জন্য। বিশ্বকাপের মাঠে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফিরে আসা দলটা জয়ের ক্ষুধাটুকু ধরে রেখেছিল দেশে ফিরেও। ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দ. আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের একদিনের সিরিজ হারিয়ে টাইগারদের আত্মবিশ্বাসের পারদ এখন বেশ চড়া। এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলের নায়ক হিসেবে সাকিব-মুশফিক-তামিম-মাহমুদুল্লাহ-নাসিরদের মতো পরিণত হয়ে ওঠা ক্রিকেটাররা যেমন কৃতিত্ব পাচ্ছেন, তেমনি তরুণ সাব্বির-মুস্তাফিজ-সৌম্যরাও ছড়াচ্ছেন সুবাস। আর মাঠের বাইরের কারিগর হিসেবে হাথুরুসিংহে-হিথ স্ট্রিক-কালপাগে-হ্যালসালদের অবদান তো আছেই।

     

     

    তবে এতো সবের পরও বাইশ গজের বাংলাদেশে আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ, সাহসের সঞ্চারণ আর এগারো জন মিলে একটা দল হয়ে ওঠার নেপথ্যে একটি নাম উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই- মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেশবাসীর প্রিয় ‘পাগলা’র জাদুস্পর্শে রীতিমতো উড়তে থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন সাফল্যের সীমা আকাশ ছুঁতে চাইছে। এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জীর্ণদশাটুকু ইতিবাচকভাবে বদলে দেয়ার মূল কারিগর ঐ মাশরাফিই। এ পর্যন্ত ২৮টি একদিনের আন্তর্জাতিকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ২০টিতেই, হেরেছেন মাত্র ৮টি; জয়ের হার ৭১.৪২ শতাংশ। উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশের বাকি সব অধিনায়কেরই জয়ের চেয়ে পরাজয়ের পাল্লাটা ভারী।

     

    কিন্তু নড়াইলের এই নেতাও তো আর চিরকাল নেতৃত্বভার কাঁধে বয়ে বেড়াতে পারবেন না। চোটে চোটে জর্জরিত পা দুটো নিয়ে প্রায়ই যখন মাঠে খুঁড়িয়ে হাটেন, অগুনিত অনুরাগীর ভিতরটা বুঝি কোথাও নড়ে ওঠে। তারপরও সম্ভব হলে মাশরাফিকে ‘অধিনায়ক কোটা’য় আজীবন সদস্যপদ দিয়ে দলে রেখে দিতে চাইতো বাংলাদেশ। কিন্তু আদতে সেটা যখন সম্ভব নয়, তখন তাঁর যোগ্য উত্তরসূরির খোঁজ করাটাই শ্রেয়। আগামী দু’-চার বছরের মধ্যে যদি তাঁকে বিদায় বলে দিতে হয়, তবে কে পূরণ করবেন সে শূন্যস্থান? বর্তমান দলটায় সম্ভাব্য অধিনায়কদের উপর আলো ফেলে সে প্রশ্নেরই জবাব খোঁজার চেষ্টা করা যাক।


     

    সাকিবের সাতকাহন

     

    ২০০৯ থেকে ২০১১- তিন বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় দলের। বর্তমানে ওডিআই দলে মাশরাফির সহকারিও তিনি। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯টি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। জিতেছেন ২৩টি, হেরেছেন ২৬টি। জয়ের হারেও মাশরাফির পরেই তাঁর অবস্থান, ৪৬.৯৩ শতাংশ। খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন উচ্চতায় উঠিয়ে চলেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।

     

    তবে ব্যক্তি সাকিব নিকট ও দূর অতীতে নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন একাধিকবার। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে অসদাচরণের জন্য পেয়েছেন শাস্তি। এই বিপিএল-এও মাঠের আম্পায়ারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞা। অধিনায়ক থাকাকালে তৎকালীন বোর্ড সভাপতির সাথে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন, অভিযোগ ছিল দলের ভিতর কথিত বিভাজন তৈরিরও। সর্বশেষ সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের শেষ নক-আউট ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে অধিনায়ক সাকিবকে সীমানা দড়ির উপরই অনেকটা সময় ফিল্ডিং করতে দেখা যায়, বোলিং-ফিল্ডিংয়ে রদবদলের কাজটা আদতে সারেন ড্যারেন সামি।

     

    সবকিছু বিবেচনায় সাকিবের হাতে পুনরায় নেতৃত্বভার যাবার সম্ভাবনা হয়তো সামান্যই। তারচেয়েও বড় কথা ,দলের এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারফর্মারের কাঁধে নেতৃত্বের চাপ তাঁর স্বাভাবিক খেলায় বিরূপ প্রভাব ফেললে সেটা যে দলের জন্য অমঙ্গলই বয়ে আনবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


     

    ছকে বাঁধা মুশফিক

     

    সাকিবের উত্তরসূরি হিসেবে পেয়েছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব। তিন বছর মেয়াদে ৩৭টি ম্যাচ অধিনায়ক হিসেবে খেলে জিতেছেন ১১টি, হেরেছেন ২৪টি, ২টি ম্যাচ অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে তাঁর নেতৃত্বেই স্মরণীয় পারফরম্যান্সে অল্পের জন্য শিরোপাটা হাতছাড়া হয় টাইগারদের। ২০১৩ সালের শেষভাগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করাটাই মুশফিক যুগের শেষ সুখস্মৃতি। গত বছর তাঁর অধিনায়কত্বে খেলা ১৩টি একদিনের ম্যাচের সবক’টিতেই হারে বাংলাদেশ। নিজেদের মাঠে এশিয়া কাপে নবীন দল আফগানিস্তানকেও হারাতে ব্যর্থ হয় টাইগাররা। এর পরপরই অনুষ্ঠিত টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ ব্যবহারে ষোলআনা ব্যর্থতার পরিচয় দেয় মুশফিক বাহিনী।

     

    ফলশ্রুতিতে সীমিত ওভারের নেতৃত্বটা তাঁর কাধ থেকে সরিয়ে নেয়া হলেও এখনও পালন করে যাচ্ছেন টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক বিশ্লেষণে এই বছরের মাঝামাঝি তাঁকে বেছে নেয়া হয়েছিল বর্তমান বিশ্বের চতুর্থ সেরা টেস্ট অধিনায়ক হিসেবেও।

     

    মুশফিকের নেতৃত্বে দুর্বলতা খুঁজতে গেলে ছকে বাঁধা পরিকল্পনা আর ঝুঁকি গ্রহণে অনীহার মতো ব্যাপারগুলোকে প্রাধান্য দেন অনেকে। এবারের বিপিএলে তাঁর দল সিলেট সুপারস্টার্স গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় নীচের দিক থেকে দু’ নম্বর দল হিসেবে। টুর্নামেন্টের মাঝপথে রহস্যজনক কারণে নেতৃত্ব ছেড়ে দেন শহীদ আফ্রিদির হাতে।

     

    ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকেই বাংলাদেশের বেশী প্রয়োজন - এমন ধারণায় সহমতের পাল্লাটাই বোধহয় ভারী হবে। সাংগাকারা- ডি ভিলিয়ার্স-ম্যাককালামের মতো মুশফিক চাইলে ছাড়তে পারেন কিপিং-ও।  ব্যাটিং অর্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পর এখন করছেন কিপিং-ও, এসবের সাথে পুনরায় সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন্সির গুরুদায়িত্বটা না নেয়া মুশফিকের নিজের জন্য তো বটেই, মঙ্গলজনক হতে পারে দলের জন্যও। 


     

    তামিম কেন নয়?

     

    ব্যাটসম্যান তামিমের ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর অন্যতম। মেজাজে লাগাম দিতে না পারার অভিযোগটা সাকিবের মতো তাঁর বিরুদ্ধেও পুরনো। তবে বর্তমানের তামিমে পরিণতভাব বেশ লক্ষণীয়। অবশ্য সেটা জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেবার জন্য যথেষ্ট কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষই।

     

    জাতীয় দলে সাকিব আল হাসানের সহকারী ছিলেন পুরো মেয়াদে। এরপর মুশফিকেরও সহকারী ছিলেন, এখনও তাই আছেন টেস্ট দলে। গত বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে সহ-অধিনায়ক পদ থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানোর ‘নাটক’ সৃষ্টি করেছিল বিভ্রান্তি। ২০১৩ সালের বিপিএলে তাঁর নেতৃত্বে 'দুরন্ত রাজশাহী' বিদায় নেয় সেমিফাইনাল থেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রায় প্রতিটি সংস্করণেই কোনো না কোনো দলের হয়ে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই সেভাবে। এই বিপিএলে পেয়েছিলেন চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়কত্ব। ভালো দল গড়েও দুটি মাত্র জয় সম্বল করে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির বিদায় নেয়ার নেপথ্যে তামিমের দুর্বল নেতৃত্বকে দায়ী করছেন- এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বোলিং-ফিল্ডিং সাজানোয় অপরিপক্কতার ছাপটা ছিল স্পষ্টই। তামিম নিজে রান পেয়েছেন, টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান (২৯৮) সংগ্রাহকও তিনি। তবে দলের পরাজয়ে বেশীরভাগ দিনই তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনগুলো ম্লান হয়ে গেছে।

     

    দীর্ঘদিনের মন্দাদশা কাটিয়ে তাঁর ব্যাট পুনরায় জ্বলতে শুরু করেছে খুব বেশী দিন হয় নি। ইনিংস উদ্বোধনে একজন তামিম ইকবালের বিকল্প গড়ে তোলার কাজটা যে সহজসাধ্য নয় তা বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিকট অতীতে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। ক্যারিয়ারে আপাত মসৃণ হয়ে ওঠা পথ নেতৃত্বের ভারে ফের বন্ধুর বানিয়ে দেয়া খুব জরুরী কি?

     

    তরুণ তাঁরা

     

    জাতীয় দলের বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক তাঁকে অভিহিত করেছিলেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিভাও মনে করা হয় মুমিনুল হককে। বিশ্বকাপের পর পর হয়ে যাওয়া বিসিএল ওয়ানডে টুর্নামেন্টে তাঁর নেতৃত্বে শিরোপা জেতে ইস্ট জোন। ফাইনালে ব্যাট হাতে ৭৮ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলে দলের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। সে সুবাদেই কিনা ভারত সফরের ‘এ’ দলের অধিনায়কত্ব পেয়ে যান। কিন্তু তিনটি একদিনের ও দুটি চারদিনের ম্যাচের সিরিজে মুমিনুল বাহিনীর প্রাপ্তি একটিমাত্র ওয়ানডে জয়। তিন ওয়ানডে মিলিয়ে মুমিনুল নিজে করেন সাকুল্যে ৫৯ রান। নেতৃত্বে পরিপক্বতা বয়সের সাথে বাড়বে- এমনটা হয়তো প্রত্যাশিত। কিন্তু নানা কারনে সীমিত ওভার ক্রিকেটের দলে মুমিনুলের জায়গাটাই যে পোক্ত হচ্ছে না। গেলো বিপিএলে ষোলআনা নিষ্প্রভতায় রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে কি আরও খানিক ব্রাত্য হয়ে গেলেন?

     

    বিসিএলের ফাইনালে যে দলটাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মুমিনুলের ইস্ট জোন, সেই নর্থ জোনের নেতৃত্বে ছিলেন আরেক তরুণ তুর্কি নাসির হোসেন। অধিনায়কের ব্যাটে ৮৪ বলে ৯৬ রানের চোখজুড়নো ইনিংসেও শেষ রক্ষা হয় নি তাঁর দলের। তবে ঐ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। ‘নেতা’ নাসিরকে পরখ করার সুযোগ এখনও পর্যন্ত ওই একবারই মিলেছে। এবারের বিপিএলে ছয় ‘আইকন’ খেলোয়াড়ের মধ্যে একমাত্র তিনিই অধিনায়কত্ব পান নি। মুমিনুলের মত তাঁরও পরিপক্বতা বয়সের সাথে বাড়বে- এমনটাই প্রত্যাশিত। সে পর্যন্ত দলে অবস্থান পাকা করার দিকেই মনযোগী হতে পারেন নাসির।

     

    সমূহ সম্ভাবনার জানান দিয়ে জাতীয় দলে পা রেখেছিলেন ওপেনার কাম উইকেট কিপার এনামুল হক বিজয়। গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন, করেছিলেন টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৩৬৫ রান। জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবেও ভালো বিকল্প হতে পারেন। তবে সেটার আগে দলে স্থিতিশীল অবস্থান প্রয়োজন তাঁরও। ধারাবাহিক ফর্মহীনতা আর আচমকা ইনজুরিতে আপাতত জায়গা খুইয়ে বসেছেন সৌম্য সরকারের কাছে। বিপিএলে সপ্রতিভ পারফরম্যান্সের পর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিত সুযোগ পাবার দাবী জানিয়ে রাখছেন আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস। একাধিক ম্যাচে ভালো ইনিংস খেলে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকবেন শাহরিয়ার নাফীসও। এতজনের সাথে পাল্লা দিয়ে দলে স্থায়ী হওয়াটাই এখন এনামুলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রশ্নটা তাই অনেক পরের বিষয়।


     

    তবে কি মাহমুদুল্লাহ-ই?

     

    বলা হচ্ছে এবারের বিপিএলের অন্যতম প্রাপ্তি ‘নেতা’ মাহমুদুল্লাহ। ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো’র বিপিএল টিমেও অধিনায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে রিয়াদকেই। গড়পড়তা মানের এক দল নিয়ে বরিশাল বুলসের রানার-আপ হবার নেপথ্যে মাহমুদুল্লাহর অসাধারণ নেতৃত্বের প্রশংসা শোনা গেছে দলটির কোচ গ্রাহাম ফোর্ড থেকে শুরু করে দেশী-বিদেশী সতীর্থ হয়ে ফাইনালের প্রতিপক্ষ মাশরাফির মুখেও।

     

    তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রাতারাতি ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বনে গেছেন এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। বিপিএলের গত দুই আসরে ছিলেন চিটাগং কিংসের অধিনায়ক। দ্বিতীয়বার ফাইনালেও তুলেছিলেন চট্টগ্রামের দলটিকে। অবশ্য সেবারও মাশরাফির কাছে হেরেই রানার আপ ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে।

     

    একদিনের ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশনে গত দুই আসরের বিজয়ী দুটি ভিন্ন দলঃ ২০১৪/১৫ মৌসুমে প্রাইম ব্যাংক ও ২০১৩/১৪ মৌসুমে গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্স। চমকপ্রদ তথ্যটা হচ্ছে দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন এই দু’ দলেরই অধিনায়কের নাম মাহমুদুল্লাহ!

     

    জাতীয় দলে আট বছরের ক্যারিয়ারে চড়াই-উৎরাই কম দেখেন নি। তবে মাঝের অনেকটা সময় মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ে আস্থার প্রতীক হয়ে পেয়ে যান জাতীয় দলে মুশফিকের সহকারীর দায়িত্ব। আবার ফর্মে মন্দা দশা মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখিয়ে দেয় তাঁকে। সহ-অধিনায়ক হয়েও গত বছরের এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ পড়ে যান ফর্মহীনতায়।

     

    ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় বাংলাদেশের সাফল্যগুলোয় তিনি থেকে গেছেন পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে। জিতে যাওয়া ম্যাচে তাঁর নিরীহ মেজাজের কিন্তু কার্যকর ইনিংসগুলো সামনে আসে নি, আবার অল্পের জন্য হেরে যাওয়া ম্যাচে কাঠগড়ায় উঠেছে তাঁর ব্যাটিংয়ের ‘ধীরগতি’। টানা ব্যর্থতার পরও দলে থেকে যাওয়ায় গত বছর ‘স্বজনপ্রীতি’র মত নোংরা কালিও গায়ে লেগেছে।  

     

    সেই মাহমুদুল্লাহই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অন্যতম বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠেন বিশ্বকাপের মাঠে। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে টানা দুই শতকে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে এসে নিজেকে গড়ে তুলছেন নতুন করে। সেটার প্রাথমিক সাফল্যের প্রতিফলন তো আছে বাংলাদেশের ‘বিশ্বকাপ’ অর্জনেই।

     

     

    ধীরস্থির, শান্ত মেজাজের বলে মাহমুদুল্লাহর পরিচিতিটা পুরনোই। নতুন করে সেটার ইতিবাচক প্রয়োগ দেখালেন সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই বোলিং-ফিল্ডিংয়ে কার্যকর পরিবর্তনের ফল পেয়েছেন হাতে হাতে। ফাইনালে শেষ বলে হেরে যাওয়া ম্যাচটার পর প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মাশরাফিও স্বীকার করেছেন যে, রিয়াদের রদবদলগুলো তাঁদেরকে বেশ কয়েকবার বিপদে ফেলে দিয়েছিল। বিপক্ষ দলের জন্য এমন বিপদ ব্যাট হাতেও নিয়মিত তৈরি করে গেছেন তিনি। নেতৃত্বের চাপ তাঁর ব্যাটে ফাটল ধরাতে পারে নি। ২৭৯ রান নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন চার নম্বরে।

     

    বলা হচ্ছিল, জাতীয় দলের সাফল্যে তাঁর ‘পার্শ্ব চরিত্র’ থেকে যাওয়ার কথা। দুই সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপের মঞ্চ আলো করার পরও কেনো যেন ‘কেন্দ্রীয় চরিত্র’ ঠিক হয়ে ওঠা হয় নি। কোনো এক অজানা কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থক মহলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বরাবরই এক ‘আন্ডাররেটেড’ ক্রিকেটারের নাম। তবে চিত্রটা যে বদলাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এবারের বিপিএল মাহমুদুল্লাহকে চিনিয়েছে নতুন করে। মাশরাফি-উত্তর যুগের নেতা হিসেবে অনেকের মুখেই ঘুরে ফিরছে তাঁর নামটা। বাংলাদেশ প্রস্তুত হচ্ছে, মাহমুদুল্লাহ হচ্ছেন তো?