ছোটদেরও তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের সাথে
কী বলা যায়? দুর্ভাগ্য, দেজাভুঁ নাকি নিজেদের দায়? নইলে সব সময় ভারতের সঙ্গেই ক্রিকেটে তীরে এসে তরী ডুববে কেন? সেটা বড়দের হোক বা ছোটদের। ১০৬ রান তাড়া করেও তো শেষ পর্যন্ত পারল না বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দল, যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত হেরে গেল ৪ রানে।
দুর্ভাগ্য অবশ্য তানজিম হাসান সাকিব বলতেই পারেন। রাকিবুল হাসানের সঙ্গে নবম উইকেটের জুটিতে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের দিকে। কিন্তু ৫ রান দূরে থাকতে হয়ে গেলেন এলবিডব্লু। যদিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, ইনসাইড এজ হয়েছিল। দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী? ওই ওভারেই শাহীন আলমকেও তুলে নিলেন আনকোলেকার। বাংলাদেশের স্তব্ধ ড্রেসিংরুমে তখন শ্মশানের নীরবতা।
ভারত অবশ্য ম্যাচটা আগেই জিততে পারত। ৭৮ রানে বাংলাদেশের ৮ উইকেট ফেলে দিয়েছিল, সেখান থেকে জয় মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্ত রাকিবুল ও সাকিব নবম উইকেটে ঠিক করেন, আর যাই হোক কোনোভাবেই তারা উইকেট দিয়ে আসবেন না। দশ ওভারেরও বেশি কাটিয়ে দিয়েছিলেন, এক দু রান করে করে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। এরপরেই সেই এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত।
তবে বাংলাদেশ যেভাবে ব্যাট করেছে, তাতে মনে হতে পারে ছোটদের ওপরও কি বড়দের ভূত ভত করল? নইলে ১০৭ রানের লক্ষ্য এমন আত্মঘাতী সব শট কেন? তানজিদ হাসান শুরুতেই এলবিডব্লু হয়ে গেছেন, আরেক ওপেনার পারভেজ হোশেন ইমন অফ স্টাম্পের বাইরের বল শর্ট বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন। ফর্মে থাকা মাহমুদুল হাসানও সেই অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়েই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। তৌহিদ হৃদয় পেসে পরাস্ত হয়ে হয়েছেন বোল্ড, শাহাদাত হোসেন স্পিনে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি, ৪০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট পড়ে গেছে বাংলাদেশের।
অধিনায়ক আকবর আলী দেখেশুনে খেলছিলেন, কিন্তু অন্য পাশে শামীম হোসেনও শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন। তারপরও মৃত্যুঞ্জয় ও আকবর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি বিরতির পর মতিভ্রম হলো দুজনের। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে আকবর ফিরতি ক্যাচ দিলেন আনকেলোকারকে, মৃত্যুঞ্জয়ও খোঁচা দিলেন উইকেটের পেছনে। সেটাই আসলে লিখে দিয়েছে বাংলাদেশের এপিটাফ।
অথচ তার আগে শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। ছোটদের এশিয়া কাপ জয় দূরে থাক, এর আগে কখনো ফাইনালই খেলা হয়নি বাংলাদেশের। তার ওপর আজ টসেও হেরে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। ভারত সিদ্ধান্ত নিল ব্যাট করার। কিন্তু সেটাই শাপেবর হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য। তানজিম হাসান পেস আর সুইংয়ে শুরুতেই তুলে নিয়েছেন ভারত ওপেনার অর্জুন আজাদকে। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী দারুণ লাইন আর লেংথ মেনে বল করছিলেন শুরু থেকে, তিলক ভার্মাকে আউট করে পেয়েছেন সেটির পুরস্কার। খানিক পর যখন তানজিদ হাসানের দারুণ এক থ্রোতে রান আউট হয়ে সুভেদ পার্কার ফিরে গেলেন, ৮ রানের ভেতর ৩ উইকেট নেই ভারতের।
এরপর স্পিনাররা আসলেন, ভারতের ওপর আরও চড়ে বসল বাংলাদেশ। শাশ্বতকে অফ স্পিনে এলবিডব্লু করলেন শামীম হোসেন, দুই বল পর পয়েন্টে মৃত্যুঞ্জয়ের দারুণ এক ক্যাচে ফিরে গেলেন বরুন লাভেন্ডে। গোটা ইনিংসে বাংলাদেশের ক্যাচিং থেকে গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ছিল দুর্দান্ত। অধিনায়ক আকবর আলীর দলের শরীরী ভাষাও ছিল দারুণ ইতিবাচক। ভারতকে চাপ থেকে বেরুনোর সুযোগই দেয়নি তাই।
সেই চাপের জন্য অথর্ব আনকোলেকার ভুল বোঝাবুঝিতে হয়ে গেছে রান আউট। ৬১ রানে নেই ৬ উইকেট। অধিনায়ক ধ্রুভ জুয়েল ছিলেন আশা হয়ে, ৩৩ রানও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু আবারও শামীমের শিকার, এবারও পয়েন্টে আরেকটি দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। সুশান্ত মিশ্রকে ফিরিয়েছেন ডানহাতি পেসার শাহীন আলম, আর বিদ্যাধর পাতিলকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেট পেয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। কারান লাল অবশ্য ১০০ পার করিয়ে দিচ্ছিলেন ভারতকে, তবে শেষ ব্যাটসম্যানকে নিয়ে আগ্রাসী হতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয়কে উড়িয়ে মারিতে গিয়েছিলেন। ধরা পড়েছেন লং অফে, ১০৬ রানেই অলআউট হয়ে গেছে ভারত। কিন্তু কে জানত, সেটাই যথেষ্ট হবে না দিন শেষে?