• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    ক্লাবগুলোর ক্যাসিনো-কেলেংকারিতে বিস্মিত বিসিবি সভাপতি

    ক্লাবগুলোর ক্যাসিনো-কেলেংকারিতে বিস্মিত বিসিবি সভাপতি    

    ক্যাসিনো কেলেংকারিতে টালমাটাল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের সঙ্গে মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবেও আবিষ্কার হয়েছে অবৈধ জুয়ার আসর। ক্যাসিনোর জন্য ক্লাব ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে এর মধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান ভুঁইয়া। কাকতালীয়ভাবে, এই লোকমান ভুইঁয়া আবার বিসিবিরও পরিচালক। কদিন আগেই বিসিবির আরেক পরিচালক মাহবুব আনামকেও আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিল দুদক। তবে লোকমানকে গ্রেপ্তার করার পর আজ প্রথম সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন বিসিবি সভাপতি। এই ব্যাপারগুলোর কিছুই তিনি জানতেন না দাবি করে বলেছেন, এই লোকমানকে তিনি চেনেন না।

    গত সপ্তাহ থেকেই ঢাকার ক্লাবগুলোতে আইনি অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র‍্যাব। এরই সূত্র ধরে কদিন আগে মোহামেডান ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো পাওয়া যায়। পরে আটক করা হয় ক্লাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমানকে। এরপর পুলিশি জেরায় লোকমান স্বীকার করেন, ক্যাসিনো থেকে দৈনিক ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নিতেন। এবং এখান থেকে পাওয়া ৪১ কোটি টাকা জমা করেছেন বিদেশের ব্যাংকে। এসবের সূত্র ধরেই আজ তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

    কিন্তু ক্লাবগুলোতে এত কিছু হয়ে গেছে, সেটা কি বিসিবি সভাপতি জানতেন?আজ নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান অস্বীকার করলেন সবকিছু, ‘ক্লাবে তাস খেলা হয়, এটা আমি ছোট বেলা থেকেই জানি। আমি কোনো ক্লাবে ক্রিকেট খেলেছি, কোনো ক্লাবে ফুটবল খেলেছি, কোনো ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেলেছি, কোনো ক্লাবে টেবিল টেনিস খেলেছি, কোনো ক্লাবে ক্যারম খেলেছি, আমি দেখেছি ক্লাবে বিকাল বেলা খেলা হতো, একটা ঘরে সন্ধ্যার পরে সিনিয়ররা খেলতো। সেখানে আমাদের এন্ট্রি ছিল না, আমরা যেতাম না। সেখানে সিনিয়র মানুষরা তাস খেলতেন। কিন্তু এই তাস খেলা যে এখন ক্যাসিনোতে চলে এসছে, সত্যি বলতে কী আমার কোনো ধারণা ছিল না। লোকমান আমাকে কোনো দিন বলে নি, মোহামেডান ক্লাবে একটা ক্যাসিনো আছে। এটাও একটা আশ্চর্য। ও কিন্তু আমার বন্ধু।’

     

     

    বরং নাজমুল হাসান যে লোকমানকে চিনতেন, সেই লোকমান এমন কিছু করেননি বা এসব কিছুতে জড়িত ছিলেন না বলেই জানা ছিল হাসানের, ‘আমি যে লোকমানকে চিনি সে জীবনে মদ খায় নাই। সে জীবনে জুয়া খেলে নাই। এটা যেমন সত্যি আবার সে যে ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছে এটাও তো সত্যি। কাজেই অস্বীকার করার তো কোনো পথ নাই। সে যদি করে থাকে তাহলে তার বিচার হবে।’

     

    নাজমুল হাসান অবশ্য বললেন, এমন কিছুতে তিনি বিব্রত নন, ‘দেখেন এখানে, বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। আমি যেটা বুঝি, কেউ যদি অন্যায় করে থাকে তার শাস্তি হবে। এটাতে তো কারো কোনো দ্বিমত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।’

    কিন্তু বিসিবির পক্ষ থেকে এখন কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে?  নাজমুল হাসান এ ব্যাপারে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলেন না, ‘অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে। ইটস টু আর্লি টু সে এনিথিং, বেসিক ব্যাপার হচ্ছে, যদি অন্যায় করে থাকে শাস্তি পাবে। যদি ক্যাসিনোর কাছে ভাড়া দিয়ে থাকে, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে তার বিচার হবে। এর বাইরে কিছু নাই। ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। আমি বিসিবিতেও কোনো ছাড় দিবো না। আমি বিসিবিকেও কখনও ছাড় দিই নাই।

    সম্পূরক প্রশ্ন উঠল, ক্যাসিনো থেকে এত অর্থ পাওয়ার পরও ক্লাবগুলোর কেন দুর্গতি? আর ক্লাবগুলো কি তাহলে পুরোপুরি ক্যাসিনো নির্ভর ছিল? নাজমুল হাসান মেনে নিলেন বাস্তবতা, ‘আসলে ক্লাব চালানো এখন কঠিন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আপনি যদি একটা ক্লাব চালাতে যান, যদি ফুটবল চালাতে যান ৬/৭ কোটি টাকা লাগে বলে আমি শুনেছি। ক্রিকেটে ৪/৫ কোটি টাকা লাগে। এটা কিন্তু অনেক টাকা। আগে কিন্তু এই জিনিসটা ছিল না। আগে খেলোয়াড়রা খেলতো বিনা পয়সায় বলতে গেলে। আপনি আকরাম খানদের সময়ের কথা চিন্তা করেন, আর এখনকার সময়ের কথা চিন্তা করেন। পর্যাপ্ত খেলোয়াড় যদি না থাকে ওদের নিয়ে টানাটানি হবেই। এবং ওদের রেট বাড়তেই থাকবে। বিদেশি খেলোয়াড়ের আধিক্য বাড়ছে, খরচ বাড়ছে। এই ক্লাবগুলো কিভাবে চালানো হবে, এটা নিয়ে আমি মনে করি…. আমার পক্ষে  এই মন্তব্য করা কঠিন, তাও মনে হয়, সময় এসেছে সবাই মিলে চিন্তা করার এই ক্লাবগুলো পরিচালিত হবে কিভাবে। ফান্ড আসবে কোথা থেকে। আগে যেমন স্পন্সর ছিল, পাড়ায় মুরুব্বিদের কাছে গেলে টাকা পাওয়া যেত, উনারাই চালাতেন। যা দিতেন তা দিয়ে আমরা ক্লাব চালাতে পারতাম। এখন এভাবে ক্লাব চালানো যায় কি না আমি জানি না। তখন অনেক কম টাকা লাগতো। তখন টাকাটা খেলায় মূল ব্যাপার ছিল না। কিন্তু এখন টাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। আর বেশ কিছু ক্লাব যখন অনেক টাকা খরচ করে দল বানাতে পারে সে জন্য প্রতিযোগিতায় এখন টিকে থাকা তো অনেক কঠিন। অনেক কঠিন।’