ঘরোয়া ক্রিকেটের 'সংস্কৃতি' বদলাতেই ফিটনেস আর উইকেটে জোর বিসিবির
শুরুর আগেই এবার আলোচনায় জাতীয় ক্রিকেট লিগ। নানা কারণে এবারের জাতীয় লিগটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হচ্ছে। সামনের মাসেই বাংলাদেশ ভারত সফরে যাচ্ছে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুটাও হচ্ছে সেখানে। সেটা মাথায় রেখে এর মধ্যেই এবারের জাতীয় লিগের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন জাতীয় অনেক ক্রিকেটারই। ব্লিপ টেস্ট নিয়ে অবশ্য এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক। আজ মিরপুরে জাতীয় নির্বাচক হাবিবুল বাশার বললেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সংস্কৃতি বদলানোর জন্য এবারের লিগ থেকে ব্লিপ টেস্টে কড়াকড়িসহ বেশ কিছু জিনিস চালু করার কথা ভাবছেন।
৫ অক্টোবর থেকে জাতীয় লিগ শুরু হতে পারে, এমন একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তবে আজ টুর্নামেন্ট কমিটির বৈঠকের পর প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন নিশ্চিত করলেন, ১০ অক্টোবর থেকেই শুরু হবে এবারের জাতীয় লিগ। জাতীয় দলের সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্রিকেটার যাতে এবার অংশ নেয়, সেই ব্যাপারেও এবার বিসিবি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী। যদিও শেষ পর্যন্ত কতজন তাতে অংশ নেবেন সেটা নিশ্চিত করতে পারলেন না। ব্লিপ টেস্টের ব্যাপারে সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকের শংকা আর সংশয়ের কথাও জানানো হলো তাকে। প্রধান নির্বাহী বললেন, ন্যুনতম পয়েন্ট ঠিক করা হয়েছে ১১। তবে এরপরও যদি কোনো ক্রিকেটারকে আলাদাভাবে নির্বাচকেরা বিবেচনা করতে চান, সেটি তারা করতে পারেন।
তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়, বিপ টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়া আর ম্যাচ ফিটনেস কি এক জিনিস? আর অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে বিবেচনার যে কথা বলা হয়েছে, সেটিই বা করা হবে কীভাবে? নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন তার অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করলেন, ‘এটা আসলে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। আমাদের কাছে ফিটনেস ও ফিল্ডিং এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গত বছরই কিন্তু মানদন্ড (৯ পয়েন্ট) দেওয়া হয়েছিল। আর পেশাদার হিসেবে আপনার কিছু জিনিস ঠিক রাখতেই হবে। আমরা চাচ্ছি, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান যেন ওই পর্যায়ে যায়। কারণ আমরা অনেক দিন ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে কথা বলছি। কোথাও না কোথাও থেকে আমাদের শুরু করতেই হবে। আমার মনে হয় এটা থেকে ক্রিকেটারদের আরও বেশি উপকার হবে। আমরা তো একটা মানদণ্ড বেঁধে দিয়েছি। এরপর বয়স আর পারিপার্শ্বিকতা মিলে আমরা কিছু জিনিস বিবেচনা করব। তবে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে। এখানে কোনো মানদন্ড আমরা বেঁধে দিচ্ছি না। মোদ্দা কথা হচ্ছে, একটা সংস্কৃতি আমরা শুরু করতে চাই। বিশেষ করে বয়সী ক্রিকেটারদের আমাদের প্রথম শ্রেণিতে দরকার। আবার একই সঙ্গে খেলার জন্য একটু নূন্যতম মানদন্ড থাকতে হবে।’
আউট হয়ে ফিরছেন সাব্বির রহমান
কিন্তু ক্রিকেটারদের অনেকেই অভিযোগ করছিলেন, এক্ষেত্রে একটু আগে এই মানদণ্ড বেঁধে দিলে তাদের জন্য সুবিধে হতো। সেটার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেন হাবিবুল, ‘আমার মনে হয় ৯ যদি আপনি যেতে পারেন তাহলে আপনার ১১ পর্যন্ত যাওয়া উচিত। তার জন্য সারা বছর কিন্তু সময় পেয়েছে। আর যারা পেশাদার তাদের ফিটনেস নিজের কাছে। সেটা তারা সারা বছর রাখতে পারে। এখনকার যে দুনিয়া, সবারই বাড়ির পাশে জিম আছে, বা দৌড়ানোর জায়গা আছে। পেশাদার হলে সেটা আসলে তাদের নিজেদেরই মেইন্টেন করতে হবে। আগেকার যুগে এটা লুকানো হতো। কিন্তু এখন ওই অবস্থা নেই।’ সেই ব্লিপ পরীক্ষা কাল একযোগে সব বিভাগীয় শহরে হবে। ক্রিকেটারদের অবস্থা কেমন, সেটা বোঝা যাবে এরপর।
সংস্কৃতির কথা বললে এর সঙ্গে তো উইকেটও চলে আসে। প্রধান নির্বাহীও আজ বলছিলেন, ‘উইকেট নিয়ে কথা হয়েছে (টুর্নামেন্ট কমিটির বৈঠকে)। বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদকরা ছিলেন, তারা বলেছেন যে উইকেট হচ্ছে, তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা ভালো উইকেটের আশা করছেন।’ তবে উইকেট থেকে নির্বাচকদের চাওয়া আসলে কী? হাবিবুল বললেন, ‘উইকেট কিন্তু এখন বদলে যাচ্ছে। আপনারা ঢাকার বাইরে কতটা ম্যাচ দেখেছেন, দেখছেন কি না জানি না। বগুড়া, রাজশাহী এসব জায়গায় উইকেট কিন্তু ভালো হচ্ছে। এসব জায়গায় স্পিনের চেয়ে ফাস্ট বোলাররা বেশি খেলছেন। আমরা চাই, যেসব জায়গায় খেলা হবে সেখান থেকে যেন ফল আসে। ব্যাটসম্যানরা যে আধিপত্য করবেন এমনও কথা নেই। আবার ফাস্ট বোলাররা সাহায্য পেলেই যে স্পোর্টিং উইকেট হবে তাও না। স্পিনিং উইকেটও স্পোর্টিং হতে পারে। ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের এখান থেকে স্পিনে আমরা বেশি সাহায্য পেয়ে থাকি। এখন তো ঘরোয়া ক্রিকেটে ফ্ল্যাট উইকেট হলে আমরা স্পিন খেলাও ভুলে যাচ্ছি। স্পিনিং উইকেটে সেই অভ্যাসটাও ব্যাটসম্যানদের হয়ে যাচ্ছে। এই ভারসাম্য থাকা জরুরি। এসব রাতারাতি বদলাবে না, তবে আস্তে আস্তে উইকেট বদলাচ্ছে।’
হাবিবুল বললেন, এবারও উইকেটে ঘাসটাও যেন বেশি থাকে সে ব্যাপারে কিউরেটরদের বলা হয়েছে, ‘এমনিতে আমাদের উইকেটে ২-৩ মিলিমিটার ঘাস থাকে। কোনো উইকেটে ৪ মিলিমিটার থাকে। এবার আমরা বলেছি যেন ৬ মিলিমিটার ঘাস রাখা হয় কিছু উইকেটে। গতবারও কিছু মাঠে ফাস্ট বোলাররা বেশি বল করেছেন, স্পিনাররা ওরকম সুযোগ পাননি।’
তবে সবকিছুর মূল কথা, ঘরোয়া ক্রিকেটের সংস্কৃতি পরিবর্তন করা মানে সেটা আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা। চতুর্থ দিনে গিয়ে বেশির ভাগ ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে পড়ে, ক্রিকেটাররা কোনোমতে দিনটা পার করে দিতে চান- সেটা না করা। সেটা করার জন্য ম্যাচ ফি বাড়ানোর মতো কিছু কথাও চলে আসে। আজ এসব নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রধান নির্বাহী।, তিনি বললেন, খুব বেশি না হলেও এবার বাড়বে। সংখ্যাটা অবশ্য জানালেন না।
শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের অংশ নেওয়া, ফিটনেস বাড়ানো এসব উদ্যোগ থেকে এবারের জাতীয় লিগ কতটা জমবে সেটা সময়ই বলে দেবে।