• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কাঠখড় পুড়িয়ে প্রাগ থেকে জয় নিয়ে ফিরল বার্সেলোনা

    কাঠখড় পুড়িয়ে প্রাগ থেকে জয় নিয়ে ফিরল বার্সেলোনা    

    চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র অনুষ্ঠানে বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গে এক গ্রুপে পড়ার পর স্লাভিয়া প্রাগ প্রেসিডেন্ট হেসেছিলেন। সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে ছিল কঠিন বাস্তবতা। যদিও সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম ম্যাচেই ইন্টারের সঙ্গে ড্র করেছিল তারা মিলানে। প্রাগে এরপর ডর্টমুন্ডের কাছে হেরেছিল চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাবটি। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে আবার স্বরূপে ফিরে বার্সাকে প্রায় আটকে দিচ্ছিল স্লাভিয়া প্রাগ। রূপকথার গল্প লেখা হয়নি, বার্সা কোনোমতে জয় নিয়ে ফিরেছে প্রাগ থেকে। স্লাভিয়া স্ট্রাইকার পিটার ওলায়াঙ্কার আত্মঘাতী গোলে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে বার্সা।  

    ম্যাচটা বার্সার জন্য এতোখানি কঠিন হবে সেটা আগেও ধারণা করা কঠিন ছিল। ম্যাচের ৩ মিনিটেই লিওনেল মেসি বার্সাকে এগিয়ে নেওয়ার পর অমন কিছু ধারণা করা অবান্তরও মনে হচ্ছিল। স্লাভিয়ার অর্ধে শুরুতে প্রেস করছিল বার্সা। মেসির গোলও সেই প্রেসিংয়ের ফসল। বল জিতেছিলেন মেসিই, এরপর আর্থারকে পাস দিয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন তিনি। ফিরতি পাস প্রথম সুযোগেই শট করে গোলে পরিণত করেন মেসি। এই গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে টানা ১৫ মৌসুম গোল করা প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন। 

    শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও এরপর সব হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে স্লাভিয়া প্রাগ। প্রথমে কিছুক্ষণ রক্ষণে মনোযোগী হয় তারা। এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময়ে একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে বার্সাকে অস্বস্তিতে ফেলছিল স্লাভিয়া প্রাগ। মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান তখন আরও একবার বার্সার হাল ধরেন। প্রথমার্ধে তিনটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়েছেন তিনি। আর বার্সা এই সময়ে স্লাভিয়া প্রাগের গোলরক্ষক অন্দ্রেজ কলারকে একবারই পরীক্ষায় ফেলতে পেরেছে। ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ংয়ের শট তখন শক্তহাতে ফিরিয়েছেন তিনি।


    বার্সাকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছিলেন লুকাস মাসুপুস্ত। প্রথমার্ধে স্টেগান একবার তার নিচু শট ঠেকিয়ে দেন। এরপর পিকের ভুলের সুযোগ নিয়ে গোলের দিকে এগিয়ে গিয়েও তিনি কাজের কাজটা করতে পারেননি। স্টেগানের ম্যাচের সেরা সেভ অবশ্য আরও আগে। জারোস্লাভ জিলিনি গোলের আট গজ দূর থেকে শট করেও গোল পাননি স্টেগানের সেভের জন্য।

    প্রথমার্ধের গোলের সুযোগ মিসের হতাশা দ্বিতীয়ার্ধে ভুলতে সময় নেয়নি স্লাভিয়া প্রাগ। বার্সা পরের অর্ধেও ছিল চাপে। বিরতির পাঁচ মিনিট পর সেই মাসুপুস্ত লং বল রিসিভ করে ঢুকে পড়েছিলেন বার্সার বক্সের ভেতর। এরপর পাস বাড়িয়েছিলেন ইয়ান বরলিকে। লেফটব্যাক বরলি এরপর গোল করে সমতায় ফেরান স্লাভিয়া প্রাগকে। যেভাবে খেলা চলছিল তাতে গোলটা প্রাপ্যই ছিল তাদের। 

    এই ম্যাচ থেকে খালি হাতে ফেরাটাও হয়ত প্রাপ্য ছিল না তাদের। যে গোলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল নির্ধারণ হয়েছে সেটাও দুর্ভাগ্যের স্লাভিয়া প্রাগের জন্য। মেসির ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল নিজের বক্সের ভেতর প্রথমে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন স্ট্রাইকার ওলিয়েঙ্কার। পরে সুয়ারেজ বাইলাইনের কাছ থেকে গোলে শট করেছিলেন। সেটা কোনোভাবেই গোলে ঢুকত না। কিন্তু বল যাওয়ার সময় ওলিয়েঙ্কারের গা ছুঁয়ে গেল দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় স্লাভিয়ার জালে। ৫৭ মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সাও।

    আরও একবার পিছিয়ে পড়েও বার্সার বিপক্ষে মনোবল হারায়নি স্লাভিয়া প্রাগ। শেষদিকে এর্নেস্তো ভালভার্দে নিজেও চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। ডাগ আউটে হাত পা ছুড়ে খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। নিজেদের শরীর বিলিয়ে দিয়ে একেবারে শেষ পর্যন্ত ডিফেন্ড করে যেতে হয়েছে বার্সাকে।

    সুয়ারেজ ইউরোপে টানা ১৯ অ্যাওয়ে ম্যাচ গোলশূন্য থাকার রেকর্ডটা ২০ এ নিয়ে গেছেন। মেসির পাস থেকে আড়াআড়ি শটে গোল করার চেষ্টা করেছিলেন। সেটা গেছে বাইরে দিয়ে। সব মিলিয়ে ২০১৫ সাল থেকে অ্যাওয়ে ম্যাচে এই নিয়ে মোট ৬০ বারের চেষ্টাতেও ব্যর্থ সুয়ারেজ। ব্যর্থ হয়েছেন মেসি নিজেও। গোলের একেবারে সামনে থেকে ফাঁকা বারে বলে পা ছুঁয়ে গোল করতে পারেননি তিনি। আরেকবার কলার আটকে দিয়েছেন মেসির প্রচেষ্টা।

    অ্যান্টোয়ান গ্রিযমান শুরু থেকেই ছিলেন আড়ালে। শেষ ২০ মিনিটের জন্য নামা উসমান ডেম্বেলেও তার জায়গায় নেমে কিছুই করতে পারেননি। উলটো একটি আক্রমণে দ্রুত শট না করায় মেসির বিরক্তির কারণ হয়েছেন।  আর্তুরো ভিদাল, ইভান রাকিটিচদের নামিয়ে ভালভার্দের একটা সময় মিডফিল্ডে শক্তির প্রয়োজনীয়তাও মেটাতে হয়েছে। বীরের মতো লড়ে যাচ্ছিল স্লাভিয়া প্রাগ। সিনোবো স্টেডিয়ামে তাই ম্যাচের একেবারে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল স্লাভিয়া প্রাগের স্বপ্ন। শুরু থেকেই দলকে অবিশ্বাস্য সমর্থন দিয়ে যাওয়া সমর্থকেরাও স্নায়ুর চাপে ফেলে দিয়েছিল বার্সাকে। এই পরিস্থিতি যেন খুব চেনা ভালভার্দের বার্সার।

    বার্সাকে স্লাভিয়া শেষ দশ মিনিটে বাধ্য করেছে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলতে। আর নিজেরা একের পর এক কাঁপিয়ে দিচ্ছিল পিকে-লেংলের রক্ষণ। পুরো ম্যাচে মোট ৯ টি শট টার্গেট করেছে স্লাভিয়া প্রাগ। ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিটে বদলি জোসেফ হুসবার শট অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে গেলে বেঁচে যায় বার্সা। এরপর হতাশায় ঘাসেই লুটিয়ে পড়েছেন স্লাভিয়া প্রাগ কোচ। ম্যাচ শেষের বাঁশির পর মেসির অভিব্যক্তি বলে দিয়েছে কতোখানি হতাশ তিনি। ফল পক্ষে যাক আর বিপক্ষে, দুর্দান্ত ম্যাচটা দেখার জন্য যতই বিনোদন যোগাক- দুই দলের জন্যই ম্যাচ শেষ হয়েছে হতাশায়। স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা আসলে বেঁচে গেছে পুরো ম্যাচেই। টের স্টেগান ত্রাতা হয়ে গেছেন আরও একবার। পরের মাঠের বার্সার জুজুটা যে এখনও কাটেনি সেই প্রমাণ আরও একবার দিয়ে গেছে বার্সার খেলোয়াড়রা।

    গ্রুপের অন্য ম্যাচে ইন্টার মিলান ২-০ গোলে হারিয়েছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে। ৭ পয়েন্ট নিয়ে তাই গ্রুপে সবার ওপরে বার্সা। ডর্টমুন্ড ও ইন্টারের পয়েন্ট চার করে। আর স্লাভিয়া প্রাগ সবার নিচে এক পয়েন্ট নিয়ে। এমন লড়াইয়ের পর পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা নিশ্চয় হতাশার তাদের জন্য।