• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ব্রাভোর বোকামির পর ওয়াকারের পাহারা, সার্বিয়ায় সন ভুললেন যন্ত্রণা

    ব্রাভোর বোকামির পর ওয়াকারের পাহারা, সার্বিয়ায় সন ভুললেন যন্ত্রণা    

    চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বের চতুর্থ রাউন্ডের দ্বিতীয় দিন দেখেছে মোট ৪টি লাল কার্ড। অবশ্য দশ জনের কোনো দলকেই হারতে হয়নি। মোট গোল হয়েছে ২৭টি। পেনাল্টি ঠেকিয়ে যেমন নায়ক হয়ে গেছেন কেইলর নাভাস, লাল কার্ড দেখে গোলরক্ষকদের নতুন রেকর্ডও গড়তে হয়েছে ক্লদিও ব্রাভোকে।

    ব্রাভোর ভুলের পর এক পয়েন্টেই স্বস্তি সিটির
    দ্বিতীয়ার্ধে ক্লদিও ব্রাভো যখন মাঠে নেমেছেন তখন এক গোলে এগিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি। প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে তার দল। ৪৩ মিনিটে পেনাল্টি মিস না করলেও সিটির লিড হতে পারত দুই গোলেরও। ক্লদিও ব্রাভো চাপমুক্তই ছিলেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে সুযোগ পাওয়াটা তো বরাবরই বিরল তার জন্য। কিন্তু ম্যাচটা আর শেষ করতে পারেননি তিনি। ৮৪ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম বদলি গোলরক্ষক হিসেবে লাল কার্ড দেখার রেকর্ডও গড়তে হয়েছে তার। আর ম্যানচেস্টার সিটি আটালান্টার সঙ্গে ড্র করেছে ১-১ গোলে।

    সিটির দ্বিতীয় রাউন্ড আর নিশ্চিত হয়নি তাই। পরের দুই ম্যাচ থেকে আর এক পয়েন্ট পেলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে শেষ ষোল। ইতালিতে ম্যাচ ড্র হলেও উত্তেজনা ছিল। পেনাল্টি মিস, গোলরক্ষকের লাল কার্ড, এর পর আউটফিল্ড ফুটবলারের গোলবারের নিচে দাঁড়ানো- সবকিছুই দেখেছে সান সিরো। 

    আগের ম্যাচ থেকে একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন এনেছিলেন পেপ গার্দিওলা। এডারসন মোরায়েস নতুন ৫ জনের একজন ছিলেন না। ছিলেন শুরু থেকেই সিটির গোলবারের নিচে। বিরতির পর আর ইনজুরি শঙ্কায় তাকে মাঠে নামাননি গার্দিওলা। এডারসনের জায়গায় নেমে ক্লদিও ব্রাভো ৮১ মিনিটে জোসেপ ইলচিচকে বক্সের বাইরে এসে ফাউল করে বসেছিলেন। রেফারিও সঙ্গে সঙ্গে লাল কার্ড দেখিয়েছেন। পরে বদলি হিসেবে নেমে ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার বাকি সময় ছিলেন সিটির গোলবারের নিচে। এর পর আরও প্রায় দশ মিনিট হয়েছে খেলা, সিটি নিজেদের পায়ে বল রেখে ওয়াকারকে ভালোভাবেই পাহারায় রেখেছিল। এই সময়ের ভেতর মাত্র একটি সেভ করতে হয়েছে ওয়াকারকে।

    তিন ম্যাচে পয়েন্ট শূন্য, প্রতিপক্ষ গোল দিয়েছে মোট ১১ বার। আটালান্টার সঙ্গে তাই ম্যানচেস্টার সিটির তুলনা হয় না। তুলনা দেওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না প্রথমার্ধে। ম্যানচেস্টার সিটি একের পর এক আক্রমণ করে গেছে, খেলাটা তাই হয়েছে মূলত মাঠের এক অর্ধে। ৭ মিনিটে হেসুসের দারুণ এক পাস থেকে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন রাহিম স্টার্লিং। হেসুস নিজে অবশ্য এর পর ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। ৪৩ মিনিটে পেনাল্টি নিয়ে মেরেছেন বাইরে দিয়ে।

    আটালান্টার মাঠ ইউয়েফার স্টেডিয়াম নীতি বহির্ভুত হওয়ায় চ্যাম্পিয়নস লিগে তারা ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে সান সিরোক। প্রথমার্ধের একেবারে শেষে হেসুসের ওই পেনাল্টি মিস পরে উৎসাহ যুগিয়েছে আটালান্টাকে। ৪৯ মিনিটে মারিও পাসালিচ হেডে গোল করে সমতায় ফেরান দলকে। ব্রাভোর রাতটা শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল, শেষে হোঁচট খেয়েছেন তিনি। তার বক্স ছেড়ে বেরিয়ে আসার অদ্ভুত সিদ্ধান্তটা শেষ পর্যন্ত হারিয়েও দিতে পারত সিটিকে।  প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে শেষ ম্যাচটা তাই আর নির্ঝঞ্ঝাট হয়নি গার্দিওলার জন্য।

    গ্রুপের ডিনামো জাগরেব ও শাখতার দোনেতস্কের অন্য ম্যাচটি অবশ্য রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে আরও কয়েক গুণ বেশি। তবে সেটা ডিনামো জাগরেবের জন্য হয়েছে হতাশার। ১-১ সমতায় থাকা ম্যাচে দুইদলেরই একজন করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন দ্বিতীয়ার্ধের শেষ ভাগে। এর পর ৮৩ আর ৮৯ মিনিটে দুই গোল দিয়েও জয় পাওয়া হয়নি ক্রোয়েশিয়ার দলটির। যোগ করা সময়ে দুই গোল দিয়ে শাখতার দোনেতস্ক ম্যাচ ড্র করেছে ৩-৩ গোলে। গ্রুপে এই দুই দলেরই পয়েন্ট ৫। আর আটালান্টার সবার নিচে, এক পয়েন্ট নিয়ে। 

    সনের জোড়া গোলের দ্বিতীয় রাউন্ড দেখছে টটেনহাম
    এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচের পর এতো তাড়াতাড়ি হিউং-মিন সনের ফেরাটা ছিল অবাক করা। যে যন্ত্রণা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন, এর পর তিন দিনের মাথায় ফুটবল খেলার মানসিকতাই তো থাকার কথা নয় তার। মাউরিসিও পচেত্তিনো অবশ্য ফুটবল দিয়েই সনকে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। দলের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন সার্বিয়ায়। রেডস্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন সন, টটেনহাম জিতেছে ৪-০ ব্যবধানে। অলিম্পিয়াকোয়সের সঙ্গে ঘরের মাঠে পরের ম্যাচে ড্র করলেই টটেনহামের দ্বিতীয় রাউন্ড যাত্রা নিশ্চিত হয়ে যাবে টানা তৃতীয়বারের মতো।

    সার্বিয়ার মাঠে রেড স্টারের বিপক্ষে খেলাটা সহজ নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ২১ ম্যাচে রেডস্টার ঘরের মাঠে হেরেছে মাত্র ২ বার। গতবার লিভারপুলও এই মাঠে গিয়ে হেরে এসেছিল ২-০ ব্যবধানে। সে মাঠেই টটেনহাম জিতেছে মৌসুমের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ। কঠিন লড়াই প্রত্যাশা করলেও কাজটা তাদের জন্য হয়েছে অনেক সহজ। মৌসুমে প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পাওয়া জিওভানি লো সেলসোর অভিষেক গোলে এগিয়ে গিয়েছিল টটেনহাম। প্রথমার্ধ শেষে স্কোরলাইন ছিল ১-০।

    ৫৭ আর ৬১ মিনিটে জোড়া গোল করে সন কাজটা সহজ করেছেন দলের জন্য। প্রথম গোলের পর সন উদযাপন করেছেন দুই হাত জোড় করে মাফ চাওয়ার মতো করে। কেন এমন উদযাপন সেটা আন্দাজ করে নেওয়া যায় সহজেই। আর এমন কাকতাল, সন যখন ওই গোল দিয়েছেন, প্রায় একই সময়ে আন্দ্রে গোমেজ তখন  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তদের ধন্যবাদ জানানো ভিডিও পোস্ট করেছেন। সনের স্বস্তি পাওয়ার দিন খানিকটা স্বস্তি পেয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনও। একাদশে অনিয়মিত হয়ে পড়া মিডফিল্ডার বদলি হয়ে নেমে করেছেন টটেনহামের শেষ গোলটি।

    গ্রুপের অন্য ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখ শতভাগ জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। নিকো কোভাচকে কোচের পদ থেকে ছাঁটাই করার পর প্রথম ম্যাচ ছিল বায়ার্নের। ঘরের মাঠে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে জয় নিশ্চিত করতে অবশ্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। রবার্ট লেভানডফস্কির ৬৯ মিনিটের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বায়ার্ন। মাঠে নামার ৩৩ সেকেন্ডের ভেতর গোল করে ৮৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইভান পেরিসিচ। ডের ক্লাসিকোর আগে কোচবিহীন বায়ার্নের জন্য আপাতত ২-০ গোলের জয়টাই স্বস্তির।


    আরও পড়ুনঃ আবারও শেষ মুহুর্তের গোলে জয় পেল জুভেন্টাস


    অ্যাটলেটিকোর দুর্দশা বাড়ল আরেক দফা
    লা লিগায় টানা দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারানোর পর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবার হেরেই গেছে বেয়ার লেভাকুসেনের কাছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের চতুর্থ গেম উইকে এসে তাই জার্মানির চারটি ক্লাবই পেয়েছে জয়। লেভারকুসেন নিজেদের মাঠে অ্যাটেলেটিকোকে হারিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।

    ৫৫ মিনিটের ভেতর দুই গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লেভারকুসেন। এর পর নির্ধারিত সময়ের ছয় মিনিট বাকি থাকতে নাদিম আমিরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। দশজনের দলের বিপক্ষে আলভারো মোরাতা এক গোল শোধ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটাও একেবারে শেষে গিয়ে। এর পর আর ম্যাচে ফেরার সময় বা সুযোগ কোনোটাই আর পায়নি অ্যাটলেটিকো।

    পয়েন্ট টেবিলে অবশ্য বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হয়নি তাতে। লেভারকুসেন পেয়েছে মৌসুমের প্রথম জয়। জুভেন্টাস দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে  ফেলেছে লোকোমোটিভ মস্কোকে হারিয়ে। লেভারকুসেন আর লোকোমোটিভ দুই দলেরই পয়েন্ট ৩। আর অ্যাটলেটিকোর ৭।  পরের ম্যাচে অ্যাটলেটিকোর প্রতিপক্ষ জুভেন্টাস।  

    ইকার্দি নাভাস মিলে জেতালেন পিএসজিকে
    ঘরের মাঠে ক্লাব ব্রুজকে হারাতে বেশ কষ্টই করতে হয়েছে পিএসজিকে। সপ্তাহের শুরুতে লিগের তলানির দলের কাছে হেরেছিল পিএসজি, ব্রুজের বিপক্ষেও জয়টা হাতছাড়া হতে বসেছিল। ৭৬ মিনিটে এমবায়ে দিয়াগ্নের পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিতে ব্রুজকে আর ম্যাচে ফিরতে দেননি কেইলর নাভাস।

    এর আগে প্রথমার্ধে মাউরো ইকার্দির গোলে এগিয়ে ছিল পিএসজি। এডিনসন কাভানি এদিনও সুযোগ পাননি একাদশে। ইকার্দি অবশ্য যেমন ফর্মে আছেন, তাতে সুযোগ মেলাটাও কঠিন তার জন্য। এই নিয়ে ইকার্দি তার শেষ ৭ ম্যাচে গোল করলেন ৮টি। ইকার্দির ওই গোলে চতুর্থ জয় নিশ্চিত হয়েছে পিএসজির।


    আরও পড়ুনঃ রদ্রিগোর হ্যাটট্রিকের রাতে বড় জয় রিয়াল মাদ্রিদের


    পিএসজির পরের ম্যাচ রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। ইনজুরি থেকে ফিরে সে ম্যাচে খেলার কথা রয়েছে নেইমারের। ব্রাজিলিয়ান ফ্রান্সে আসার পর থেকে নেইমারসহ পিএসজি খেলেছে ৬৩ ম্যাচ, আর নেইমারকে ছাড়া খেলতে হয়েছে ৬৪ ম্যাচ।

    জয়টা মনমতো না হলেও দিনশেষে তিন পয়েন্টই জুটেছে থমাস তুখলের দলের। তারা অবশ্য ভালোভাবেই জানেন গ্রুপ পর্ব দিয়ে বিচার করা হবে না তাদের। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই আসল পরীক্ষা শুরু।