• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ম্যানচেস্টার ডার্বি, বায়ার্নের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে হানা, এবং রোমের রাঘব বোয়াল 'বধ' মিশন

    ম্যানচেস্টার ডার্বি, বায়ার্নের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে হানা, এবং রোমের রাঘব বোয়াল 'বধ' মিশন    

    মিডউইক ফিক্সচারের পর এই সপ্তাহে আবারও মাঠে গড়াচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ। সপ্তাহের সবচেয়ে বড় ম্যাচটাও ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের। উত্তাপ ছড়াচ্ছে ইতালিতে, জার্মানিতে বায়ার্ন মিউনিখের প্রতিপক্ষ তাদের একচ্ছত্র আধিপত্যে হানা দেওয়া দলটি।


    ইতিহাদে লিভারপুলের ‘সমর্থন’ পাবে ইউনাইটেড

    স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের যখন ও পাড়ার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার ছিলেন, তখন তাদের পরিচয়টা ছিল ‘নইজি নেইবর’হিসেবেই। সেই ‘নইজি নেইবর’রাই এখন যেন ম্যানচেস্টারের মূল, ইউনাইটেড বলতে নেই চিত্রনাট্যেই নেই। লিগে লিভারপুলকে টেক্কা দিতে পারা একমাত্র দল ‘সিটিজেন’রা, ইউনাইটেড ধুঁকছে শীর্ষ ৬-এ থাকতেই। কিন্তু তারপরও ইতিহাদে পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই পেপ গার্দিওলার দল। মৌসুমের প্রথম ম্যানচেস্টার ডার্বিতে তাই হয়তো 'শত্রু' ইউনাইটেডের হয়েই গলা ফাটাবেন লিভারপুল সমর্থকেরা।

    লিভারপুলের কাছে হারের পর নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের সাথে ড্রয়ে ‘অল রেড’দের চেয়ে ১১ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে সিটি। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার জেতার ‘হ্যাটট্রিক’ তাদের কাছে অনেকটাই আকাশকুসুম ভাবনা। ইতিহাদে ফেভারিট গার্দিওলার দলই, কিন্তু ইউনাইটেডকেও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না পুরোপুরি। এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ১০-এর সাথে খেলা ৮ ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছে ইউনাইটেড (৩ জয়, ৪ ড্র)।

    পাকাপাকিভাবে ম্যানেজারের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ওলে গানার সোলশারের দল ধুঁকছে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ চার-এ ঢুকতে, কিন্তু লিভারপুল-সিটিদের বিপক্ষে তাদের ফর্ম দারুণ। এই মৌসুমে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের বিপক্ষে আরেকটু হলেই জিতে যেত তারা। সোলশারের দলের অবস্থান লিগটেবিলের যেমনই হোক, বড় ম্যাচে তাদের হারানো ঠিক কতটা কষ্টসাধ্য- গত সপ্তাহেই সেটা ওল্ড ট্রাফোর্ডে টের পেয়েছেন হোসে মরিনহো। টটেনহামকে ২-১ গোলে হারানোর আমেজটা এখনও তাজা ইউনাইটেডের।

    ইতিহাদে হয়তো সিটিকে হারানোর ‘দুঃসাহস’ করবেন না রাশফোর্ড-মার্শিয়ালরা। ২০১৯-এ নিজেদের মাঠে মাত্র ১বার হেরেছে সিটি। তবে উলভসের থেকে অনুপ্রেরণা নিতেই পারে ইউনাইটেড। ইতিহাদে অবশ্য সিটির জালে বল পাঠানোর সম্ভাবনাই বেশি সোলশারের দলের। নিজেদের মাঠে শেষ ৭ ম্যাচে ক্লিনশিট রাখতে পারেননি এডারসনরা। সিটির ‘হোম’ ফর্ম যতটা দুর্দান্ত, ইউনাইটেডের ‘অ্যাওয়ে’ ফর্মও ঠিক ততটাই হতাশাজনক। প্রতিপক্ষের মাঠে শেষ ১১ ম্যাচে মাত্র ১বার জিতেছে তারা।

     

     

    তবে কেতাবী পরিসংখ্যানের বাইরে ম্যাচে ইউনাইটেডের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন ম্যাকটমিনে-ফ্রেড জুটি। সিটির ‘নিউক্লিয়াস’ কেভিন ডি ব্রুইন এবং ‘ফালক্রাম’ রদ্রিকে আটকাতে পারলে সিটিকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব- সেটা হয়তো জানা আছে সোলশারের। স্পার্সের বিপক্ষে ইউনাইটেডের ডবল পিভোট জুটি ছিলেন দুর্দান্ত। সার্জিও আগুয়েরোকে পাচ্ছে না সিটি, সেটাও হয়তো ইউনাইটেডের জন্য বড় ‘প্লাস পয়েন্ট’। সব মিলিয়ে আসলে ‘রেড ডেভিল’দের হয়তো হারানোর নেই কিছুই, এই ম্যাচে জয় না পেলে হয়তো নিশ্চিতভাবেই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হবে সিটিকে।

    ম্যানচেস্টার সিটি-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

    ৭ ডিসেম্বর

    রাত ১১.৩০


    উইল দ্য রিয়েল মোহামেদ সালাহ প্লিজ স্ট্যান্ড আপ?

    মোহামেদ সালাহ-রবার্তো ফিরমিনো-সাদিও মানে। ক্লপের অধীনে গত ২ মৌসুমে সব প্রতিপক্ষকে এই ত্রিশূলের আঘাতেই ছিন্নবিন্ন করছে লিভারপুল। লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ‘অল রেড’দের আক্রমণের মূল কান্ডারি ছিলেন মোহামেদ সালাহ; মানে-ফিরমিনো ছিলেন পার্শ্বচরিত্রে। কিন্তু এই মৌসুমে সালাহর জায়গায় এসেছেন মানে। এতটা বিবর্ণ সালাহকে আগে দেখেনি প্রিমিয়ার লিগ। মানে যখন সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌঁড়ে পাল্লা দিচ্ছেন এবং ব্যালন ডি’অরের শীর্ষ পাঁচ-এ আছেন; তখন সালাহকে ধুঁকতে হচ্ছে গোল পেতেই। কিন্তু বোর্নমাউথের বিপক্ষে ম্যাচটিই হতে পারে সালাহকে ফর্মে ফেরানোর আসল টোটকা।

    গত মৌসুমে এই ফিক্সচারে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করেছিলেন সালাহ। প্রতিপক্ষ হিসেবে ‘চেরি’দের বরাবরই বেশ পছন্দ সালাহর, গোল করেছেন তাদের বিপক্ষে শেষ ৪ ম্যাচে (৬টি)। সালাহর মতই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন ফিরমিনো, কিন্তু মিশর ফরোয়ার্ডের মত কখনও লিভারপুলকে একা টেনে নিতে হয়নি তার। সালাহকে নিয়ে বরাবরই নিশ্চিন্ত থাকার কথা বলেছেন ক্লপ। কিন্তু গত ২ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবার লিগে ১৫ ম্যাচ শেষে করেছেন মাত্র ৬ গোল। হওয়া সালাহ নিজেও জানেন, প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জেতার স্বপ্ন সত্যি করতে হলে তার ফর্মে ফিরতেই হবে, আর বোর্নমাউথের বিপক্ষের ম্যাচটিই হতে পারে তার আদর্শ জ্বালানি।

    বোর্নমাউথ-লিভারপুল

    ৭ ডিসেম্বর 

    রাত ৯টা


    রাঘব বোয়াল বধের পথে রোম

    সিরি আ-এর শীর্ষ দুই দল, ইন্টার মিলান এবং জুভেন্টাসের খেলা কাকতালীয়ভাবে এই গেমউইকে পড়েছে রোমের দুই দল রোমা এবং লাৎসিওর বিপক্ষে। এই গেমউইকের আগে থেকেই হয়তো সিরি আ-এর মূল দুই রাঘব বোয়ালকে আটকানোর স্বপ্ন দেখছিল রোমের দুই দল। নিজেদের কাজটা করে রেখেছে রোমা, সান সিরো থেকে ড্র নিয়েই ফিরেছে তারা। এবার অপেক্ষা লাৎসিওর।

    সিরি আ-তে শীর্ষ দলগুলোর মধ্যে এবার আলাদা করে নজর কেড়েছে লাৎসিও। ১৪ ম্যাচ শেষে লিগে তাদের (৩৩) চেয়ে বেশি গোল করেছে কেবল আটালান্টা (৩৪)। সিরি আ-এর সর্বোচ্চ গোলদাতা চিরো ইমোবিলেতেই ভরসা রাখবে লাৎসিও। এই মৌসুমে রক্ষণ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে মরিজিও সারিকে। ডি লিট, বনুচ্চিরা ফর্মে নেই; সাথে প্রতিপক্ষে লাৎসিওর বৈরী পরিবেশ এবং সিরি আ-এর সর্বোচ্চ গোলদাতা। মৌসুমের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেই রোম যাচ্ছে সারির দল।

    এই মৌসুমে ইমোবিলে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেও জুভেন্টাসের বিপক্ষে তার রেকর্ড অবশ্য বেশ হতাশার। ‘তুরিনের বুড়ি’দের সাথে খেলা ১৫ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল করেছেন তিনি। কিন্তু তারপরও আগের চেয়ে এই ইমোবিলে যে অনেক পরিণত এবং অনেক বেশি ক্ষীপ্র; সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন সারি নিজেই। রোম থেকে খালি হাতে ফেরার সম্ভাবনা কমই বলা চলে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের। লাৎসিওর বিপক্ষে শেষ ১২ ম্যাচের ১০টিতে জিতেছে তারা।

    লাৎসিও-জুভেন্টাস

    ৮ ডিসেম্বর

    রাত ১.৪৫

     


    এল ক্লাসিকো এবং ইনজুরি জর্জর রিয়াল

    ইনজুরি নিয়ে গত কয়েক মৌসুম থেকেই বেশ ভুগতে হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকে। কিন্তু এবার যেন সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে রিয়ালের দুর্ভাগ্য। এখন পর্যন্ত মোট ২৬বার ইনজুরিতে পড়েছেন রিয়ালের ফুটবলাররা। এল ক্লাসিকোর আগে নতুন করে রিয়ালকে দুঃসংবাদ দিয়েছে ইনজুরি। ১৮ ডিসেম্বর বার্সেলোনার বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকো মিস করবেন এডেন হ্যাজার্ড এবং মার্সেলো; সংশয় আছে গ্যারেথ বেলের খেলা নিয়েও। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ১৬ নিশ্চিত করা হয়েছে আগেই, লিগেও বার্সেলোনার সমান পয়েন্ট তাদের। কিন্তু তারপরও ইনজুরির কারণে স্বস্তিতে থাকছে পারছেন না ম্যানেজার জিনেদিন জিদান।

     

     

    এই মৌসুমে অবশ্য স্কোয়াড ডেপথের দুর্দান্ত পরিচয় পেয়েছে রিয়াল। বেলদের অনুপস্থিতিতে জ্বলে উঠেছেন রদ্রিগো গোজ। মাঝমাঠে ফেদেরিকো ভালভার্দের উত্থানটা রীতিমত অবিশ্বাস্য। সাবেক ব্যালন ডি’অর জেতা লুকা মদ্রিচ এখন একাদশে জায়গা পেতেই হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু এত এত ইনজুরির কারণে মানসিকভাবেও কিছুটা হয়তো পিছিয়ে পড়বে রিয়াল। জিদান জানেন, এল ক্লাসিকোর আগে কোনোভাবেই পয়েন্টের দিক দিয়ে বার্সেলোনার চেয়ে পিছিয়ে পড়া যাবে না। সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জটা শুধু প্রতিপক্ষ নয়; জিদানদের লড়তে হবে নিজেদের সাথেও।

    রিয়াল মাদ্রিদ-এস্পানিওল

    ৭ ডিসেম্বর

    সন্ধ্যা ৬টা


    বায়ার্নের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে গ্লাডবাখের হানা

    বুন্দেসলিগাকে অনেক আগেই যেন নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে বায়ার্ন মিউনিখ। গত মৌসুমে শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেছিল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে বায়ার্নই। কিন্তু এই মৌসুমে লিগে একেবারেই সুবিধা করতে পারছে না বাভারিয়ানরা। গত সপ্তাহে বেয়ার লেভারকুসেনের কাছে হেরে যাওয়ায় জার্মান লিগ টেবিলের ৪-এ নেমে গেছে বায়ার্ন।

    এবারের বুন্দেসলিগার সবচেয়ে বড় চমক হয়তো বরুশিয়া মোনশেনগ্লাডবাখ। স্টিন্ডেল-থুরাম-হফম্যানে সওয়ার হয়ে ১৪ ম্যাচ শেষে জার্মান লিগের শীর্ষে আছে তারা। বায়ার্নের সাথে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান ৪। লিগে নিজেদের মাঠে তাই সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে গ্লাডবাখ। ম্যানেজার মার্কো রোজ জানেন; নিজেদের মাঠে বায়ার্নকে হারাতে পারলে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর বুন্দেসলিগা ঘরে তোলার স্বপ্নটা আরও ভালভাবে দেখতে পারবে তারা। 

     

     

    নিকো কোভাচকে বরখাস্ত করার পরের সপ্তাহে ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে দেওয়া বায়ার্ন গত গেমউইকে হেরে গেছে লেভারকুসেনের কাছেই। এই মৌসুমে ধারাবাহিকতার অভাবটা সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে বাভারিয়ানদের। টটেনহামের জালে ৭ গোল দেওয়ার পরের ম্যাচেই হফেনহেইমের কাছেও হেরে গিয়েছিল তারা। অস্থায়ী ম্যানেজার হ্যান্ড-ডিয়েটার ফ্লিকও জানেন; এই ম্যাচ হারলে বুন্দেসলিগা ধরে রাখার মিশনটা কঠিন হয়ে পড়বে আরও। নতুন ম্যানেজার হিসেবে মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি, মাউরিসিও পচেত্তিনোদের নাম শোনা যাচ্ছে। বরুশিয়া শহরের এক ক্লাবকে হারিয়েছেন এরই মাঝে, ফ্লিকের লক্ষ্য এবার আরেক বরুশিয়া।

    বরুশিয়া মোনশেনগ্লাডবাখ-বায়ার্ন মিউনিখ

    ৭ ডিসেম্বর

    রাত ৮.৩০