টেস্ট খেলতে আপত্তি বাংলাদেশের, তারকা ক্রিকেটারদের কেউ যেতে চান না টি-টোয়েন্টিতেও
পাকিস্তান সফর নিয়ে বিসিবির ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। আজ মিরপুরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছেন, এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিসিবি। আপাতত সরকারি সবুজ সংকেত পাওয়া সাপেক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে চায় বাংলাদেশ। তবে তাতেও কিছু তারকা ক্রিকেটারর আপত্তি আছে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।
বিসিবি যে টেস্টের জন্য দল পাঠাতে চাইছে না, সেটা কিছুদিন আগেই বলেছিলেন প্রধান নির্বাহী। তবে পুরো ব্যাপারটা আজ পরিষ্কার করেছেন বোর্ড সভাপতি। পাকিস্তান চাইছে টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট সিরিজটাও পর পর তাদের ওখানে হোক। কিন্তু একই সফরে টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট খেলার সম্ভাবনা যে নেই বললেই চলে সেটা খোলাসা করেছেন নাজমুল হাসান, ‘এটা এখনো চলছে। একেবারে সব ফাইনাল এখনই হয়ে গেছে এরকম কিছু না। এখানে অনেক কিছু ইনভলড। এখানে একটা হচ্ছে আমরা খেলতে চাব কি না। এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। এর বাইরে খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ এদের মতামত আছে। আরেকটা হচ্ছে সরকার থেকে নিরাপত্তার সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে কি না।’
নিরাপত্তার ব্যাপারে বিসিবি সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই। ওখানে মেয়েরা গেছে, অনূর্ধ্ব ১৬ যারা গেছে তাদের কাছ থেকে শুনেছি নিরাপত্তা ভালো। কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও কিছু ইস্যু আছে। পাকিস্তানে ঝুঁকি তো আছেই। অনেক দেশের চেয়ে ওখানে শংকা বেশি। এটা এক নম্বর।’
খেলোয়াড়দের আপত্তির ব্যাপারটাও ভাবাচ্ছে বোর্ড সভাপতিকে, ‘দুই নম্বর হচ্ছে খেলোয়াড়েরা ও কোচিং স্টাফ যাবে কি না। কোচিং স্টাফদের মধ্যে ওখানে যারা আছে তারা বেশির ভাগই যেতে রাজি নয়। খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলে বুঝেছি কিছু খেলোয়াড় যেতে চায় না। এখন পর্যন্ত যেতে চায় না। আবার কেউ কেউ শর্ট পিরিয়ডে যেতে রাজি। আমি জানতে চেষ্টা করেছি শর্ট পিরিয়ডে রাজি হচ্ছে কেন। ওদের বাবা মা সবাই খুব চিন্তিত, উৎকন্ঠিত পাকিস্তান সফর নিয়ে। পরিবার থেকে না করছে। বলেছে না গেলে কী হয়।’
পাকিস্তানে খেলা মানে পুরোটা সময় একরকম অন্তরীণ হয়ে থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। এরকম কারাগারের মতো টানা থাকা সম্ভব কি না সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে বিসিবি সভাপতির, ‘ওরকম বদ্ধ পরিবেশে কতদিন থাকা যায় সেটাও একটা প্রশ্ন। এত লম্বা অবস্থায় কেউ অতদিন থাকতে চায় না। টি-টোয়েন্টি এক সপ্তাহের জন্য খেলে আমরা আসি, এরপর দেখা যাবে টেস্ট খেলতে যাব কি না। আপাতত আমরা বলেছি, টি-টোয়েন্টি খেলতে যাব। সবাই রাজি থাকলে আমরা টি-টোয়েন্টির জন্য দল পাঠাব। দুই নম্বর হচ্ছে, সব জায়গা থেকে সরকারি ক্লিয়ারেন্স এখনো পাইনি। সেটা দুয়েক দিনের মধ্যে পেয়ে যাওয়ার কথা। আমরা ঠিক করেছি, আমাদের সিকিউরিটি ছাড়াও ডিজিএফআই, এনএসআই নিয়ে যাব। আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট খেলার কোনো সুযোগ এই মুহূর্তে দেখছি না। আমার মনে হয় না এই মুহূর্তে এটা সম্ভব।’
তবে টি-টোয়েন্টি খেললেও যে পূর্ণশক্তির দল পাঠাতে পারবে বাংলাদেশ, সেটি নিয়ে সংশয় আছে বিসিবি সভাপতির, ‘আমরা তো টি-টোয়েন্টির জন্য সরকারি ক্লিয়ারেন্স এখনো পাইনি। খেলোয়াড়েরাও সবাই রাজি না এখনো। আমরা কাউকে জোর করতে চাই না। আমাদের দেখতে হবে আমরা ভালো একটা দল পাঠাতে চাই। এই মুহূর্তে চূড়ান্ত কিছু বলে দেওয়ার সুযোগ আসেনি। আমাদের তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ কেউ টি-টোয়েন্টিতেও যেতে চায় না। পাকিস্তানের এই জিনিসটা বোঝা উচিত।’
বরং এমন শংকার কথাও বললেন, যা থেকে আদৌ বাংলাদেশ যাবে কি না সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে, ‘আমরা চেষ্টা করব পাঠাতে। টিম তো হতে হবে। এখন সিনিয়ররা চার-পাঁচ যদি বলে পাঠাবে তাহলে জুনিয়ররাও তাদের পথে হাঁটতে পারে। তখন আমাদের কি করার আছে?’
আপাতত ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে তিনটি টি-টোয়েন্টি হওয়ার কথা। তবে টেস্ট যদি বাংলাদেশ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলে তাহলে তারিখের একটু রদবদল হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি, ‘তারিখ তো একটা দেওয়া আছে। এখনো সিদ্ধান্ত ফাইনাল হয়নি। এরকম যদি হয় যে টি-টোয়েন্টি এখানে খেলে টেস্ট অন্য জায়গায় খেলবে সেটা হলে সূচি একটু বদল হতে পারে।’
কিন্তু এই দুই টেস্ট তো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে না খেললে সেক্ষেত্রে এই দুই টেস্টের ভবিষ্যত কী হবে? বিসিবি সভাপতি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারলেন না, ‘পদ্ধতি যে আমি সব জানি সেটা বলা মুশকিল। আমি বিশ্বাস করি, ওরা আমাদের বিশ্বাস করে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে টেস্ট খেলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওরা খেলেছে, আমাদের সাথে করতে সমস্যা কোথায়? ওদের দেশে ক্রিকেট হোক, সেটা তো আমরাও চাই। কিন্তু আমাদের কথাও ভাবতে হবে। না গেলে কী হবে সেটা বলা কঠিন। একটা হতে পারে, আবার রিশিডিউল করার কথা ভাবছি। এক্সট্রিম হলে আরবিট্রেশন অন্য কোথাও যাবে।’