• বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ
  • " />

     

    মতিনের জোড়া গোলে ভর করে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

    মতিনের জোড়া গোলে ভর করে সেমিফাইনালে বাংলাদেশ    

    ফুলটাইম
    শ্রীলঙ্কা ০-৩ বাংলাদেশ


    বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের রূপ বদলালো এদিন। মাঠে আসা হাজার দশেক দর্শক আঁচ করতে পেরেছিলেন তাদের সমর্থনটা এদিন খুব বেশি দরকার বাংলাদেশের। ৬৪ মিনিটে মাঠের দর্শকদের আগেই হাত পা ছুড়ে খানিকটা লাফিয়ে ডাগ আউটে উদযাপন শুরু করে দিলেন জেমি ডে। তারও আগে মতিন মিয়া বুঝে গিয়েছিলেন এটাই তার সুযোগ। সুযোগ যেদিন কাজে লাগালেন সেদিন সব আলোই কেড়ে নিলেন মতিন। জেমি ডেকে উদযাপনের উপলক্ষ্যও এনে দিয়েছিলেন তিনি, দ্বিতীয় গোলটি করে। এর আগে শুরুতেই আরেক গোল করে মতিন চাপ কমিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের। তার জোড়া গোলের সঙ্গে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের আরেক গোলে ভর করে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে নিশ্চিত হয়েছে জেমি ডের দলের। 

    সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফ্রিকার দল বুরুন্ডি। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন জয়েও একটি আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে ডিফেন্ডার তপু বর্মন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন। সেমিফাইনালে তাই তাকে ছাড়াই মাঠে নামতে হবে স্বাগতিকদের।


     


    সেমিফাইনালে উঠতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দরকার ছিল বাংলাদেশের। এমন ম্যাচের আগে সবরকম ঝামেলায় ছিল লাল সবুজরা। জামাল ভুঁইয়ার চোট, ইয়াসিন খানের জ্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামতে দেয়নি তাদের। বাংলাদেশ কোচ তাই শেষ ম্যাচ থেকে একাদশে পরিবর্তন আনলেন চারটি। রিয়াদুল হাসান রাফি, বিশ্বনাথ ঘোষ, মাহবুবুর রহমান সুফিলদের সঙ্গে মাঠে নেমে অভিষেকও হয়ে গেল চট্টগ্রাম আবাহনীর মানিক হোসেনের। 

    আক্রমণাত্মক শুরুতে বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছিল জয়ের জন্য মরিয়া আজ তারা। ফল মিলল ১৭ মিনিটে। বাংলাদেশের আক্রমণের চাপে খেই হারানো শ্রীলঙ্কার রক্ষণ দুমড়ে মুচড়ে বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়েছিলেন মতিন। এর পর শ্রীলঙ্কার এক ডিফেন্ডারকে নাটমেগ করে কোনাকুনি শটে দূরের পোস্টে বল জড়িয়েই শুরু মতিনের উদযাপন। 

    জাতীয় দলের হয়ে এতোদিন কোনো গোলই ছিল না মতিনের। নাবিব নেওয়াজ জীবন ইনজুরিতে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ না পড়লে হয়ত সুযোগও মিলত না তার। প্রথম ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ছায়া হয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মতিন ওই ফিনিশ দিয়েই জাত চিনিয়েছেন। 

    ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০৫ নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কার রক্ষণ ভাঙতে আগের ম্যাচে পরিশ্রম করতে হয়েছিল ফিলিস্তিনকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে অবশ্য শ্রীলঙ্কার আঁটসাট রক্ষণ দেখা গেল না। উলটো ভুলের ছড়াছড়ি করে নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মারল তারা। প্রথমার্ধেই কোচ পাকির আলি দুইটি পরিবর্তন করিয়ে খেলার লাগাম ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এর কিছুই কাজে আসেনি শ্রীলঙ্কার। 

    বরং বিরতির সময় আফসোস সঙ্গী হলো বাংলাদেশের। ২২ মিনিটে মোহাম্মদ ইব্রাহিম আরেকটু নিখুঁত হতে পারলে হয়ত দ্বিতীয় গোলটিও তখন পেয়ে যেত লাল-সবুজরা। বাংলাদেশের সেই আক্ষেপ ঘুচেছে ৬৪ মিনিটে। আগের ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে হজম করা গোলটার বদলা নেওয়া হয়েছে তাতে বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার একটি লং থ্রো থেকে মাঝমাঠে শ্রীলঙ্কার ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নিলেন মতিন। এর পর ৫০ গজ দৌড়ে বক্সের ভেতর ঢুকে ওয়ান অন ওয়ানে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককেও কাটিয়ে ফাঁকা জালে বল ঢুকিয়ে দেন মতিন। দারুণ কম্পোজারে দ্বিতীয় গোলটি করে বাংলাদেশের জয় তখনই একরকম নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন বসুন্ধরা কিংস ফরোয়ার্ড। 

    শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আক্রমণে আরেকটু ধারালো হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে বাংলাদেশের গোলেও শট করা হয়নি আর তাদের। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় অবশ্য একটি গোল পেতে পারত শ্রীলঙ্কা। তবে তখন অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করেন শ্রীলঙ্কার ফরোয়ার্ড।

    ৮৩ মিনিটে শ্রীলঙ্কার সবরকম সুযোগ শেষ করে দিয়ে ইব্রাহিম প্রথমার্ধের আক্ষেপ ভুলেছেন। বদলি রাকিব হোসেনের নিচু ক্রস থেকে সহজ ফিনিশে ব্যবধান বাড়ান তিনি। তবে শেষটা মনমতো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথমার্ধে একবার হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তপু। ৯০ মিনিটে নিজের বক্সের কোনায় রাজিক আহমেদকে আটাকাতে গিয়ে ফাউল করে বসেন তিনি। রেফারিও দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে দেন তপুকে। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে শুরু করা তপুকে দলের জয়টা দেখতে হয়েছে তাই ড্রেসিংরুম থেকে। ​ 

    বাংলাদেশ একাদশ 
    আশরাফুল ইসলাম রানা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রিয়াদুল হাসান রাফি, তপু বর্মন, রহমত মিয়া, সোহেল রানা, মাহবুবুর রহমান সুফিল, মানিক হোসেন মোল্লা, সাদ উদ্দিন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মতিন মিয়া

    শ্রীলঙ্কা
    হেরাথ অরুনাশ্রি, জুদে সুপান, বান্দারা রাথনায়েকে, হেরাথ অমিথ কুমারা, এডসন ফিগুরাডো, দিলিপ সুরজ, মোহাম্মদ ফজল, কাজাকোপান, গানারুবান, নিকোলাস হার্শা, রাজিক আহমেদ