দ্বিতীয়ার্ধের লড়াইও ফাইনালে নিতে পারল না বাংলাদেশকে
ফুলটাইম
বুরুন্ডি ৩-০ বাংলাদেশ
কিছু ক্ষতে আর প্রলেপ দেওয়া যায় না। বাংলাদেশ যেমন পারল না বুরুন্ডির বিপক্ষে। ক্ষতি যা করার বুরুন্ডি সেটা করে দিল প্রথমার্ধের শেষ ৫ মিনিটে। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশকে ফিরতে হত নাটকীয়ভাবে। সেরকমও সুযোগও পেল বাংলাদেশ। কিন্তু সুযোগ পেলেই তো হবে না, সেগুলো কাজে লাগানো হলো না জামাল-সাদদের। ভাগ্যও হয়ত মুখ ফিরিয়ে নিল। তাই আরও একবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় বাংলাদেশের।
৪৩ মিনিট আর প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে এনশিমিরিমানা জসপিন করলেন দুই গোল। পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতিয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার সবরকম সুযোগ পেল বাংলাদেশ। কখনও সাদ ভুল করলেন, রাকিব মারলেন বাইরে দিয়ে, একবার বারপোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়াল- আক্রমণে মরিয়া বাংলাদেশ এর পর আরেকবার হতাশ হলো ৭৮ মিনিটে। সেই জসপিন করে বসলেন হ্যাটট্রিক। সেটা বাংলাদেশের বুকে বাধল শেলের মতো।
প্রথমার্ধের শাপমোচন কীভাবে করতে পারত বাংলাদেশ? সাদ উদ্দিন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের সুযোগ পেলেন। সামনে ছিলেন শুধু বুরুন্ডি গোলরক্ষক। সাদ আশে পাশে মারতে পারতেন, মারলেন এনদিজিয়ে ফলস বরাবর। সবশক্তি দিয়ে আক্রমণে উঠলে কী হতে পারে সেটা বাংলাদেশকে বুরুন্ডি বুঝিয়ে দিয়েছিল। ৫৪ মিনিটে তামবোয়ে আমিসিকে তখন ঠেকিয়ে দিয়ে আশরাফুল ইসলাম রানা দলকে টিকিয়ে রাখলেন ম্যাচে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশ।
এর পরের গল্পের অনেকখানি জুড়ে বাংলাদেশের গোলের সামনে থেকে খালি ফেরার। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে একটি গোল হলেই প্রাণশক্তি জুটত বাংলাদেশের। উজ্জীবনী শক্তি জোগাতে পারতেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার দশেক দর্শকও। জামাল ভুঁইয়া ইনজুরি থেকে ফিরে নেতৃত্ব দিলেন, কিন্তু দলকে ফেরাতে পারলেন না। তার ক্রস থেকে মাহবুবুর রহমান সুফিল, রিয়াদুল হাসান রাফিরা গোল পেতে পেতেও পেলেন না। সাদ হতাশা বাড়ালেন আরেকবার, জামালের ক্রস থেকেই হেড মারলেন বাইরে।
জামাল এর পর নিজেই গোলে শট নিয়েছিলেন ফ্রি-কিক থেকে। সেটাও বুরুন্ডি গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলেন। ততোক্ষণে বাংলাদেশ বুঝে গেছে দিনটা তাদের না। নইলে বদলি নামা রাকিব হোসেন ৭৭ মিনিটে গোলের ৮ গজ দূর থেকেও ওভাবে আকাশে উঠিয়ে শট মারবেন কেন?
রাকিবের গোল মিসের সুযোগে হতাশ হওয়ার সুযোগও পায়নি বাংলাদেশ। পরের মিনিটেই দ্রুত আক্রমণে বুরুন্ডি। জসপিন সময় পেলেন অনেক। বাইলাইন থেকে বল নিয়ে কিছুটা ভেতরে ঢুকে মারলেন রানার কাছের পোস্টে। দর্শকসারিতে বসা হুলিও সিজারের সামনে আর মান থাকল না রানারও। জসপিনের হ্যাটট্রিক পূরণ হতে পারতেন আরও আগেই। যখন পারলেন, তখন আবার উদ্দ্যাম নৃত্যে মাতল বুরুন্ডি। ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশকে হতাশায় পোড়াবে আসলে ওই প্রথমার্ধই। ম্যাচের শুরুটাই বুঝিয়ে দিয়েছিল দিনটা বাংলাদেশের নয়। আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক মতিন মিয়া ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়লেন চোখ ভিজিয়ে। ঘড়িতে তখন মাত্র ৪ মিনিট। তার জায়গায় নামা সুফিল অবশ্য পথ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তার পাস থেকে মোহাম্মদ ইব্রাহিম কাছের পোস্টে গোলবঞ্চিত হলেন গোলরক্ষকের কাছে।
৭ মিনিটে অমন সুযোগ পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। বুরুন্ডি তেমন একটা বল পাচ্ছিল না। দুই ফুলব্যাককে ওপরে উঠিয়ে দিয়ে রক্ষণেও মনযোগী হয়নি তারা। বাংলাদেশ তাই পায়ে বল পাচ্ছিল সহজেই। রায়হান নেমেছিলেন নিষেধাজ্ঞায় থাকা তপু বর্মনের জায়গায়। আরেকবার লম্বা থ্রোতে গোল করার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। আরেকবার তাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেমি ডে।
রায়হানের থ্রোতে ফল পায়নি বাংলাদেশ, তপুর অভাবটাও পূরণ করতে পারেননি তিনি। প্রথমার্ধের দুই গোলই বাংলাদেশ খেয়েছে ডান পাশ থেকে আসা ক্রসে। এনগাবনজিজা ব্লানচার্ড ৪৩ মিনিটে নিচু ক্রস করেছিলেন। গোলের ৮ গজ দূর থেকেও ফাঁকায় সেই বল পেয়েছিলেন জসলিন। সামনে থাকা বাংলাদেশের তিন ডিফেন্ডার তখন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন। জসপিনের ডান পায়ের টোকা জালে জড়ানোর পর হতাশায় মুখ লুকিয়েছেন।
দ্বিতীয় গোলটি হলো রক্ষণের আরও বড় ভুলে। রায়হান, রাফিরা কিছু বুঝেই উঠতে পারেননি। বক্সের ভেতর জসপিনকে মার্কও করেননি। সেই ব্লানচার্ড ক্রস করেছেন ডান পাশ থেকে। এবার উড়িয়ে মেরেছেন তিনি। সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথা থেকে হেডে দূরের পোস্টে বল জড়িয়েছেন জসপিন।
প্রথমার্ধের পরই বাংলাদেশ আসলে ছিটকে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ার্ধটা হাহাকার বাড়িয়েছে আরও। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে তাই বুরুন্ডি খেলছে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। ২৫ তারিখ সেই ফাইনালে শুধুই দর্শক জামাল ভুঁইয়ারা।
বাংলাদেশ একাদশ
আশরাফুল ইসলাম রানা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রিয়াদুল হাসান রাফি, রায়হান হাসান, রহমত মিয়া, মানিক হোসেন মোল্লা, জামাল ভুঁইয়া, সোহেল রানা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সাদ উদ্দিন, মতিন মিয়া